জসিম উদ্দিন টিপু,টেকনাফ::

টেকনাফে এনজিও সংস্থার প্রতিনিধিরা দিন দিন ইয়াবা পাচারে জড়িয়ে পড়ছেন। নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কর্মরত এনজিও এসিএফ ইন্টারন্যাশনাল, সলিডারিটিস এন্টারন্যাশনাল, আরটিএম ইন্টারন্যাশনাল, এমএসএফ হল্যান্ডসহ বেশ কয়েকটি দেশী-বিদেশী সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐসব সংস্থায় চাকুরীরত স্থানীয় বিপদগামী কিছু যুবকের বিরুদ্ধে শুরু থেকেই ইয়াবা এবং মানব পাচারের অভিযোগ রয়েছে। ইতিমধ্যে এসব সংস্থার বেশ কয়েকজন প্রতিনিধি হাতে নাতে ইয়াবাসহ আটক হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এম্বুলেন্স এবং সংস্থার ব্যবহ্রত গাড়ীতে করে তাদের প্রতিনিধিরা প্রতিনিয়ত ইয়াবা পাচার করছেন।

স্থানীয় লোকজন জানায়, আন্তজার্তিক সংস্থা পরিচয়ী কয়েকটি এনজিও টেকনাফ সীমান্তে মাদক পাচারে বেপরোয়া হয়ে উঠছে। টেকনাফে রোহিঙ্গা ক্যাম্প কেন্দ্রীক এনজিও সংস্থার প্রতিনিধিদের ইয়াবা ও মানবপাচারসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ার সংখ্যা দিন দিন আশংকাজনকহারে বাড়ছে। অভিযোগ রয়েছে, এসব সংস্থার প্রতিনিধিরা লোক দেখানো মাদক বিরোধী কর্মকান্ড পরিচালনা করলেও গোপনে আলিশান গাড়ীতে করে যত্রতত্র ইয়াবা পাচার করছেন। ক্যাম্পে কর্মরত এনজিও সংস্থার বেশ কয়েকজন প্রতিনিধি সিবিএনকে জানায়, ইয়াবা পাচারে জড়িত এনজিও সংস্থার প্রতিনিধিদের সাথে স্থানীয় কতিপয় মাদক পাচারকারীর সখ্যতা রয়েছে। ক্যাম্পের আশে পাশের মাদক ব্যবসায়ী এবং পাচারকারীর সাথে আঁতাতের মাধ্যমে ইয়াবা পাচার করে এনজিও সংস্থার এসব প্রতিনিধি রাতারাতি অঢেল টাকার মালিক বনে গেছেন।

অনুসন্ধানে জানাগেছে, মুচনী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বি ব্লকের মাষ্টার রশিদ উল্লাহ, নজির আহমদ, মালয়েশিয়া ফেরত ছৈয়দ আজিম, এইচ ব্লকের মো: আলম ও লেদা অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বেশ কয়েকজন ইয়াবা ডনের হাত বদল করে এনজিও কর্মীরা সহজেই কক্সবাজার হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রামে ইয়াবা পাচার করছেন। খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, ইতিমধ্যে বিদেশী এনজিও সংস্থা সলিডারিটিস ইন্টারন্যাশনালের ড্রাইভার আবুল হোছন তিন হাজার আটশত পিচ ইয়াবাসহ আটক হন। এমএসএফ হল্যান্ডের নার্স (ধাত্রী) শিখা রাণী এম্বুলেন্সে করে ইয়াবা পাচারের সময় মরিচ্যা চেকপোষ্টে বিজিবির হাতে আটক হয়েছেন। এসিএফ ইন্টারন্যাশনালের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা: দেবাশীষ রঞ্জন বিপুল পরিমাণ ইয়াবাসহ উখিয়ায় গ্রেপ্তার হন। গত মাসের শেষের দিকে আরটিএম ইন্টারন্যাশনালের ড্রাইভার বাদশা মিয়া এম্বুলেন্সে করে ইয়াবা পাচারের সময় পনের হাজার পিচ ইয়াবা বড়িসহ উখিয়া থানা পুলিশ হাতে নাতে আটক করেন। এছাড়া এনজিও সংস্থা এসিএফের আব্দুল মাবুদ, আবু ছাবের, রিদুওয়ানুল হক রিমু, এমএসএফের গোলাম আকবর, নয়াপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অফিস সহকারী আব্দুল মজিদ, এমএসএফ হল্যান্ড, সলিডারিটিস ইন্টারন্যাশনাল, আরটিএম ইন্টারন্যাশনালসহ বেশ কয়েকটি এনজিও সংস্থার প্রতিনিধিরা বিভিন্ন কলা কৌশলে প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে নীরবে নিস্তব্ধে ইয়াবা পাচার করছেন। উখিয়া-টেকনাফে নিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কর্মরত এনজিও সংস্থা আরটিএম ইন্টারন্যাশনালের ফিল্ড কো-অর্ডিনেটর নাসরিন আক্তার মনিকা জানান, আসলে করার কিছুই নেই। এম্বুলেন্সে করে ইয়াবা পাচারের সময় যে ড্রাইভারকে আটক করেছে। সে দীর্ঘ ১১ বছর ধরে আমাদের সাথেই কাজ করছে। তাকে আমরা সাথে সাথে বরখাস্ত করে দিয়েছি। এনজিও সংস্থার প্রতিনিধিরা ইয়াবা পাচারে জড়িয়ে পড়ার বিষয়টি খুবই দু:খজনক জানিয়ে নারী এই উন্নয়ন কর্মী আরো জানান, আমি নিজেও এখন ভয়ের মধ্যে আছি। টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: মাইন উদ্দিন খাঁন জানান, এনজিও হোক যেই হোক মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশের অবস্থান সদা জিরো টলারেন্স। এম্বুলেন্সে বলেন তাদের আলিশান গাড়ীতে বলেন কোন কিছুতেই ইয়াবা পাচারের সুযোগ নেই। খবর পেলেই কিন্তু তাদের হাতে নাতে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে। এনজিও কর্মীরা মাদক পাচারে জড়িয়ে পড়ার বিষয়টি খুবই দু:খজনক জানিয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদ হোসেন ছিদ্দিক বলেন, উপজেলায় কর্মরত এনজিওদের এ বিষয়ে সর্তক করা হবে। অভিযোগ পেলে তিনি মাদক এবং অপরাধে সংশ্লিষ্ট এনজিও কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান।