আলমগীর মাহমুদ :
অলক,তিলক দু’ভাই। হিমাংশু উকিলের ছেলে এই তাদের পরিচিতি। অলক পেশায় অধ্যাপনা। তিলক পেশায় মানব হিতৈষী, উনার সহধর্মিণীও ।এই পেশার কেতাবী নাম ডাক্তার।
ডাক্তার হওয়ার তালেবে এলেম হিসেবে বাবা হিন্দুস্থানে পাঠিয়েছিলেন, বাবার যোগ্যতা অর্জনের পরীক্ষায় সার্টিফিকেটধারী বনার সাথে সাথে বাবাকে পারদর্শিতা দেখায় সহপাঠী ডাক্তারকে বউ করে ঘরে তুলে। এপার বাংলা ওপার বাংলায় রচিত হয় আত্নীয়তার বন্ধন,সামাজিকভাবে। কৃষ্টি কালচার মিলিয়ে।
বিয়ের পর নব দম্পতি পাড়ি জমায় কানাডা। কানাডা থেকে বছরে বছরে বাড়ী আসে তারা। কক্সবাজার কোর্ট এলাকায় বসত ঠিকানা।
একবার কানাডা বিমানের আরোহী ডাক্তার তিলক,সাথে ডাক্তার বউ। বিমান ছিল কানাডা এয়ারওয়েজের। উনাদের পাশের সীটে বসা এক নুতন দম্পতি। বাংলাদেশী কানাডিয়ান।
মাঝ আকাশে বিমান চলছেই…হঠাৎ স্বামী অসুস্থ হয়ে পড়ে,অসুস্থতার সাথে সাথেই ষ্ট্রোক করে মারা যায়।
মাঝ আকাশে বিমানেই মৃত্যু নিশ্চিত করে। এয়ারওয়েজ ক্রূ, এয়ার হোষ্টেজ,যাদের যাদের জানতে হয় সবাই জেনে যায়। তুরস্কের আকাশসীমায় বিমান। জরুরী অবতরণের অনুমতি চাওয়া হয়। অনুমতি মেলে।
তুরস্কের বিমান বন্দরে জরুরী অবতরণ করে কানাডীয় কতৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে বিষয়টা জানিয়ে, নির্দেশনা জানতে চাওয়া হয়,’কানাডিয়ান কর্তৃপক্ষ লাশ গ্রহনে অস্বীকৃতি জানায়।
স্ত্রী পড়ে মহাবিপদে,আরোহীরা নির্বাক,সবাইর মুখে মুখে একি হইল..! একি হইল…!
মহিলা করবে কি…! মহিলা করবে কি…!
আরোহীরা সহ ঐ মহিলা কানাডিয়ান কতৃপক্ষকে জানায় তারা কানাডার নাগরিক,একজন নাগরিকের মৃতদেহ গ্রহণে অস্বীকৃতি তারা জানাতে পারেন না,এটা নাগরিক,এবং মানবিক অধিকারের লংঘন।
কোনমতেই তাদের রাজি করানো গেল না,এরিমধ্যে দেড়ঘন্টারও কিছু বেশী সময় কেটে যায়।বিমান কতৃপক্ষ অবশেষে এই মহিলাকে সাফ জানিয়ে দেয়,আপনাকে বিশ মিনিট সময় দেয়া হল,হয় আপনার স্বামীর লাশসহ তুরস্ক নেমে পড়েন,নতুবা লাশসহ উনাকে রেখেই বিমান যাত্রা করবে। বিশ মিনিটের এক সেকেন্ট ও দেরী করবে না বিমান।
মহিলা নেমে পাশে একটা মসজিদে দেখল কিছু লোকজন মসজিদে বসা, ওদেরকে বুঝিয়ে দাফন,কাফন,মজুরী বাবদ যাহা তারা ধার্য চায়, তাহা তাদের হাতে দিয়ে স্বামীর লাশটা সোপার্দ করে, ‘শেষ বারের মত চেহারাটা দেখে যখন বিমানে আরোহণ করছিল তখন তার মুখে বিলাপ…..
তোমারে আমি নিতে পারলাম না..!,পারলাম না..! আমি কার সাথে যাব! কোথায় যাব! কার সাথে যাব! এই হৃদয়বিদারক দৃশ্যে তুরস্কের আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠে। বুকফাটা বিলাপে বিলাপে পেছনের দিকে তাকিয়ে আহাজারীতেই তাকে উঠতে হয় বিমানে।
বিমানে উঠেই বিলাপের সুরে আসে একধরনের করুন পরিবর্তন,..একি হইল…একি হইল! বলে বলে মোর্চা।
দূ সীটে আমি একজন! অ..আল্লাহ দু,সীটে কেন একজন! কোথায় তারে আমি রেখে আসলাম! কোথায় রেখে আসলাম! আহাজারীতে আহাজারীতে বিষাদের সিন্ধুতে বিমান ছুটছেই কানাডার পথে……
লেখক:উখিয়া কলেজের সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষক।
alamgir83cox@gmail.com
‘বাস্তবতা’
পড়া যাবে: [rt_reading_time] মিনিটে
