মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, পেকুয়া
বহুল প্রচারিত পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বিজ্ঞাপন প্রকাশ ও প্রচার না করে কক্সবাজারের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্টান পেকুয়া জিএমসি ইনষ্টিটিউশনের গোপনে অযোগ্যদের প্রধান শিক্ষকে নিয়োগ দেওয়ার পাঁয়তারা চলছে বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এদিকে বিতর্কিত ওই নিয়োগ বন্ধে শিক্ষা সচিবসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে গণদরখাস্ত করেছে স্কুলের শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও সচেতন মহল।
অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে, পেকুয়া উপজেলা সদরে অবস্থিত পেকুয়া মডেল জিএমসি ইনষ্টিটিউশনে দীর্ঘ দিন ধরে প্রধান শিক্ষকের পদটি খালি থাকায় ওই পদে একজন যোগ্য ও মেধাবী প্রধান শিক্ষক নিযোগ করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। সে ক্ষেত্রে বহুল প্রচারিত দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশের সরকারী নিয়ম থাকলেও স্কুল ম্যানেজিং কমিটি গোপন বিজ্ঞাপনটি গত মাসের ২৫ জুন বহুল প্রচারিত নয় এমন দুইট পত্রিকায় প্রকাশ করে। যাহা পেকয়া উপজেরার কোথাও কোন ব্যক্তি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়েছে তাহা জানতে পারেনি। বহুল প্রচারিত পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রচার করলে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যোগ্য ও মেধাবীরা আবেদনের সুযোগ পেত। কিন্তু স্কুল ম্যানেজিং কমিটি কর্তৃক বহুল প্রচারিত জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি না দেওয়ার কারণে মেধাবীরা ওই পদে আবেদনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে বলে স্থানীয় সচেতন মহল ও স্কুলের অভিভাবকরা অভিযোগ তুলেছেন। আর এ সুযোগে স্থানীয় কয়েকজন অযোগ্য ও বিতর্কিত লোক ‘প্রধান শিক্ষক’ পদটি হাতিয়ে নেওয়ার জন্য জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আগামী ২৫ জুলাই ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য লিখিত পরীক্ষা অনুষ্টিত হচ্ছে বলে বিদ্যালয় কতর্ৃৃপক্ষের সূত্রে জানা গেছে।
অপরদিকে বহুল প্রচারিত জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশ না করে গোপনে অযোগ্য ও বিতর্কিতদের প্রধান শিক্ষক নিয়োগের পাঁয়তারার বিষয়টি গতকাল শুক্রবার চাউর হলে পেকুয়া উপজেলা সর্বত্রে নানান ধরনের সমালোচনা, ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় উঠেছে। স্থানীয়দের পক্ষ থেকে দাবী উঠেছে, বিতর্কিত ওই নিযোগ পরীক্ষা বাতিল পূর্বক বহুল প্রচারিত জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে পুনরায় প্রধান শিক্ষক পদে লোক নিয়োগের।
পেকুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক আবুল কাসেম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকারী বিধি মোতাবেক এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে না। শুধুমাত্র টাকার বিনিয়মে অযোগ্যদেরকে ঐতিহ্যবাহী পেকুয়া জিএমসিতে প্রধান শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ দেওয়ার পায়তারা চলছে। অযোগ্যরা ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পেলে শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়বে।
এদিকে অভিভাবক মহল ও স্থানীয় একাধিক সচেতন মহল দাবী তুলেছেন যে, বহুল প্রচারিত দৈনিক পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে নতুন করে প্রধান শিক্ষক নিয়োগের বোর্ড গঠন করা হোক। এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে তারা শিক্ষা সচিব ঢাকা, চেয়ারম্যান দূনীতি দমন কমিশন সেগুনবগিচা ঢাকাসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে গণদরখাস্ত করেছেন।
এদিকে প্রচার বহুল পত্রিকায় বিজ্ঞাপন না দেওয়ায় বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ গতকাল ২০ জুলাই পেকুয়ার সংবাদকর্মী গিয়াস উদ্দিন একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস দেন। ফেসবুক স্টাটাটি হুবুহু তুলে ধরা হলো: ‘‘#অখ্যাত পত্রিকায় দেওয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বাতিল চাই, বাতিল চাই, করতে হবে #অখ্যাত পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে অযোগ্য প্রধান শিক্ষক নিয়োগের ষড়যন্ত্র মেনে নেবেনা পেকুয়াবাসী। দুইটি অখ্যাত, নাম সর্বস্ব ও ভুঁইফোড় তথাকথিত পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে পেকুয়া জিএমসিতে বিতর্কিতদের প্রধান শিক্ষক নিয়োগের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। যে পত্রিকাগুলোতে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে সেগুলোর প্রকাশনা অনিয়মিত ও প্রচার বহুল নয় এবং এবং এসব পত্রিকা পেকুয়ার মানুষ কোনদিন চোখেও দেখেনি। প্রচার বহুল পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিলে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেক মেধাবী প্রার্থী আবেদন করার সুযোগ পেত। কিন্তু তা না করে কৌশলে অখ্যাত পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে চরম গোজামিলের আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। নিয়োগ পরীক্ষার আগেই কয়েকজন প্রার্থী মোটা টাকার মিশন নিয়ে মাঠেও নেমেছে প্রধান শিক্ষকের লোভনীয় পদ হাতিয়ে নেওয়ার জন্য। অখ্যাত পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে অখ্যাত আর অযোগ্যদের নিয়োগ দিলে জিএমসির মতো গৌরবময় প্রতিষ্টানের সম্মান ক্ষুন্ন হবে, বাড়বেনা। বি:দ্র: আগামী ২৫ জুলাই নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্টিত হবে।’’
এই প্রতিবেদকের ফেসবুক স্ট্যাটাসের প্রতিক্রিয়ায় এডভোকেট জয়নাল আবেদীন নামের জিএমসি ইনষ্টিটিউশনের সাবেক শিক্ষার্থী কমেন্টস করে লেখেন: ‘‘যেখানে জ্ঞানি ব্যক্তিকে সম্মান করতে যানেনা যেখানে জ্ঞানি ব্যক্তির জন্ম হয়না। আরে ভাই আপনি প্রধান শিক্ষক কিছু জানেনা তো আপনি কিভাবে ছাত্রদের শিখাবেন। আমি একটা বিষয় বলতে চাই এই ঐতিহ্যবাহী বিদ্যালয় থেকে পড়া লেখা শেষ করে অনেক বন্ধু, বড় ও ছোট ভাই বোন সরকারি বেসরকারি উচ্চ পর্যায়ে কাজ করছেন। তারা/ওনারা একটু নড়েছড়ে বসলে কিন্তু খবর আছে। সাবধান করে বলতে চাই …. যা করবেন তা সচ্ছভাবে করবেন। কোন পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন!!!!!’’
এক প্রতিক্রিয়ায় পেকুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক আবুল কাসেম লেখেন ’’ছাগল দিয়ে যে হাল চাষ হয়না এটা প্রমানিত।
পেকুয়া শিলখালী উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক সিনিয়র শিক্ষক মো. ইউসুফ লেখেন ’’ভাইজান আসলে কি বলব জি এম সির মত এত বড বিদ্যালয়ে জাতীয় দৈনিক পএিকায় নিয়োগ সারকুলার দেওয়া উচিত ছিল মনে হয় …’’।
পেকুয়া উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা মেহেদী হাসান ফরায়জী এক প্রতিক্রিয়া লেখেন; ‘‘জি এম সির মত একটি ঐতিয্যবাহী বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া জাতীয় পত্রিকার মাধ্যমে পাবলিশ করে দেয়া উচিৎ, যাতে মেধাবী, দক্ষ শিক্ষক পাওয়া যায়, কিন্তু যা দেখা যাচ্ছে, ডাল মে কুচ কালাহে!!!’’
পেকুয়া চৌমহুনীর মাওলানা ষ্টোর নামের ফেসবুক আইডি কমেন্টস করে লেখেন: ’’. এখন নাকী প্রধান শিক্ষকের দাম তের লক্ষ টাকা উটেছে।
কক্সবাজার জেলা পরিষদের ৪ নং ওয়ার্ড়ের (পেকুয়া উপজেলা) সদস্য ও পেকুয়া উপজেলা যুবলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বলেন‘ তিনি বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটিকে ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন, কোন ধরনের অনিয়মের আশ্রয় না নিয়ে নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে যাতে মেধাবী ও যোগ্যরা ঐতিহ্যবাহী ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে যাতে নিয়োগ পায়। তিনি আরো বলেন, প্রধান শিক্ষক নিয়োগে কোন ধরনের অনিয়ম পরিলক্ষিত হলে সেটা সহ্য করা হবেনা।
এ বিষয়ে পেকুয়া মডেল জিএমসি ইনষ্টিটিউশন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি উম্মে কুলসুম মিনুর সাথে ২১ জুলাই সন্ধ্যায় তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, প্রচার বহুল পত্রিকায় বিজ্ঞাপন না দিয়ে জিএমসির শিক্ষকরা ভূল করেছেন। তবে সে ভূল আগামীতে আর করা হবেনা। তিনি আরো বলেন, ইতিমধ্যেই ১৫-১৬ জন প্রার্থী প্রধান শিক্ষক পদে আবেদন করেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, স্কুল ম্যানেজিং কমিটির এক সদস্য কয়েকজন প্রার্থীর কাছ থেকে টাকা নিয়ে তাদের পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ পাইয়ে দিতে অন্যায়ভাবে ঝামেলা শুরু করেছেন। আগামী ২৫ জুলাই নিয়োগ পরীক্ষায় এধরনের কোন অনিয়ম হলে তিনি নিয়োগ পরীক্ষা সরাসরি বাতিল করে দিবেন।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।