• রহিম আব্দুর রহিম

গত ৪ জুলাই থেকে ১১ জুলাই মোট ৮ দিন ভারতে ছিলাম। যাওয়া হয়েছিল তাজরং মহোৎসবে। আগ্রার ভাগোয়ানটোকির সুরসদন অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত উৎসবে ভারতের প্রায় ৪০ টি প্রদেশে ৪৮ টি সংগঠনের সাংস্কৃতিক কর্মীদের পদচারণা ঘটেছিলো। এতবড় উৎসবে অংশ গ্রহণের বিশেষ আমন্ত্রণ পেয়েছিল, পঞ্চগড় বিদ্রোহী শিশু কিশোর থিয়েটার। ১২ সদস্যের এই নাট্য দলের নাট্যকার ও নির্দেশক হিসাবে আমিও উৎসবে অংশ গ্রহণ করার সুযোগ পেয়েছি। উৎসবে যাওয়ার পূর্বে দুটো সংবাদ বহন করেছি। তার প্রথমটি রাঙ্গামাটির পাহাড় ধ্বসে মৃত্যুর মিছিল এবং ঈদে বাড়ি ফেরা গার্মেন্ট শ্রমিকদের ট্রাক উল্টে মৃত্যু বরণ। দেশে ফিরেছি দার্জিলিং পাহাড়িদের সাথে পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির ঝগড়া আন্দোলনের কাহিনী, বাংলাদেশের ফরহাদ মাজাহারের অপহরণ নাটক ও বাংলাদেশের বন্যা পরিস্থিতির সংবাদ নিয়ে। আমার ভারত যাওয়া ও আশার মধ্যে ভারত এবং বাংলাদেশে যে দুটি সংবাদ আমাকে ভীষণ ভাবে তাড়িত করছে। সেই দুটো সংবাদ নিয়েই আমার এই লেখা। তাড়িত সংবাদ দুটোর আবডালে, আগডালে কি আছে, তা নিয়ে বিস্তারিত কথা বলার আগে একটি গল্প পাঠকদের উদ্দেশ্যে উপস্থাপন করছি;

‘ আল্লাহ তায়ালার সবচেয়ে প্রিয় ফেরশতা আজাজিল, এই আজাজিল ফেরেশতা আল্লাহ তায়ালার এতই ভক্ত ছিল যে, তার ইবাদত বন্দেগী যেমন আল্লাহকে সন্তুষ্ট করেছে, তেমনি সে আচার-আচরণে, আল্লাহর আদেশ নির্দেশ পালনে সিদ্ধহস্ত ছিলো। আল্লাহর সখের সৃষ্টি মানব জাতি সৃষ্টি করার পর, সকল ফেরেশতাদের নির্দেশ দিলেন, হে ফেরেশতাগণ, তোমরা আমার সৃষ্টির শ্রেষ্ঠজীব মানব জাতিকে সেজদা করো। সকল ফেরেশতা আল্লাহর আদেশ মতে সকল মানবজাতিকে সেজদা করলো। শুধু মাত্র আজাজিল আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ অমান্য করলো। আল্লাহর আদেশ অমান্য করায় আজাজিল পৃথিবীতে শয়তান হিসাবে আবির্ভূত হলো। এই সন্তান আল্লাহর সখের সৃষ্টি মানব জাতিকে বিপদগামি করানোর দৃঢ়প্রত্যয় নিয়ে পৃথিবীর সকল মানবের অন্ত:করনে শয়তানি বিষ ছিটানো শুরু করলো। খুন-খারাবি, মারামারি, ধর্ষণ, চুরি-ডাকাতি থেকে শুরু করে পৃথিবীর সকল অপকর্মে মানবজাতিকে ধাবিত করার আন্দোলন অব্যাহত রাখলো। শয়তানের এধরনের অপকর্মের জন্য একদিন আল্লাহ তায়ালা শয়তানকে বললেন। হে শয়তান! পৃথিবীর সকল কুকর্মের জন্য তুমিই দায়ী। শয়তান এবার বললো না, আমি না, তোমার প্রিয় বান্দারাই এ ধরনের অপকর্ম করছে। আল্লাহ এবার চ্যালেঞ্জ করে বললেন, হে শয়তান! তুমি প্রমাণ করো যে, এমন কোন অপকর্ম আছে যাতে তোমার হাত নাই। শয়তান আল্লাহ তায়ালার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করলো। এবার শয়তান ফন্দি-ফিকির শুরু করলো, কিভাবে তা প্রমাণ করা যায়; শয়তানি বুদ্ধি মিলে গেলো, গ্রামের এক নি¤œ মধ্যে পরিবারের আয় রোজগারের এক মাত্র পথ, তার পালের গাভীর দুধ বিক্রি করা। এই গাভীর দুধ বিক্রি করে তিনি তার ছেলে মেয়ে বউঝি নিয়ে সংসার চালান। শয়তান এবার ওই কৃষকের ঘরের দরজার পাশে এক ফোঁটা মিষ্টি লাগিয়ে আসলো। এই মিষ্টি খাওয়ার জন্য দল বেঁধে পিপঁড়া আসা শুরু করলো, পিপঁড়া ধরার জন্য টিক টিকির ভীড় বাড়তে শুরু করলো, টিকটিকি ধরতে ইদুঁর এসে গেল। এবার ইঁদুর ধরতে গিয়ে যেই না বিড়াল লাফ দিয়েছে, কৃষকের মাটির পাত্র ভর্তি গাভীর দুধ মাটিতে পড়ে গেল। স্ত্রীর দায়িত্বে থাকা দুধ মাটিতে পড়ে যাওয়ায়, কৃষক তার ঘরে রাখা লাঠি দিয়ে, স্ত্রীর মাথায় এমন ভাবে আঘাত করেছে যে, আঘাত করা মাত্র স্ত্রী মারা গেছে। এবার শয়তান খোদার কাছে গিয়ে বাহাদুরের ন্যায় বলছে, হে খোদা! আজকের খুনটা কে করেছে? শয়তানের এ ধরনের বক্তব্যে আল্লাহ তায়ালা জবাব দিলেন ঘরের দরজার কাছে যে মিষ্টি লাগিয়েছে সেই এই খুন করেছে’। গল্প শেষ এবার আসল ঘটনায় যাচ্ছি, ঘটনার সাথে গল্পটা পাঠকরা মিলিয়ে নিতে পারলেই আমি লেখক হিসাবে ধন্য হবো।

ভারতের পর্যটন এরিয়া দার্জিলিং পাহাড়ে বসবাসকারীদের সাথে পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি তুমূল ঝগড়া চলছে। পাহাড়িরা ঐক্য বদ্ধ হয়েছে, তারা আলাদা প্রদেশ চাচ্ছে। ঝগড়ার সূত্রপাত কয়েকমাস আগে পশ্চিম বঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি কোন এক সভায় বলে ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মাতৃভাষা হবে বাংলা। আর এই বক্তব্যের সূত্র ধরে পাহাড়িদের সাথে মমতা ব্যানার্জি তৃণমূল সংগঠনের ¯œায়ুযুদ্ধ, ভাংচুর, সর্বোপরি প্রদেশের দাবী। দিন দিন আন্দোলনের বিভিন্ন মোড় পাল্টাচ্ছে। পাহাড়িরা ইয়ং যুবুকদের নিয়ে যুদ্ধাং দেহী মনোভাবে গড়ে তুলছে একটি বাহিনী, যে বাহিনী সরকারের পুলিশ, আর্মিদের সাথে লড়াই করবে। অপর দিকে সমতল ভূমির সাধারণ জনমানুষরা পাহাড়িদের অপ্রত্যাশিত দাবীর বিরুদ্ধে ¯œায়ু যুদ্ধ অব্যাহত চালিয়ে যাচ্ছে। একমাত্র পর্যটন ব্যবসায় যে পাহাড়িরা জীবন জীবিকা অর্জন করছে, সেই পাহাড়ে যাতে পর্যটকরা না যান সে কর্মকান্ড রীতিমত চলছে। অনেকেই সমতল ভূমি থেকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি যাতে পাহাড়ে না যেতে পারে সে ব্যাপারেও কাছ করছে। মমতা ব্যানার্জির পশ্চিমবঙ্গের ভাষা হবে বাংলা, এ ধরনের বক্তব্য প্রদান করে কোন অপরাধ করেনি। মমতা বিরোধী থেকে শুরু করে সকল স্তরের জনমানুষ মনে করে মমতা ব্যানার্জির বক্তব্য যথাযথ। কারণ তিনি তার বক্তব্যে বলেনি পাহাড়িরা তাদের মাতৃভাষা ব্যবহার করতে পারবে না। অফিশিয়াল ভাষা বাংলা হোক এটাই তিনি চেয়েছেন। আজ যারা পাহাড়ী তারা কখনই ভারত বর্ষের আদিবসতি নন। সময়ের ব্যবধানে তারা পাহাড়ের বসতি হয়েছেন। নেপালী, গোর্কা অধ্যুষিত কালিংম্পক পাহাড়ীরা তাদের মাতৃ ভাষায় কথা বলতে পারবে না। একথা মমতা ব্যানার্জি কখনো বলেনি। কেন তাহলে অযৌক্তিক একটি বিষয় নিয়ে পাহাড়ীরা আন্দোলন করছে, কেন পাহাড়ীরা সরকারের সৈনিকদের সাথে যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার জন্য যুবকদের সংঘটিত করছে। এই যোদ্ধারা কোথায় অস্ত্র পাবে, কারা তাদের ডিফেন্স বা কাভারিং হিসাবে সহযোগিতা করবে? এধরনের প্রশ্ন মাথায় রেখে ঘটনার বিশ্লেষণ করলে স্পষ্ট বলা যায়, দার্জিলিং পাহাড়ীদের সাথে সমতলের মানুষের যুদ্ধ ক্ষেত্র তৈরি করতে দুইটি দিক কাছ করছে। তার একটি চিনাপন্থী শয়তানি বিষ, অন্যটি গ্যাংটক ভিত্তিক চীনা বাজার চাঙ্গা করার ¯œায়ুযুদ্ধে শয়তানি কৌশল। আমার জানামতে পাহাড়ি জনমানুষরা অত্যন্ত সহজ-সরল প্রকৃতির। তারা ব্যবসা বাণিজ্যকে লক্ষ্মী হিসাবেই জানে। বর্তমান যে পরিস্থিতি চলছে তাতে তারা খুশি নন। তবে শয়তানি বিষ ছড়িয়ে পড়ায় এরা এখন বেকায়দায় রয়েছেন। এভাবে আর কয়েকমাস যুদ্ধ চললে পাহাড়িরা মাটির সাথে মিশে যাবে। একই সাথে শান্ত, প্রকৃতি নির্ভর পর্যটন এরিয়াটি অপরাধীদের অভয়ারণ্যে পরিণিত হবে। ভারতের কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারের উচিৎ কোন ক্রমেই যেন শয়তানের বাদশা জয়ী হতে না পারে, সেদিকে নজর দেওয়া এবং অতি দ্রুত পাহাড়িদের সাথে সমতলের দ্বিধা-দ্বন্দ মিটিয়ে ফেলা। এক্ষেত্রে পাহাড়ীদের বোঝা উচিৎ প্রদেশের দাবীতে যে আন্দোলন করা হচ্ছে, তা আদৌও সম্ভব না; অযৌক্তিক এই দাবী আদায়ের নামে পাহাড়ীরা যা কিছু করছে, তা এক সময় ‘গোদের উপর বিষ ফোঁড়া’ হয়েই দাঁড়াবে।

এবার তথা কথিত চিন্তাবিধ ফরহাদ মাজাহারের অপহরণ নাটক এবং বাস্তবতা নিয়ে পর্যলোচনা। ফরহাদ মাজাহার, তাকে চিনি না, তার কোন কবিতা পড়িনি। তবে তাকে জেনেছি, যিনি চিন্তাবিধ নামে পরিচিত। এ সময়ের খলনায়ক, নারী লোভী, বিকৃত চেতনার মানুষ। সম্প্রতি তিনি অপহরণ নাটক সাঁজিয়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার ষড়যন্ত্র করেছিলো। যা পুলিশের উচ্চ পর্যায়ে কর্মকর্তাদের বক্তব্যে স্পষ্ট হয়েছে। তার মেয়ের বয়সী এক দরিদ্র ভিন্ন ধর্মী তরুণীর সহজ – সরলতাকে পুঁজি করে এই মেয়ের জীবন যৌবন লুণ্ঠন করেছেন, চিন্তাবিধ ফরহাদ মাজাহার। যিনি ২০০৫ সালের ১৭ আগষ্ট বিএনপির ক্ষমতা আমলে সারাদেশে বোমা বাজির ঘটনাকে একটি আন্দোলন বলে ভাষণ দিয়েছিলেন। ওই সময়কার বিএনপি সরকার ‘বাংলা ভাই’ নামক এক তথা কথিত সন্ত্রাসীর বিচার করেই এই মিষ্টি লাগানো শয়তানদের রক্ষা করেছে। পৃথিবীর সকল দেশে মানুষরাই শান্তি চায়, সুখে থাকতে চায়, কিন্তু তথা কথিত চিন্তাবিধ বলে পরিচিত বিকৃত মনের এই মানুষরা যখন শয়তানের বাদশা সাঁজে, তখনই জাতির ঘাড়ে অভিশাপের প্রবল ঝড় নেমে আসে। ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র দেশ তথা পৃথিবীর শান্তি প্রতিষ্ঠায় এই শয়তানের বাদশাদের বোতলে ভরা ছাড়া দেশের শান্তি নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।