পূর্বপশ্চিমবিডি:
সারাদেশে আওয়ামী লীগের মধ্য থেকে হাইব্রিড ও অনু্প্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে যখন অভিযান চলছে, এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা যেখানে অনুপ্রবেশকারীদের তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন তখন ১০ বিতর্কিত মন্ত্রী-এমপিকে নিয়ে বিপাকে রয়েছে দলটি। তৃণমূল আওয়ামী লীগে নিজের অবস্থান নড়বড়ে তবুও বিতর্কিত এসব এমপি-মন্ত্রী এবং তাদের আত্নীয় স্বজনদের বোপোরোয়া কর্মকাণ্ডের কারণে বিপাকে পরেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এমনকি আগামী একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে দলের হাইকমান্ড ব্রিবতকর অবস্থার মধ্যে রয়েছে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কয়েকজন নেতার সঙ্গে আলাপকালে বিষয়টি নিশ্চত হওয়া গেছে।
নরসংদী সদর আসনের সংসদ সদস্য লে. কর্ণেল (অব.) মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম হীরু (বীর প্রতীক) বর্তমান সরকারের পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। দীর্ঘ ৩৫ বছর পর নরসিংদী সদর থেকে মন্ত্রী হবার পর থেকেই তিনি আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাদের কোণঠাসা করার মিশনে নামেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে জামায়াত ও বিএনপি নেতাদের পৃষ্ঠপোষকতা দেয়ার। বঙ্গবন্ধুর আত্নসীকৃত খুনী কর্নেল রশিদ ও ডালিমদের সমন্বয়ে ৭৫ এর হত্যার পর গঠিত ফ্রিডম পাটির নরসিংদীর জেলার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি খোকার ছেলে, শিশু বলাৎকার মামলার আসামী আজিমকে নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগ এর সাংগঠনিক সম্পাদক, নরসিংদী জেলা চেম্বারের সভাপতি বিএনপির উপজেলা চেয়ারম্যার মনজুর এলাহীর আপন ভাই মামুন এলাহী, নরসিংদী বাজার বনিক সমিতির সভাপতি বানিয়েছেন নরসিংদী শহর বিএনপির সাবেক সভাপতি বাবুল সরকারকে বসিয়েছেন। এমনকি প্রতিমন্ত্রীর এপিএস মনিরুজ্জামান ছাত্রদলের ঢাকা মহানগরের সম্পাদকীয় পদে ছিলেন।
শেরপুর ১ আসনের এমপি আতিউর রহমান আতিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে তিনি নিজের পছন্দের লোকদের দলের বিভিন্ন পদে আসীন করছেন। এমনকি জেলা ছাত্রলীগের কমিটিতে ৫৭ ধারায় মামলার আসামি ও বহু নারী কেলেংকারির খল নায়ক মতিউর রহমান মতিনকে নেতৃত্ব আনতে জোর তৎপরতা দেখাচ্ছেন। ছাত্রদল ও বিএনপির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার পরও তাদের নিজের দলে আনার ক্ষেত্রে তিনি আপোস করছেন। এছাড়া তার আত্নীয়-স্বজনরাও এলাকায় ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করছেন বলে জানা গেছে।
ঢাকা ১৯ আসনের এমপি ডা. এনামুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে তিনি দলের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি করছেন, বিভেদ তৈরি করছেন, উপদল তৈরি করছেন, আত্মীয়করণ করছেন। এছাড়া তিনি সম্প্রতি নিজ এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সন্ত্রাসীদের ক্রসফায়ারে দিয়েছেন এবং বাকিদের দেয়ার জন্য তালিকা করেছেন। এমন প্রসঙ্গ গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তাকে নিয়ে দল বিব্রতকর অবস্থায় পরে।
ইয়াবা সম্রাট খ্যাত কক্সবাজারের আব্দুর রহমান বদিকে নিয়ে আওয়ামী লীগ এর আগেও বিব্রতকর অবস্থায় পরেছিল। বর্তমানে দুদকের মামলায় জামিনে থাকা এই এমপির বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে মানবপাচারের মতো ঘৃণ্য সিন্ডিকেটের পৃষ্ঠপোষক বলে স্থানীয়রা দাবি করেছে। এমনকি আব্দুর রহমান বদির আত্নীয় স্বজনরা কক্সবাজারে ত্রাসের রাজত্বও কায়েম করেছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীকে নিয়েও আওয়ামী লীগের মধ্যে রয়েছে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় রাজনীতিতে তিনি একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। এমনকি জেলার একজন মন্ত্রীর সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের জের ধরে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনার নেপথ্যে তিনি ইন্ধন রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় নেতারা। এমনকি সর্বশেষ তিনি এবং সংরক্ষিত নারী আসনের এমপিকে দেখা গেছে বিএনপি নেতার সঙ্গে একই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। বিষয়টি নিয়ে বেশ সমালোচনার মুখে পড়েছেন দুই এমপি।
পিরোজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য একেএমএ আউয়ালের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। টাকার গরমে হঠাৎ করে আওয়ামী লীগে আসা এই এমপি তৃণমূল আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। এলাকায় জনবিচ্ছিন্ন এই এমপির পরিবারের সদস্যরা এলাকায় নানাভাবে প্রভাব খাটাচ্ছেন।
নরসিংদী-৫ আসনের বর্তমান এমপি সাবেক মন্ত্রী রাজি উদ্দিন আহমেদ রাজু। প্রবীণ এই পার্লামেন্টারিয়ানের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে তিনি বয়সজনিত কারণে নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন না। এমনকি নিজ পুত্রকে একই আসনে এমপি পদে মনোনয়ন নিশ্চিত করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন। ২৪ টি ইউনিয়ন এবং পৌরসভার জনপ্রতিনিধিদের তিনি একপ্রকার হুমকি দিয়েই রেখেছেন যেন অন্যকারো পক্ষে যাওয়া যাবে না।
গাইবান্ধা-৪ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ। তার সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতায় একটি ক্যাডার বাহিনী এলাকায় আতংক সৃষ্টি করেছে। এছাড়া
জামায়াত অধ্যুষিত এলাকাতে দলটির নেতাদের সঙ্গে গোপন আপস করে রাজনীতি করছেন। এমনকি জামায়াতের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় সুযোগ সুবিধাও নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া সাঁওতাল পল্লীতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এমপি আবুল কালাম আজাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদ রয়েছিল বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ঠাকুরগাঁও-২ আসনের সংসদ সদস্য দবিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় কয়েকটি সংখ্যালঘু পরিবারের জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে। জমি ফেরত চাইতে গেলে ওই পরিবারের লোকজনের ওপর এমপির বাহিনী হামলা করে। এ নিয়ে সারা দেশে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়। নিজ দলের মন্ত্রী-এমপিরাও ওই দবিরুল ইসলামের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেন।
ফেনী-৩ আসনের সংসদ সদস্য রহিম উল্যাহর বিরুদ্ধে নিজ দলের কর্মী আজিজুল হককে গুলি করে হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে স্থানীয় নেতাকর্মীরা তার কুশপুত্তলিকা দাহ করে এবং শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেন। এ ঘটনায় ওই এমপির বিরুদ্ধে একটি মামলাও হয়।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।