রফিক মাহমুদ, উখিয়া:
উখিয়া উপজেলায় মাধ্যমিক ও দাখিল পর্যায়ে বিজ্ঞান বিষয়ে পড়ালেখার মারাত্মক অবনতি হয়েছে। কয়েক বছর ধরে প্রকাশিত এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষায় হতাশাব্যঞ্জক ফলাফল নিয়ে অভিভাবক ও ছাত্রছাত্রীরা উদ্বিগ্ন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিজ্ঞান বিষয়ে দক্ষ শিক্ষকের অভাবসহ বিজ্ঞান ভিত্তিক প্রয়োজনীয় সংখ্যক উপকরণ ও সরঞ্জামাদি থাকলেও তা ব্যবহার না থাকার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টদের অভিমত।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলার ১৩টি মাধ্যমিক ও ৮টি দাখিল মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্টানে নির্ধারিত কোটার অতিরিক্ত ছাত্র-ছাত্রী থাকলেও অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞান বিষয়ে দক্ষ কোন শিক্ষক নেই। আবার বিজ্ঞানের শিক্ষক থাকলেও গনিত বিষয়ে অজ্ঞতার কারণে বিজ্ঞান ভিত্তিক পড়ালেখার মান দিন দিন অবনতি হচ্ছে।
রাজাপালং বায়তুশ শরফ বালিকা দাখিল মাদ্রাসার সিনিয়র সহকারি শিক্ষক মাস্টার আবুল কালাম জানান, তাদের মাদ্রাসায় বিজ্ঞান ভিত্তিক উপকরণ থাকলেও মাদ্রাসা সুপার তা ব্যবহার করতে না দেওয়ায় ছাত্র-ছাত্রীরা এ বিষয়ে সম্পূর্ণ অজ্ঞ।
থাইংখালী উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান শিক্ষক সুকলাল দাশ জানান, আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা ইউনিসেফ প্রদত্ত কিছু বিজ্ঞানের উপকরণ থাকলেও তা যথাযথ ব্যবহার হচ্ছে না। তবে বিজ্ঞানের ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়মিত পাঠদান করা হচ্ছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
পালং আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান শিক্ষক নূর হোসেন জানান, তাদের স্কুলে প্রায় ৩৫ জন বিজ্ঞানের ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। তাদের আন্তরিকতার সহিত হাতে কলমে পাঠদান করার ফলে কয়েক বছর ধরে বিজ্ঞান বিষয়ে শতভাগ পাস করে আসছিল। তিনি জানান, এইচ.এস.সি ১ম বর্ষে গিয়ে এসব বিজ্ঞানের ছাত্র-ছাত্রীরা বিষয় পরিবর্তন করার কারণে উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞানের ছাত্র-ছাত্রী সংকট দেখা দিয়েছে।
উখিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল হোছাইন সিরাজী জানান, তার স্কুলে বিজ্ঞানের শিক্ষক অবসর নিয়ে চলে যাওয়ার কারণে বিজ্ঞানের শিক্ষক শূণ্যতা পূরণে খন্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, বিজ্ঞান বিষয়ের উপর পারদর্শী শিক্ষক না থাকার কারণে উপজেলা ভিত্তিক বিজ্ঞান বিষয়ে পড়া-লেখার মান দিন দিন চরমভাবে অবনতি হচ্ছে।
উখিয়া কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক আলমগীর মাহমুদ জানান, এই এলাকার অভিভাবক শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীরা বিজ্ঞান বিষয়ের ভবিষ্যৎ সুফল সম্পর্কে বুঝেনা। তা ছাড়া এখন ছাত্র-ছাত্রীরা গবেষণার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে পেলেছে। বিজ্ঞান বিষয়ে ছাত্রÑছাত্রীদের পূর্বের নিয়্য ফিরে আনতে হলে অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীদের উদ্ভোদ করে তুলতে হবে। তাদের কলেজে ৪/৫ জন বিজ্ঞানের প্রভাষক রয়েছে। অথচ ছাত্র-ছাত্রী নাই। তিনি বলেন, মাধ্যমিক থেকে বিজ্ঞান বিষয়ের উপর পড়া-লেখায় পারদর্শী ও মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী উঠে না আসলে কলেজে ছাত্র সংকট দেখা দিবে। এবিষয়ে কোন সন্দেহ নাই।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাঈন উদ্দিন জানান, তিনি এ উপজেলায় যোগদান করার পরপরই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের নিয়ে বৈঠক করেছিলেন। বৈঠকে বিজ্ঞান বিষয়ে পড়া-লেখার গুনগতমান বৃদ্ধির লক্ষ্যে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। যাতে বিজ্ঞান ভিত্তিক ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। তিনি বলেন, বিজ্ঞান বিষয়ে পড়া-লেখার মান এ উপজেলায় অনেক পিছিয়ে রয়েছে। তা থেকে উত্তরণ পেতে হলে শিক্ষকদের আরো আন্তরিক হতে হবে। বিজ্ঞান বিষয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের আগ্রহ বাড়াতে প্রথমত বিজ্ঞানের ক্ষেত্র তৈরী করা খুবই জরুরী। প্রয়োজনে শিক্ষদের জন্য আরও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। অন্যতায় দিন দিন মস্ফলের শিক্ষা প্রতিষ্টান গুলো বিজ্ঞানে শিক্ষার্থী শুণ্য হয়ে পড়তে পারে।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।