বিশেষ প্রতিবেদক:
চকরিয়া উপজেলার প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুটাখালী কিশলয় আদর্শ শিক্ষানিকেতনে পকেট কমিটি গঠনের পাঁয়তারা চলছে বলে অভিযোগ ওঠেছে।
ইতোমধ্যে স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও বর্তমান কমিটির সভাপতিসহ কয়েকজন পকেট কমিটি গঠনের কলাকৌশল ঠিক করেছেন বলে সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে। যদিওবা কমিটির সভাপতি রেজাউল করিম রেজু অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করেছেন।
স্কুলের শিক্ষক, অভিভাবক, প্রাক্তন ছাত্রসহ অনেকে এ বিষয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে অভিযোগ করেছেন।
২ বছর আগে স্কুল পরিচালনায় ১১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠিত হয়। এ কমিটির সভাপতি রেজাউল করিম রেজু। পদাধিকার বলে স্কুলের প্রধান শিক্ষক কবির আহমদ সদস্য সচিব। আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর কমিটির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। মেয়াদপূর্তির ৯০ দিন আগে নতুন কমিটি গঠনের তপশীল ঘোষণা করার বিধান রয়েছে।
অভিযোগ করা হয়, গঠনতন্ত্র মতে গত ১৭ জুলাই নতুন কমিটি গঠনের তপশীল ঘোষণার কথা। কিন্তু এ পর্যন্ত তপশীল তো দূরের কথা, নতুন কৌশলে কিভাবে আগের পদে থেকে যাওয়া যায়- সে বিষয়ে ভিন্ন পন্থায় এগুচ্ছে বর্তমান কমিটির অধিকাংশ সদস্য।
এ ক্ষেত্রে পরিচালনা কমিটির সভাপতি রেজাউল করিম রেজু ও স্কুলের প্রধান শিক্ষক নুরুল কবিরকে দায়ী করেছেন অভিভাবকেরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পরিচালনা কমিটির এক সদস্য জানান, গত ১০ জুন অনুষ্ঠিত সভায় নির্বাচন তফশীল ঘোষণার কথা ওঠে। কিন্তু প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে যান। এখনো নির্বাচনের ব্যাপারে কোন চিন্তা তাদের নেই। বরং পুরাতন কমিটি বহাল রাখার ফন্দি আঁকছেন তারা।
অভিযোগ ওঠেছে, স্কুল ফান্ডের টাকা ব্যাংকে জমা রাখার বিধান থাকলেও প্রধান শিক্ষক তা মানেন না। কমিটির অনুমোদন ছাড়াই স্কুলের ভবন নির্মাণে অর্থ ব্যয় করেছেন। যে কারণে সভাপতি ব্যয় ভাউচারে স্বাক্ষর করছেন না।
বিগত জানুয়ারী থেকে ভর্তি, পূণঃভর্তি, পরীক্ষাসহ বিভিন্ন খাত থেকে আদায়কৃত টাকা ব্যাংকে জমা হয়নি। হিসাব জানেনা কমিটির কেউ। ফেব্রুয়ারীর পর থেকে কোন শিক্ষকের বেতন পরিশোধ হয়নি। এ কারণে শিক্ষকরা প্রধান শিক্ষদের উপর চরম ক্ষুব্ধ বলে জানা গেছে।
তাছাড়া হোস্টেল সুপার পিযুশ কান্তির হিসেব-নিকেশ নিয়েও প্রচুর প্রশ্ন তুলেছে সাধারণ শিক্ষক ও অভিভাবকেরা।
স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র সংসদের সভাপতি খালেদ মোরশেদ হিরু অভিযোগ করেন, নুরুল কবির প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে স্কুলের শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে সম্পর্কে ফাটল সৃষ্টি হয়। উন্নয়নের নামে তিনি অনেক অনিয়ম করেছেন। এখন পকেট কমিটি গঠনের মাধ্যমে তাদের দূর্নীতি ঢাকতে মরিয়া হয়ে ওঠেছেন। গঠনতন্ত্রের আলোকে বর্তমান কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে নতুন কমিটির গঠনের জন্য প্রক্রিয়া শুরুর আহবান জানান প্রাক্তন ছাত্র সংসদের সভাপতি খালেদ মোরশেদ হিরু।
একই সঙ্গে চলমান কমিটির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগসমূহের নিরপেক্ষ তদন্ত করে দূষিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানান।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি রেজাউল করিম রেজু বলেন, প্রধান শিক্ষক নুরুল কবির নিজেই সমস্যা। তিনি নির্বাচন আয়োজনের কথা বললে বেঁকে বসেন। ১০ জুলাইয়ের সভায়ও নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরুর জন্য রেজুলেশন পাশ হয়। কিন্তু এখনো নির্বাচনের কাজ শুরু করেননি প্রধান শিক্ষক। এতে রহস্য আছে মনে হচ্ছে।
তিনি বলেন, নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে আমি নিজেই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)কে অবহিত করেছি। কমিটির কিছু সদস্যের সঙ্গে আঁতাত করে প্রধান শিক্ষক নির্বাচন দিচ্ছেনা মনে হচ্ছে। বিষয়টি তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রধান শিক্ষক নুরুল কবির বলেন, মেয়াদপূর্তির ৯০ দিন আগে তপশীল দিতে হয়, তা ঠিক। আমরা চাইলে সব কিছু পারি। কোন একটা কূল ধরতে হবে আর কি!
তিনি বলেন, প্রয়োজনে নোটিশের তারিখ পিছিয়ে দেখাবো। তাতে সমস্যা নাই। বোঝাপড়ার নৌকা পাহাড়েও চলে!
কমিটির অনুমোদনছাড়া অর্থ ব্যয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক বলেন, সব অনুমোদন আছে। রেজুলেশনও হয়েছে। আমাকে বিপদে ফেলার জন্য চক্রান্ত করছে কিছু লোক।