হাফেজ মুহাম্মদ কাশেম, টেকনাফ
১০ হাজার ৮৪০ হেক্টর জমিতে আমন চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে চলতি আমন মৌসুমে কৃষকগণ মাঠে নেমেছেন বলে জানা গেছে। ষড় ঋতুর দেশ বাংলাদেশে কৃষির ভাষ্য মতে এখন সারা দেশে শুরু হয়েছে খরীপ-২ মৌসুম। চলবে একটানা ৪ মাস।

টেকনাফ উপজেলা কৃষি অফিস সুত্র জানা যায়, এ বছর উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নে ৫ হাজার ৪২০ হেক্টর, হ্নীলা ইউনিয়নে ১ হাজার ৬০০ হেক্টর, টেকনাফ সদর ইউনিয়নে ১ হাজার ৩৫০ হেক্টর, বাহারছড়া ইউনিয়নে ১ হাজার ৪০০ হেক্টর, টেকনাফ পৌর এলাকায় ৫ হেক্টর, সেন্টমার্টিনদ্বীপ ইউনিয়নে ৯০ হেক্টর, সাবরাং ইউনিয়নে ১ হাজার হেক্টরসহ মোট ১০ হাজার ৮২৫ হেক্টর জমিতে আমন চাষাবাদ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমানে বীজ তলা তৈরী, চাষাবাদের মাঠ তৈরী এবং অপেক্ষকৃত নিচু জমিতে রোপা আমন চাষাবাদের কাজ পুরো দমে চলছে। উপজেলা কৃষি অফিসার মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম, অতিরিক্ত কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার মোঃ মনোয়ার হোসেন, উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা (এসএপিপিও) আলী আহমদ, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা তাপস বড়–য়া, সনজিৎ কুমার দাশ, মোঃ শফিউল আলম কুতুবী, মোস্তাক উদ্দিন, আনোয়ার হোসেন, শেখ জামাল উদ্দিন, সরওয়ার কাদের, মোঃ জাকারিয়া ও কামরুল হাসান মাঠ পর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।

সুত্র মতে, কৃষকরা এ বছর স্থানীয় জাত ছাড়াও উচ্চ ফলনশীল (উফশী) বিআর-২২, বিআর-২৩, ব্রি ধান-৩৩, ব্রি ধান-৩২, ৫০ ব্রি ধান-৩৪, ব্রি ধান-৩৭, ব্রি ধান-৩৮, ব্রি ধান-৩৯, ব্রি ধান-৪০, ব্রি ধান-৪১, ব্রি ধান-৪৪, ব্রি ধান-৪৬, ব্রি ধান-৪৯, ব্রি ধান-৫১, ব্রি ধান-৫২, ব্রি ধান-৫৩, ব্রি ধান-৫৪, ব্রি ধান-৫৬, ব্রি ধান-৫৭, এবং লবণাক্ত সহনশীল বিনা-৭, জাতের ধানের চাষাবাদ করবেন। তম্মধ্যে কয়েকটি লবণাক্ততা সহনশীল, খরা সহনশীল এবং জোয়ার-ভাটা সহনশীল জাত রয়েছে। এছাড়া চলতি খরীপ-২ (আমন) মৌসুমে ১০ হেক্টর জমিতে আদা, ৩০ হেক্টর জমিতে হলুদ, ২৫ হেক্টর জমিতে চড়া কচু, ১০ হেক্টর জমিতে পাইন্যা কচু, ২০ হেক্টর জমিতে কলমী শাক, ২৫ হেক্টর জমিতে পাট শাক, ২০ হেক্টর জমিতে বিলাতি ধনিয়া, ২০০ হেক্টর জমিতে পান, ১৮ হেক্টর জমিতে বরবটি, ১৫ হেক্টর জমিতে ঢ়েড়স, ১০ হেক্টর জমিতে লাউ, ১০ হেক্টর জমিতে কাঁকরোল, ১৫ হেক্টর জমিতে মরিচ, ১০ হেক্টর জমিতে টমেটো, ১৫ হেক্টর জমিতে বেগুন, ১২ হেক্টর জমিতে পুঁইশাক, ৮ হেক্টর জমিতে ডাটা, ৪০ হেক্টর জমিতে শশা, ২৫ হেক্টর জমিতে চিচিংগা, ২০ হেক্টর জমিতে ঝিঙ্গের চাষাবাদ করা হবে।

উপ-সহকারী কৃষি অফিসার শফিউল আলম কুতুবী জানান, কৃষকরা জমিতে নতুন প্রযুক্তি ‘আলোক ফাঁদ’ এবং ‘পার্সিং পদ্ধতি’ ব্যবহার করাতে সুফল পেয়েছেন। কৃষি উদ্ভাবনীয় আধুনিক পদ্ধতিতে একদিকে যেমন কৃষকরা লাভবান হয়েছে। অন্যদিকে বিষ প্রয়োগ না করায় প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা হয়েছে।

উপজেলা কৃষি অফিসার মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম বলেন, গত বছর সারের সংকট না থাকায় কৃষকরা সুষম সারের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে জমিতে সার প্রয়োগ, আবহাওয়া অনুকূল, আমাদের মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাদের নিরলস প্রচেষ্টায় পার্চিং, লাইনিং, এডাব্লিউডি, এলসিসির ব্যবহার, পোকা দমনে আলোক ফাঁদের ব্যবহার কৃষকরা অনুসরণ করাতে লক্ষ্যমাত্রার চাইতে বেশী ফলন হয়েছে। তিনি আরও বলেন টেকনাফ উপজেলায় সদ্য সমাপ্ত বোরোর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ হাজার ৫৫৯ মেট্রিক টন চাল। উক্ত লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে উৎপাদিত হয়েছে ৪ হাজার ৬৯০ মেট্রিক টন। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৩১ মেট্রিক টন বেশী উৎপাদিত হয়েছিল। আগামীতে কৃষকদের মাঝে আরো বেশী বিজ্ঞান সম্মত পদ্ধতি অনুসরণ নিশ্চিত করতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আন্তরিক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

উল্লেখ্য, টেকনাফ উপজেলার অত্যন্ত জনপ্রিয় কর্মঠ ও কৃষকবান্ধব কৃষি অফিসার হিসাবে পরিচিত মোঃ আবদুল লতিফের বদলীর দীর্ঘ দিন পর ৮ মার্চ মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম তদস্থলে যোগদান করে স্বল্প সময়ের মধ্যেই কৃষকদের আস্থা ও সন্তষ্টি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন বলে জানা গেছে। বর্তমানে টেকনাফ উপজেলা কৃষি অফিসে অতিরিক্ত কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার মোঃ মনোয়ার হোসেন, উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা (এসএপিপিও) আলী আহমদ, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা তাপস বড়–য়া, সনজিৎ কুমার দাশ, মোঃ শফিউল আলম কুতুবী, মোস্তাক উদ্দিন, আনোয়ার হোসেন, শেখ জামাল উদ্দিন, সরওয়ার কাদের, মোঃ জাকারিয়া ও কামরুল হাসান কর্মরত রয়েছেন।