ডেস্ক নিউজ:
ডাকনাম সৌরভ, টেস্ট ক্রিকেটে সৌরভ ছড়িয়েই আবির্ভাব। ২২ টেস্টে ৪টি সেঞ্চুরি আর ১১টি ফিফটি। ৪৬.৮৮ গড়ে ১৬৮৮ রান। মুমিনুল হক পরিসংখ্যানের পাতায় শুরুর সেই সৌরভ ধরে রেখেছেন, সন্দেহ নেই। কিন্তু ইদানীংকার ব্যাটিংয়ে তা কিছুটা হলেও অনুপস্থিত। সঙ্গে কোচের সুদৃষ্টিতে না থাকার দুর্ভাগ্য যোগ হয়ে মুমিনুলকে পথহারা পথিক মনে হওয়াটাই স্বাভাবিক।
শুরুতে টেস্ট, ওয়ানডে দুটিতেই পদচারণ ছিল। একপর্যায়ে মুমিনুল হয়ে গেলেন শুধু টেস্ট ক্রিকেটার। সে জন্য ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারির পর আর ওয়ানডে খেলা হয়নি। এখন তো দুশ্চিন্তায় থাকতে হয় টেস্ট দলে সুযোগ পাওয়া নিয়েও। টেস্ট দল থেকে বাদ পড়ার অভিজ্ঞতাও হয়েছে। হায়দরাবাদে ভারতের বিপক্ষে দুই টেস্টে করেছিলেন ১২ ও ২৭। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গলে ৭ ও ৫। এরপর কলম্বোয় বাংলাদেশ দলের শততম টেস্টের দলে তাঁকে রাখাই হলো না। সে নিয়ে অনেক প্রশ্ন। দেশের অন্যতম সেরা টেস্ট ব্যাটসম্যানকে কেন মাত্র দুটি টেস্টে খারাপ করাতেই বাদ দেওয়া হলো! ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই তাঁর ব্যাট যে রকম নির্ভরতা দেখিয়েছে, তাতে বাদ পড়ার আগে আরও সুযোগ কি প্রাপ্য ছিল না তাঁর!
২০১৩ সালের অক্টোবরে নিউজিল্যান্ড সিরিজ থেকে শুরু করে ২০১৫-এর মেতে পাকিস্তান সিরিজ পর্যন্ত টানা ১১ টেস্টে ফিফটি করে ভেঙে দেওয়ার সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন এবি ডি ভিলিয়ার্সের টানা ১২ টেস্টে ফিফটির রেকর্ড। যার শুরুটা ছিল ১৮১ রানের ইনিংস দিয়ে। টেস্টে ওটাই মুমিনুলের প্রথম সেঞ্চুরি। তবে এটাও ঠিক, মুমিনুল এখন পর্যন্ত যে কটা সেঞ্চুরি করেছেন, করতে পারতেন তার চেয়ে আরও বেশি। নামের পাশে থাকা ১১টি ফিফটিই দিচ্ছে সেই সাক্ষ্য।
মুমিনুল তবু আশাহত নন। হতাশ নন কলম্বো টেস্টে বাদ পড়াতেও। কাল মিরপুরে উল্টো জানালেন, এসব কথা নাকি তিনি মাথায়ই রাখতে চান না, ‘চেষ্টা করি বিষয়টা মাথায় না রাখতে। ভালো হয় আপনারাও (সাংবাদিকেরা) যদি বিষয়গুলো মনে করিয়ে না দেন।’
আগস্টে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুই টেস্টের সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ দল। মনেপ্রাণে মুমিনুলের লক্ষ্য, দলে সুযোগ পেয়ে এই সিরিজে ভালো খেলা। অনুশীলনে সেটারই চর্চা হচ্ছে, ‘সামনে টেস্ট, টেস্টের মানসিকতা নিয়েই ব্যাটিং অনুশীলন করছি। কীভাবে বেশি সময় ক্রিজে থাকা যায়, সেশন ধরে ধরে কীভাবে ক্রিজে থাকা যায়, এই বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করছি।’
অস্ট্রেলিয়া সিরিজ নিয়ে বড় আশা মুমিনুলের। তাঁর ভাষায়, ‘লক্ষ্য অনেক রান করা।’ পরে আরেকটু ভেঙে বলেছেন, ‘টেস্টে ৫০-৬০ করলেই হয় না। এক শ কিংবা তার বেশি করতে পারলে হয়তো দলের জন্য কিছু ভূমিকা রাখা যায়। আমি সেই মানসিকতা নিয়েই অনুশীলন করে যাচ্ছি।’
তবে নিজেকে নিয়ে মুমিনুলের যতটুকু আশা, তার চেয়ে বেশি আশাবাদী তিনি দল নিয়ে। তাঁর আশার ক্যানভাসে সিরিজ জয়ও অসম্ভব কিছু নয়, ‘গত কয়েক বছরে আমরা যেভাবে টেস্ট খেলছি, তাতে আমার বিশ্বাস আমরা টেস্ট ম্যাচ জিততে পারি। সিরিজ ১-১ হলেও খারাপ হবে না। তবে আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আমাদের দুটি ম্যাচই জেতার সামর্থ্য আছে। আগের চেয়ে আমাদের টেস্ট দলটা এখন অনেক ভালো।’
অস্ট্রেলিয়ানদের সব কন্ডিশনে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা তাঁর ভালোই জানা। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে কখনো কোনো ম্যাচ না খেলেও তাই মুমিনুলের ধারণা, এই দলটার বিপক্ষে পৃথিবীর যেকোনো জায়গায় খেলাই চ্যালেঞ্জিং, ‘আমার মনে হয়, অস্ট্রেলিয়া সিরিজ ইংল্যান্ডের চেয়েও খানিকটা কঠিন হবে। ওরা জানে কীভাবে কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয়।’
অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে এই জায়গায় কি মুমিনুলের একটু মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে! এই কয় বছরে তিনিও ভালোই বুঝেছেন, কোন পরিস্থিতিতে কী রকমভাবে টিকে থাকতে হয়। তাঁর প্রতি অবহেলা ভুলে থাকার চেষ্টা তো সেটারই উদাহরণ!
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।