ইসলামের ইতিহাসে প্রথম মসজিদ কুবা’য় নামাজ আদায়

মহসীন শেখ:

প্রতিনিয়তই দেখছি অর্থ বিত্তশালী ব্যক্তিরা পৃথিবীর কতই না দেশে ঘুরছেন। ব্যায় করছেন অঢেল অর্থ। কিন্তু আল্লাহ্পাক রাব্বুল আলামীনের হুকুম অথবা দোয়া কবুল ছাড়া কখনই কোন অর্থ বিত্তশালীদের সৌদি আরবে পবিত্র মক্কা ও মদিনা দেখার সুযোগ পায়না না বলে প্রবাদ রয়েছে। আল্ল্হ্রা রহমতে জীবনের প্রথম ওমরাহ্ হজ্জ পালনের সুযোগে দেখলাম পবিত্র মক্কা ও মদিনা। এ সফরটি আমার জীবনের একটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। ওমরাহ হজ্জ পালনের সুযোগে মক্কা মদিনায় ইসলামের বহু নিদর্শন স্বচক্ষে দেখার সুযোগ হয়েছে আমার। সে সুবাধে গত ১১ মে স্বস্ত্রীক আমাকে পবিত্র মদিনায় নিয়ে যান মক্কায় প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী নিকটাতœীয় প্রিয় ছোট ভাই রেজাউল করিম কাজল এবং রামু উপজেলার বাসিন্দা গিয়াস উদ্দিন। মসজিদে নববীতে জিয়ারত করেছি মুহাম্মদ(স.) এর রওজা শরীফ এবং মহানবীর রওজার দু’পাশে রয়েছে হযরত আবুবকর (রাঃ) ও হযরত ওসমান (রাঃ)-এর কবর। দেখেছি বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি মসজিদ, ইসলামের মহান সেবক ও সৈনিক হযতর আমীর হামজা(রা.) এর কবর জিয়ারত ও উহুদ এবং রোমা পাহাড় ছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি ইসলামের নিদর্শন দেখতে সক্ষম হয়েছি। তাছাড়াও নামাজ আদায় করেছি ঐতিহাসিক কিবলাতাইন, সাবা ও কোবা মসজিদে। সুবহানাল্লাহ। এ মসজিদ জুড়ে রয়েছে বিশ্ব নবী মুহাম্মাদ(স.) এর বহু স্মৃতি।

আজ এ পর্বে প্রিয় পাঠকের সুবিধার্থে মদিনায় ইসলামের ইতিহাসের প্রথম ঐতিহাসিক মসজিদ মসজিদে কুবা’র গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।

মক্কা হলো তত্ত্ব, মদিনা হলো প্রয়োগ। কোন আদর্শের তত্ত্ব নিয়ে বসে থাকলে কাজ হয় না, অবশ্যই তা বাস্তবে প্রয়োগ করে দেখাতে হয়। মক্কা থেকে ঘুরে আসলে শুধু তত্ত্ব দেখে আসা যায়। মদিনা না গেলে তত্ত্বের প্রয়োগ বাস্তবায়ন বা ফল দেখা যায় না। মদিনা সফর থেকে হাজি রসূল (স.) এর মক্কার পরিবর্তে মদিনায় থাকার তাৎপর্য উপলব্ধি করে। মক্কার লোকেরা তাঁকে চাননি, তাই মুহাম্মাদ(স.) সেখানে থাকতে জোর করেননি। মদিনা তাঁকে চেয়েছে, মুহাম্মাদ (স.) সেখানে থাকতে সম্মত হয়েছেন। মদিনা মুহাম্মাদ স. কে সমর্থন দিয়ে আল্লাহর বড়ত্ব ও তাঁর দ্বীন প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ দিয়েছে।

মদিনা মুহাম্মাদ স. এর অস্তিত্ব তাঁর কার্যক্রমের সত্যতা এবং তাঁর সাফল্যের পরিপূর্ণ প্রমাণ। মসজিদে নববি মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ(স.) এর মসজিদ। মসজিদে নববি হলোরেসালাতের সকল দায় দায়িত্ব বাস্তবায়নের কেন্দ্রবিন্দু। রসূলুল্লাহ(স.) এ মসজিদে নববি থেকে কীভাবে ব্যক্তিগত এবং সামষ্টিক জীবনের যাবতীয় বিষয়াদি সমন্বয় করতেন তা এক বিরাট বিস্ময়।

মসজিদে কুবা:

ইসলামের ইতিহাসে প্রথম মসজিদ কুবা মসজিদ। পবিত্র মসজিদে নববীর পর সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ও দক্ষিণ মদীনার দ্বিতীয় বৃহত্তম মসজিদ হচ্ছে এই কুবা মসজিদ। হিজরী প্রথম বর্ষে এই মসজিদটি নির্মিত হয়।

হজরত মুহাম্মদ (সা.) মদিনায় আগমন করে প্রথম শহরের প্রবেশদ্বারে কুবা নামক স্থানে নামাজ পড়েন। পরে এখানে মসজিদ গড়ে ওঠে। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, ঘর থেকে অজু করে মসজিদে কুবায় গিয়ে নামাজ পড়লে একটি ওমরাহর সমান সওয়াব পাওয়া যায়।

পবিত্র হাদীসে কুবা মসজিদের মর্যাদা এবং এর বৈশিষ্ট্য বর্ণিত হয়েছে। বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি এখানে অজু করে এক ওয়াক্ত নামাজ পড়বে সে এক উমরাহ হজের সমান সওয়াব লাভ করবে। জানা যায়, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) প্রতি শনিবার এখানে নামাজ পড়তে আসতেন। তিনি উটে চড়ে কিংবা পায়ে হেঁটে আসতেন এবং ২ রাকাত নামাজ পড়তেন।

তৃতীয় খলিফা হযরত উসমান ইবনে আফফান (রা:) প্রথম এই মসজিদটির সংস্কার করেন। খলিফা ওমর বিন আবদুল আজিজ মসজিদটির প্রথম মিনার তৈরি করেন।

পরবর্তীতে ৪৩৫ হিজরীতে আবু ইয়ালি আল-হোসাায়নি কুবা মসজিদ সংস্কার করেন। তিনি মসজিদের মিহরাব তৈরি করেন। ৫৫৫ হিজরীতে কামাল আল-দীন আল ইসফাহানি মসজিদে আরও বেশ কিছু সংযোজন করেন। এর পরবর্তী সময়ে ৬৭১, ৭৩৩, ৮৪০ ও ৮৮১ হিজরীতে উসমানী সাম্রাজ্যকালে মসজিদটি সংস্কার করা হয়।

আধুনিককালে সৌদী শাসনামলে হজ্ব মন্ত্রণালয় মসজিদটির দায়িত্ব গ্রহণ করে- যা মূল ডিজাইনে অধিকতর সংস্কার এবং সংযোজন করে। বর্তমান কুবা মসজিদ ইসলামী ঐতিহ্যের পাশাপাশি আধুনিকতম সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত একটি অনন্য স্থাপত্যও বটে।

মসজিদে কোবার বৈশিষ্ট্য : হজরত নবী করিম (সাঃ) নিয়মিত কোবার মসজিদ জিয়ারত করতেন এবং সাহাবায়ে কেরামকেও এ ব্যাপারে উতসাহিত করতেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) বর্ণনা করেন, হজরত নবী করিম (সাঃ) নিয়মিতভাবে প্রতি শনিবার কোবার মসজিদে জিয়ারত করতেন। কখনও কোনো সরওয়ারীতে আরোহণ করে আবার

কখনও বা হেঁটে যেতেন (বুখারি শরিফ ১ম খন্ড, মুসলিম শরীফ ১ম খন্ড)।অন্য এক হাদিসে রয়েছে, কোবার মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করা একটি ওমরাহর সমতুল্য পুণ্যের কাজ (তিরমিযি শরিফ, ইবনে আবিশাইবা ২য় খন্ড)। মুহাম্মদ ইবনুল মুনকাদের বর্ণনা করেন যে, হজরত নবী করিম(সা.) প্রতি রমজানের ১৭ তারিখ কোবা মসজিদে তশরিফ আনতেন।

লেখক: নির্বাহী সম্পাদক, দৈনিক সকালের কক্সবাজার। মোবাইল:- ০১৬১৯০৭০৫১৩