মাহবুব মানিক, হালে (জার্মানি) থেকে:
শুরুতেই জার্মানিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গ্রেডিং সিস্টেমের একটু ধারণা দিচ্ছি। জার্মান বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজাল্ট সিস্টেমে সিজিপিএ ১ হচ্ছে সব থেকে ভালো গ্রেড এবং সিজিপিএ ৪ হচ্ছে সব থেকে খারাপ গ্রেড। সিজিপিএ ৫-কে সাধারণত ফেল বলে গণ্য করা হয়। সাধারণত প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য সাধারণ রিকোয়ারমেন্টস থাকে সর্বোচ্চ সিজিপিএ ২.৫। অর্থাৎ কোনো শিক্ষার্থীর সিজিপিএ ২.৫-এর কম হলেই প্রাথমিকভাবে ভর্তির জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হন৷
এখন আপনি কীভাবে বুঝবেন জার্মান স্কেলে আপনার গ্রেড কত? এর জন্য নিচের সূত্র ব্যবহার করে নিজের রেজাল্ট জার্মান স্কেলে বের করে নিতে পারেন। পদ্ধতিটির নাম মোডিফাইড বাভারিয়ান ফর্মুলা।
Modified Bavarian formula= (Nmax-Nd)/(Nmax-Nmin) *3 + 1. এখানে; Nmax: সর্বোচ্চ নম্বর, Nmin: পাস নম্বর ও Nd: প্রাপ্ত গড় নম্বর।
ধরা যাক আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজাল্ট সিস্টেমে সর্বোচ্চ গ্রেড ৪.০৷ পাসের জন্য ন্যূনতম গ্রেড দরকার ছিল ২.০৷ এদিকে ব্যাচেলরে আপনার প্রাপ্ত সিজিপিএ ৩.৫১৷ তাহলে আপনার জার্মান স্কেলে গ্রেড দাঁড়াবে— (৪-৩.৫১)/(৪-২) *৩ + ১ = ১.৭৩ (১.৭)।
এখানে দেখা যাচ্ছে সিজিপিএ ১.৭ যা কিনা ২.৫-এর নিচে। অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে আপনি ভর্তির জন্য প্রাথমিকভাবে যোগ্য বলে বিবেচিত।
এখন কথা হচ্ছে এত দেশ রেখে কেন জার্মানিতে পড়তে যাবেন? জার্মানিকে বলা হয় ল্যান্ড অব আইডিয়াস৷ শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে পৃথিবীতে যত জ্ঞান বিজ্ঞানের চর্চা হয়েছে সেসবের অন্যতম তীর্থস্থান হচ্ছে জার্মানি। বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় নামীদামি বিজ্ঞানী থেকে শুরু করে পৃথিবী বিখ্যাত মনীষীদের অনেকেরই জন্মভূমি ও কর্মস্থল জার্মানি। এ ছাড়া বর্তমান বিশ্বে যত রকমের টেকনোলজি আছে তার অনেকগুলোর গবেষণা ও উন্নয়ন হচ্ছে জার্মানিতে। এ ছাড়া উন্নয়নশীল দেশগুলোর শিক্ষার্থীদের অন্যতম আকর্ষণ জার্মানি। এর বিশেষ কারণ হচ্ছে জার্মানিতে পড়াশোনার জন্য কোনো খরচ নেই বললেই চলে। ধরতে গেলে সম্পূর্ণ বিনা খরচে এখানকার বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাদান করা হয়। এমনকি পরীক্ষার ফিসের জন্যও শিক্ষার্থীদের কোনো অর্থ দিতে হয় না। শিক্ষার্থীকে শুধুই তার বাসস্থানের ও দৈনন্দিন খরচ জোগাতে হয়। যা কিনা স্টুডেন্ট জব করেই পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব।
উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে জার্মানিকে ধরা হয় সবচেয়ে কম খরচে উচ্চশিক্ষার জন্য অন্যতম পছন্দের দেশ। আমাদের মতো দেশ থেকে যেসব শিক্ষার্থী জার্মানিতে পড়তে যান তাদের জন্য উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে যে ধাপগুলো থাকে, তার মধ্যে মাস্টার্স থেকেই শুরু করাই এ ক্ষেত্রে আদর্শ বলে অন্তত আমি মনে করি। জার্মানিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মাস্টার্স সম্পন্ন করতে লাগে চার সেমিস্টার (দুই বছর)। যার মধ্যে তিন সেমিস্টারে বিভিন্ন বিষয়ের থিওরি ও ব্যবহারিক পাঠ্যদান করা হয়। বাকি একটি সেমিস্টারে থাকে থিসিস। এ ক্ষেত্রে পছন্দের নির্দিষ্ট বিষয়ের প্রফেসর নির্বাচন করে তাঁর অধীনে ছয় মাসের থিসিস করে যেকোনো একটি বিষয়ে বিশেষ জ্ঞান লাভ করা হয়। ভবিষ্যতে চাকরি বা ডক্টরেট ডিগ্রির জন্য ওই বিষয়টিই বেছে নিতে হয়।
এখানে উল্লেখ্য, থিসিস চলাকালে অনেক প্রফেসর তার শিক্ষার্থীকে পারিশ্রমিকও দিয়ে থাকেন। যার পরিমাণ শহর ও ফান্ড সিস্টেম ভেদে দুই শ থেকে নয় শ ইউরো পর্যন্ত হতে পারে। মাস্টার্স শেষ করে আপনি ফুলটাইম জব করতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে জার্মান ভাষার দক্ষতা মোটামুটি জব ভেদে ভালো হতে হবে। এ ছাড়া ইংরেজি মাধ্যমে ফুলপেইড বা হাফপেইডে বৈজ্ঞানিক গবেষক পদে পিএইচডিও করতে পারবেন৷
বাংলাদেশে যেকোনো নামি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চার বছরের ব্যাচেলর শেষ করেই মাস্টার্সের জন্য আবেদন করা যায়৷
আবেদন করার আগেই প্রথম কাজ হচ্ছে নিজেকে যাচাই করা। এ ক্ষেত্রে অতি আবেগকে দমিয়ে নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে বিচার করা যে, আন্তর্জাতিক মানের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য নিজে কতটুকু যোগ্য এবং সেখানে ভাষা ও সংস্কৃতিগত দিক দিয়ে কতটুকু মানিয়ে নিতে পারব৷ এই বিষয়টা প্রথমেই বিচার করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতার কিছু বেসিক মাপকাঠি উল্লেখ করে দিচ্ছি। ব্যাচেলরের রেজাল্ট যদি ক্লাস সিস্টেম হয়, এ ক্ষেত্রে প্রথম শ্রেণি (ফার্স্ট ক্লাস) থাকা আবশ্যক। সে ক্ষেত্রে ন্যূনতম ৬৫% নম্বর হলে সুযোগ পাওয়া সহজ হয়। যদি গ্রেডিং সিস্টেমের রেজাল্ট হয় তাহলে ন্যূনতম সিজিপিএ ৩.০ (৪.০) হলে চান্স পাওয়া সহজ হয়। ব্যাচেলরের পাঠদানের মাধ্যম ইংরেজি হলে এ ক্ষেত্রে ইংরেজি ভাষার ওপর দক্ষতা অর্জনসহ অনেক সুবিধা পাওয়া যায়। তারপরেও নিজে চর্চা ও IELTS স্কোর ভালো হলে এই সমস্যাটি কাটিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়।
কীভাবে বিশ্ববিদ্যালয়, পছন্দের বিষয় ও অন্যান্য যোগ্যতার মাপকাঠি খুঁজব?
প্রথমেই নিচের ওয়েবসাইটে ঢুকতে হবে। <www.daad.de/deutschland/studienangebote/studiengang/en>
ওয়েবসাইটের বামপাশের ঘরগুলোতে নিজের চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় শব্দ ইংরেজিতে বসিয়ে দিলে পছন্দের সাবজেক্টগুলো ডানপাশের ঘরে চলে আসবে ৷ যে বিষয়টি পছন্দ হবে সেখানে ক্লিক করলে বিস্তারিত সবকিছু চলে আসবে। সেখানে নিজের যোগ্যতা যাচাই করা যাবে। বিশ্ববিদ্যালয় কী চাচ্ছে, আমার কতটুকু যোগ্যতা আছে, সেই বিষয়গুলি বিস্তারিত জানা যাবে। এ ক্ষেত্রে কোর্স কো-অর্ডিনেটরকে ইমেইল করেও বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়।
জার্মানিতে ভর্তির জন্য দুই ধরনের সিস্টেম চালু আছে। একটি হচ্ছে ওপেন অ্যাডমিশন অন্যটি এপটিচুড টেস্ট। প্রথমটির ক্ষেত্রে শুধুমাত্র ব্যচেলরের ফলাফল ও অন্যান্য কাগজপত্র যাচাই বাছাই করে ভর্তি নেওয়া হয়। অন্যটিতে কাগজপত্র যাচাইয়ের পাশাপাশি অনলাইনে পরীক্ষাও দিতে হয়। তাই চান্স পাওয়ার ক্ষেত্রে ওপেন অ্যাডমিশন পদ্ধতিটিই ঝামেলামুক্ত।
জার্মানিতে সাধারণত দুই ভাষাতে পাঠ্যদান করা হয়ে থাকে। জার্মান ভাষা ও ইংরেজি ভাষা। যদি কেউ জার্মান ভাষায় মাস্টার্স করতে চান সে ক্ষেত্রে ই১ পর্যন্ত ভাষা কোর্স সম্পন্ন রাখা বাধ্যতামূলক। এই কোর্সটি ঢাকা (জার্মান ভাষা শিক্ষাকেন্দ্র) থেকে করা যায়৷ তবে কেউ ইংরেজিতে মাস্টার্স করতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে ইংরেজি ভাষার সনদপত্র বিভিন্ন রকম চেয়ে থাকে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় যদি দেখে শিক্ষার্থীর ব্যাচেলরের পাঠদানের মাধ্যম ইংরেজি তখন অনেক সময় আইইএলটিএস চায় না। আবার কোনো বিশ্ববিদ্যালয় আইইএলটিএস বা টোফেল-এর উচ্চ স্কোরের সঙ্গে সঙ্গে জিআরইও চায়। এ ক্ষেত্রে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকেই এগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে ঢুকে (Requirements for admission সেকশনে) যাচাই-বাছাই করে নিতে হবে।
এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে যে বিষয়ে মাস্টার্স করার জন্য আবেদন করছেন তা যেন আপনার ব্যাচেলরের অধ্যায়িত বিষয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। এর জন্য আপনি আবেদন করার আগে কোর্স কো-অর্ডিনেটরকে একটি ইমেইল করে আপনার ব্যাচেলরের অধ্যয়িত বিষয় নিয়ে একটু ধারণা দিতে পারেন। যেমন আপনি ব্যাচেলরে কী কী বিষয় পড়েছেন, সঙ্গে আপনার অর্জিত সিজিপিএ উল্লেখ করে দেবেন। তার কাছে আরও জানতে চাইবেন তার ওই বিভাগে আপনি মাস্টার্স করার জন্য উপযুক্ত কিনা। দেখবেন তিনি দুই-এক কর্মদিবসের মধ্যেই আপনার ইমেইলের রিপ্লাইয়ে বলে দেবেন আপনার কী কী করতে হবে বা আপনি আবেদন করার যোগ্য কিনা৷
জার্মান বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মূলত দুইভাবে আবেদনের পদ্ধতি গ্রহণ করে থাকে
১. বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ স্বয়ং কাগজপত্র যাচাই বাছাই করে ভর্তির সিদ্ধান্ত নেয়। এ ক্ষেত্রে বিনা মূল্যে আবেদন করা যায়।
২. ইউনি এসিস্ট নামের সংস্থা শিক্ষার্থীর কাগজপত্র যাচাই বাছাই করে এবং পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভর্তির সিদ্ধান্ত নেয় ৷ এ ক্ষেত্রে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের জন্য খরচ করতে হয় ৭৫ ইউরো (আনুমানিক সাত হাজার টাকা)। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের ক্ষেত্রে পরের প্রতিটির জন্য ১৫ ইউরো (আনুমানিক এক হাজার টাকা) করে দিতে হয়। বর্তমানে প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোই এই সংস্থার মাধ্যমে ভর্তি প্রসেস করে থাকে। জার্মানির কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসার জন্য প্রসেসিং ব্যবস্থা মূলত দুইটি ধাপে সম্পন্ন হয়
অ্যাডমিশন লেটার প্রাপ্তি: আপনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অ্যাডমিশন লেটার পেয়েছেন মানে এই নয়, আপনি জার্মানিতে আসতে পারবেন। আপনাকে এরপর পরবর্তী ধাপের জন্য অর্থাৎ জার্মান ভিসার ধাপটিও পাড়ি দিতে হবে।
জার্মান ভিসা প্রাপ্তি: এটা হচ্ছে জার্মানিতে উচ্চশিক্ষার জন্য আসার শেষ ধাপ। ভিসা পেয়ে গেলই জার্মানিতে আসার সব পথ উন্মুক্ত হয়ে গেল।
প্রথমেই আসা যাক অ্যাডমিশন লেটার প্রাপ্তির জন্য কী কী করণীয়
১. প্রথমেই ইউনি এসিস্ট ওয়েবসাইটে ঢুকে নিজের নামে একটি আইডি খুলতে হবে। তারপর যেখানে আবেদন করবেন সেই বিশ্ববিদ্যালয় ও সাবজেক্ট সেকশনে ঢুকে নির্ভুল তথ্যগুলোই ফরমে লিপিবদ্ধ করতে হবে। এখানকার আপলোড সেকশনে নিজের যাবতীয় সনদপত্র, ভাষার সনদপত্র, মোটিভেশন লেটার সংযুক্ত করতে হবে। ফরমটি অনলাইনে সাবমিট করলে অটো পিডিএফ কপি জেনারেট হবে। সেই ফরমটি প্রিন্ট করে নির্ধারিত জায়গাতে স্বাক্ষর করতে হবে।
২. বিশ্ববিদ্যালয় ওয়েবসাইটে ক্লিক করে পছন্দের সাবজেক্টের পেজে ঢুকে আবেদনপত্র ডাউনলোড করে প্রিন্ট দিতে হবে। সেটা নিজ হাতে পূরণ করতে হবে অথবা অনলাইনে পূরণ করে অটোজেনারেটেড পিডিএফ কপি প্রিন্ট করে নির্ধারিত স্থানে স্বাক্ষর করতে হবে।
৩. যেখানে ব্যাচেলর সম্পন্ন করেছেন সেই বিভাগের দুজন ক্ষেত্র বিশেষে তিনজন প্রফেসর (সহযোগী বা সহকারী প্রফেসর হলেও হবে) থেকে রিকোমেন্ডেশন লেটার নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষকদের অফিশিয়াল প্যাড ব্যবহার করতে হবে। রিকোমেন্ডেশন লেটারে অবশ্যই সিলেক্টেড সাবজেক্টের নাম ও কোথায় পড়তে যাবেন সেটা উল্লেখ থাকতে হবে। এ ছাড়া শিক্ষক তাঁকে সেখানে পড়তে যেতে উৎসাহ প্রদান করছেন সে বিষয়টিও লক্ষ্য রাখতে হবে।
৪. ব্যাচেলরের সার্টিফিকেট, ট্রান্সক্রিপ্ট, আইইএলটিএস সার্টিফিকেট ও এসএসসির সার্টিফিকেট কোনো সরকারি উকিল থেকে নোটারি করতে হবে অথবা জার্মান অ্যাম্বাসি থেকে সত্যায়িত করিয়ে নিতে হবে।
৫. একটি মোটিভেশনাল লেটার লিখতে হবে। স্যাম্পল কপি গুগলে সার্চ দিলেই পাওয়া যায়। এখানে যে বিষয়ে পড়তে যাবেন সেই বিষয়টার ভালো লাগা ভালোবাসার কথাগুলো সাজিয়ে গুছিয়ে লিখতে হবে। লেখাগুলো যেন তৈলাক্ত না হয় এবং অনুপ্রেরণামূলক হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
৬. ইউনি এসিস্ট ওয়েবসাইটে টাকা পাঠানোর জন্য ওয়েবসাইটে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ডিটেইল উল্লেখ করা আছে। আবেদনপত্রসহ পাসপোর্ট নিয়ে যেকোনো ব্যাংকের বৈদেশিক বিনিময় শাখায় যেতে হবে। সেখান থেকে ৭৫ ইউরোর সমপরিমাণ টাকা ইউনি এসিস্টের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করতে হবে। একটা প্রুফ কপি সেখান থেকে নিয়ে নিতে হবে। এখানে টাকা পাঠানোর দিক-নির্দেশনা ব্যাংক কর্তৃপক্ষই দিয়ে দেবেন। ইন্টারন্যাশনাল ক্রেডিট কার্ড (মাস্টার কার্ড, ভিসা কার্ড, পেপল) থাকলে সহজেই এই টাকা ট্রান্সফারের জটিলতা অবশ্য এড়ানো যায়।
৭. কাগজগুলো নিচের সিরিয়াল অনুযায়ী সাজাতে হবে।
ক) টাকা পাঠানোর প্রুফ কপি।
খ) ইউনি এসিস্ট-এর আবেদনপত্র।
গ) বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদনপত্র।
ঘ) ব্যাচেলরের সনদপত্র, ট্রান্সক্রিপ্ট ও এসএসসির সনদপত্রের নোটারাইজড বা সত্যায়িত কপি।
ঙ) মোটিভেশন লেটার।
চ) রিকোমেন্ডেশন লেটার দুটি বা তিনটি।
ছ) বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ইংরেজি মাধ্যমের কপি (যদি থাকে)।
জ) আইইএলটিএস-এর নোটারাইজড বা সত্যায়িত কপি।
কাগজগুলো স্ট্যাপল বা জেমসক্লিপে আটকে একটি এ-৪ সাইজের মোটা এনভেলপে ইউনি এসিস্টের নির্ধারিত ঠিকানায় (ইউনি এসিস্টের ওয়েবসাইটে দেওয়া আছে) পাঠাতে হবে। তবে সরকারি পোস্ট ব্যবহার না করে ডিএইচএল বা ফেডএক্সে কুরিয়ার করলে আবেদনপত্র কখন কবে পৌঁছাল সেটা ট্র্যাক করে জেনে আশ্বস্ত হওয়া যায়। আপনার লেটার ও টাকা ইউনি এসিস্টে পৌঁছানো মাত্র আপনাকে ইমেইল করে ইউনি এসিস্ট নিশ্চিত করবে।
তিন থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে ইউনি এসিস্ট আপনাকে দুটি ইমেইল করে আপনাকে আবেদনের ব্যাপারে আপডেট দিয়ে আশ্বস্ত করবে। প্রথম ইমেইলটি ব্যাচেলরের ইভালুয়েশন রিপোর্ট অর্থাৎ জার্মান গ্রেডে আপনার রেজাল্ট কেমন। দ্বিতীয় ইমেইলটি বলবে যে আপনার কাগজপত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্তের জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এরপর সব ঠিক থাকলে দুই-এক মাসের মধ্যেই আপনি অ্যাডমিশন লেটারটি পেয়ে যাবেন।
এবার আসছি জার্মান ভিসাপ্রাপ্তির জন্য কী কী করণীয়
প্রথম কাজ হচ্ছে জার্মান অ্যাম্বাসি ঢাকার ওয়েবসাইট ভিজিট করা। সেখানে স্টুডেন্ট ভিসার আবেদনের জন্য চেকলিস্ট দেওয়া থাকে। এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে জার্মান ব্যাংকে নিজের নামে অ্যাকাউন্ট করে সেখানে ৮৬৪০ ইউরো (আনুমানিক আট লাখ টাকা) জমা দিতে হবে।
নিচের লিংকে গেলে আপনি জার্মান ব্যাংক ওয়েব অ্যাড্রেস পাবেন। যেখানে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন।
<www.deutsche-bank.de/pfb/content/pk-konto-und-karte-international-students.html>
এই টাকাটা আপনার নিজের অ্যাকাউন্টেই গচ্ছিত থাকবে। শুধুই দেখানো যে জার্মানিতে আপনি নিজের খরচ মেটাতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে জার্মান অ্যাম্বাসি ঢাকার ওয়েবসাইটে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা থেকে শুরু করে ইউরো জমা দেওয়ার বিস্তারিত পদ্ধতি দেওয়া আছে। যেকোনো তথ্যজনিত সাহায্য লাগলে অ্যাম্বাসি খুব আন্তরিকভাবে সাহায্য করে থাকে। সরাসরি অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে পারেন অথবা ইমেইল বা ফোনেও কথা বলে নিতে পারেন।
দ্বিতীয়ত, আপনাকে জার্মান অ্যাম্বাসি ঢাকার কিছু মার্ক করা হেলথ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি থেকে ইনস্যুরেন্স করিয়ে নিতে হবে। কোম্পানি ভেদে তিন হাজার থেকে সাত হাজার টাকা পর্যন্ত লাগতে পারে। অ্যাম্বাসি ওয়েবসাইটে সার্চ দিলে ইনস্যুরেন্স কোম্পানির তালিকাগুলো পাবেন। নিচের লিংকে গেলে ইনস্যুরেন্স কোম্পানির তালিকা পাবেন।
<www.dhaka.diplo.de/contentblob/1808788/Daten/7649343/Merkblaetter_Krankenversicherung_Download.pdf>
এবার চেকলিস্ট অনুযায়ী কাগজপত্রগুলো প্রস্তুত করে ওয়েবসাইট থেকে অনলাইনের মাধ্যমে অ্যাপয়েন্টমেন্টের তারিখ নিয়ে নিন। অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেবার জন্য নিচের ঠিকানায় ক্লিক করুন:
<service2.diplo.de/rktermin/extern/choose_categoryList. do? locationCode=dhak&realmId=420>
নিচের লিংকে গেলে চেকলিস্ট দেখতে পাবেন।
<www.dhaka.diplo.de/contentblob/4989256/Daten/7335133/2017ChecklistStudent.pdf>
মূল কাগজপত্র এক সেট সাজিয়ে সঙ্গে ভিসার জন্য আবেদনপত্র <www.dhaka.diplo.de/contentblob/494300/Daten/6179246/AntragDVisum.pdf> দুই সেট পূরণ করে স্বাক্ষর করতে হবে এ ছাড়া চেকলিস্ট অনুযায়ী সকল কাগজপত্র দুই সেট ফটোকপি করে সাজাতে হবে। সঙ্গে নিতে হবে ২৬ হাজার মতো টাকা। যার মধ্যে ৬০ ইউরো (আনুমানিক সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা) ভিসা আবেদনের জন্য এবং নগদ ২০ হাজার টাকা আপনার সার্টিফিকেটগুলো ভেরিফিকেশনের জন্য।
ভিসা ইন্টারভিউয়ের ১০ থেকে ১৫ মিনিট জীবনের খুবই গুরুত্বপূর্ণ সময়। খুব মাপকাঠি বজায় রেখে প্রশ্নকর্তার সব প্রশ্নের উত্তর মার্জিতভাবে দিয়ে তাঁকে আশ্বস্ত করতে হবে জার্মানিতে পড়াশোনা করাই আপনার একমাত্র উদ্দেশ্য। মনে রাখতে হবে তিনি আপনার ভিসা ইচ্ছা করলে তুচ্ছ কারণ দেখিয়ে বাতিল করে দিতে পারেন। প্রশ্নকর্তার সঙ্গে প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষ করে যদি সব কাগজপত্র ঠিকঠাক থাকে এবং তিনিও আপনার ব্যাপারে সন্তুষ্ট হোন তখন তিনি আপনার মূল কাগজপত্র ফিরিয়ে দিয়ে মূল পাসপোর্ট ও ফটোকপি করা কাগজগুলো রেখে দেবেন। এরপরে আপনার অপেক্ষার পালা। সবকিছু ঠিক থাকলে সর্বোচ্চ ৪০ দিনের মধ্যে আশা করি জার্মানির ভিসা (তিন মাসের জন্য) আপনি পেয়ে যাবেন।
*মাহবুব মানিক: বৈজ্ঞানিক গবেষক, মার্সেবুর্গ ইউনিভার্সিটি অব অ্যাপ্লাইড সায়েন্স, হালে, জার্মানি।
ফেসবুক আইডি: <www.facebook.com/mahbubmanik001>
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।