ডেস্ক নিউজ:
ঢাকাই ছবির নন্দিত চিত্রনায়ক চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার ইমন ওরফে সালমান শাহ। ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মৃত্যু হয় তার। রহস্যজনক এ মৃত্যুর ঘটনাকে আত্মহত্যা উল্লেখ করে সে সময় একটি অপমৃত্যুর মামলা করেন তার পরিবার। তবে পরিবারের দাবি, জোর করে তাদের অপমৃত্যুর মামলা করতে বাধ্য করা হয়।

সালমান শাহ আত্মহত্যা করুক আর হত্যারই শিকার হন, ২১ বছরেও জানা যায়নি কিছু রহস্যজনক প্রশ্নের উত্তর। তৎকালীন একটি বাংলা পত্রিকার অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের পর প্রশ্নগুলো তোলা হয়েছিল। তবে ২১ বছর পর তদন্তকারী কোনো সংস্থা এসব প্রশ্নের উত্তর জানাতে পারেনি।

দৈনিক পত্রিকার সেসব প্রশ্নগুলো ছিল

চেতনানাশক এ্যাম্পুল JASOCANE-A 20mgসহ ভেজা কাপড়-চোপড় তার ঘরে থাকা লাগেজের মধ্যে এল কেমন করে?

সালমানের সহকারী আবুল, গৃহকর্মী ডলি ও মনোয়ারা কেন সালমানের স্ত্রী সামিরার পরিবারের হেফাজতে?

কেন দ্রুত সালমানের মৃতদেহ সিলেটে নিয়ে যাওয়া হল? দাফনে স্ত্রী সামিরা কেন সিলেটে যায়নি?

কে এবং কেন সেসময় সালমান-শাবনূরের ‘বিয়ের স্ক্যান্ডাল’ ছড়িয়েছে?

ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধারকৃত সুইসাইড নোটে ‘আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়’। সালমানের বাবা-মা’র দাবি এই চিঠিটি সালমানের লেখা নয়, বিষয়টি যাচাই বাছাই হয়েছিল কি না?

সালমানের দেহ ফ্যান থেকে নামানোর পর সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নেয়া হয়নি কেন? কাউকে সাক্ষী না রেখেই কেন ফ্যান থেকে দড়ি কেটে সালমানের মরদেহ নামানো হয়েছে?

পুলিশ, সিআইডি, র‍্যাব। তদন্তকারী কোন সংস্থার কাছেই এসব প্রশ্নের স্পষ্ট উত্তর মেলেনি। তবে পুলিশ আদালতকে জানিয়েছে, সালমানের ইস্কাটনের বাড়িতে যাওয়ার আগে অনেক আলামত নষ্ট হয়েছে। আর বাকি তদন্ত সংস্থাগুলো ঘটনাস্থলে গিয়ে কিছুই পায়নি।

সর্বশেষ ২০১৬ সালে এই মামলার দায়ভার দেয়া হয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই)। এবিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা এসএস আবুল কালাম আজাদ জাগো নিউজকে বলেন, ‌‘পিবিআই যে মামলাটি তদন্ত করছে সেটি একটি অপমৃত্যুর মামলা। এই মামলায় সালমান শাহ ‘আত্মহত্যা করেছেন’ নাকি ‘আত্মহত্যা করেন নাই’ সেবিষয়টি প্রমাণের চেষ্টা করা হবে। এছাড়াও গত ২০ বছর ঘটনাটি কয়েক পর্যায়ে তদন্ত হয়েছে। বর্তমানে এটি পিবিআই তদন্ত করছে। অনেক আলামতও নষ্ট হয়েছে। যে কারণে আমাদের তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে নিতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে।

এর আগে ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ইস্কাটনের নিজ বাসায় ফ্যানে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায় সালমানের মরদেহ।

সালমানের বাবার দায়ের করা অপমৃত্যু মামলায় ১৯৯৭ সালের ৩ নভেম্বর আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় সিআইডি। চূড়ান্ত প্রতিবেদনে সালমান শাহের মৃত্যুকে ‘আত্মহত্যা’ বলে উল্লেখ করা হয়। ২৫ নভেম্বর ঢাকার সিএমএম আদালতে ওই চূড়ান্ত প্রতিবেদন গৃহীত হয়। সিআইডির প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে তার বাবা কমর উদ্দিন আহমদ চৌধুরী রিভিশন মামলা করেন। ২০০৩ সালের ১৯ মে মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে পাঠান আদালত। এরপর প্রায় ১২ বছর মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে ছিল।

২০১৪ সালের ৩ আগস্ট ঢাকার সিএমএম আদালতের বিচারক বিকাশ কুমার সাহার কাছে বিচার বিভাগীয় তদন্তের প্রতিবেদন দাখিল করেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ইমদাদুল হক। এ প্রতিবেদনে সালমান শাহের মৃত্যুকে ‘অপমৃত্যু’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

২০১৪ সালের ২১ ডিসেম্বর সালমান শাহের মা নীলুফার চৌধুরী ছেলের মৃত্যুতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেন এবং বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি দেবেন বলে আবেদন করেন।

পরে ২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি নীলুফার চৌধুরী ঢাকা মহানগর হাকিম জাহাঙ্গীর হোসেনের আদালতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনের নারাজির আবেদন দাখিল করেন। নারাজি আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ ১১ জন তার ছেলে সালমান শাহের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন। আদালত নারাজি আবেদনটি মঞ্জুর করে র‍্যাবকে তদন্তভার প্রদান করেন।

মামলাটিতে র‍্যাবকে তদন্ত দেয়ার আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ গত বছরের ১৯ এপ্রিল মহানগর দায়রা জজ আদালতে একটি রিভিশন মামলা করেন। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বিশেষ জজ-৬ এর বিচারক ইমরুল কায়েস রাষ্ট্রপক্ষের রিভিশনটি মঞ্জুর করেন এবং র‍্যাব মামলাটি আর তদন্ত করতে পারবে না বলে আদেশ দেন। ঘটনার ২০ বছর পর আলোচিত ওই মামলার তদন্তভার দেওয়া হয় পিবিআইকে।

এরপর গেল সোমবার (৭ আগস্ট) আমেরিকা প্রবাসী রাবেয়া সুলতানা রুবি একটি ভিডিও বার্তায় প্রকাশ করেন, সালমানকে খুনই করা হয়েছিলো, তিনি আত্মহত্যা করেননি। তার এই ভিডিও হৈ চৈ ফেলে দিয়েছে দেশজুড়ে। পিবিআই থেকেও রুবির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হচ্ছে। দেশের মানুষও আশায় বুক বেঁধেছেন, হয়তো এবার খুলতে পারে সালমান মৃত্যুর রহস্যজট।