ছাত্রনেতা ইশতিয়াক আহমদ জয় এর ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে ….

৭১’ সালের মার্চ মাসে বঙ্গবন্ধু ও ইয়াহিয়ার রুদ্ধশ্বাস বৈঠক শুরু হয়। সে সময় পাকিস্তানীদের আসল উদ্দেশ্য ছিলো আলোচনার নামে একের পর এক বৈঠক করে কাল ক্ষেপণ করা।
ঐ সময় ভুট্টোও সাহেব ও এসেছিলেন। কড়া মিলিটারি প্রহরায় উঠেছিলেন ঢাকার ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে।
বঙ্গবন্ধু ও ইয়াহিয়ার সাথে অনুষ্ঠিত প্রায় সব বৈঠকে ফাইল হাতে উপস্থিত থাকতেন বঙ্গবন্ধুর এক বিশ্বস্ত জন। তিনি কোন কথা বলতেন না। অধিকাংশ সময় চুপচাপ বসে থাকতেন।
ইয়াহিয়া বঙ্গবন্ধুকে কখনো ইমোশনাল হয়ে কিছু বলে ফেললে সেই বিশ্বস্ত জন “এক্সকিউজ মি” বলে বঙ্গবন্ধুর কানে কানে কি যেন বলতেন।
বিশ্বস্ত এই জনের কিংবা ব্যক্তির নাম হচ্ছে তাজউদ্দিন আহমেদ। এই ব্যক্তি সম্পর্কে একদিন ইয়াহিয়া সরাসরি বঙ্গবন্ধুকে বললেনঃ “দিস তাজউদ্দিন,আই টেল ইউ,উইল বি ইয়োর মেইন প্রবলেম।”
বঙ্গবন্ধু তাঁর স্বভাবসুলভ হাসি দিয়ে জবাব দিলেন… “লেটস সি।”
তাজউদ্দিন আহমেদ সম্পর্কে ইয়াহিয়ার কথার সত্যতা পাওয়া যায় পরবর্তীতে। তাজউদ্দিন আহমেদ আসলেই একটি প্রবলেম হয়ে দাঁড়ায়। তবে প্রবলেমটি বঙ্গবন্ধুর জন্য নয়, ইয়াহিয়া বা পাকিস্তানপন্থীদের জন্য।
যুদ্ধ শুরু হওয়ার সাথে সাথেই বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়। যাতে তিনি যুদ্ধকালীন কোন সরকারের রূপরেখা ঘোষণা করতে না পারেন।
আর ইয়াহিয়া বা ভুট্টো নিশ্চিত ছিলেন যে,
যেহেতু শেখ মুজিব কোন সরকার গঠন করতে পারেন নাই,সেহেতু এই যুদ্ধটা কোনভাবেই আন্তর্জাতিক মহলে স্বাধীনতা যুদ্ধ হিসেবে বিবেচিত হবে না।
তাই বাংলাদেশ নামক যে রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন শেখ মুজিব দেখেছিলেন সেই স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে। কোন স্বাধীন দেশ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিবে না।
কিন্তু পাকিস্তানীদের পুরো পরিকল্পনা তছনছ হয়ে যায় অস্থায়ী সরকার গঠনের মধ্য দিয়ে। এই অস্থায়ী সরকারের রূপরেখা বঙ্গবন্ধু আগে থেকেই তৈরি করে দিলেও তাঁর অনুপস্থিতিতে তা বাস্তবায়ন করা খুবই দুঃসাধ্য ব্যাপার ছিলো। এই দুঃসাধ্যকে সাধ্যে রূপান্তর যারা করেন তাদের মধ্যে মূল ভূমিকা ছিলো তাজউদ্দিন আহমেদের।
অস্থায়ী সরকার গঠন ও এর নেতৃত্ব গ্রহণ করার পর তাজউদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে নোংরা প্রচারণা শুরু করেছিলেন পাক বাহিনী।
তারা একটি প্রচারপত্র বের করেছিল,
যেখানে বলা হয়েছিলো তাজউদ্দিন একজন ভারতীয় ব্রাহ্মণ এবং তাঁর আসল নাম তেজারাম। অথচ বাস্তবে তাজউদ্দিন আহমেদ ছিলেন কোরানে হাফেজ।
তাজউদ্দিন আহমেদ বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতে বঙ্গবন্ধুর ছায়াবীর হিসেবে এতোটা নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেছিলেন যে,পাক বাহিনী একটা সময় বলতে বাধ্য হয়েছিলোঃ “তাউদ্দিন আহমেদ ভারতের দালাল। সে ভারতীয় স্বার্থ রক্ষার জন্য পাকিস্তান ভাঙতে চাচ্ছে।”
বিশ্বাস ও আস্থার সংমিশ্রণজাত মহামানব তাজউদ্দিন আহমেদের জন্মদিন আজ। শুভ জন্মদিন ” বঙ্গতাজ ।”