ইমাম খাইর, সিবিএন:
মাঠে কোন ধরণের অস্তিত্ব নেই এমন লবণ মিলের নামেও লবণ আমদানীর পারমিট চূড়ান্ত পর্যায়ে বলে জানা গেছে। ৯ আগষ্ট এ তালিকা অনেকটা চূড়ান্ত হয়ে গেছে। যে কোন সময় পারমিটযোগ্য মিলের নাম প্রকাশ করতে পারে বানিজ্য মন্ত্রণালয়ের আমদানি রপ্তানী প্রধান নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়। তথ্য সূত্র কক্সবাজার লবণমিল মালিক সমিতি।
তবে, এ তালিকায় বিসিকের জরিপ অনুযায়ী মাঠে নেই এমন অন্তত ৭১টি মিলের নাম অন্তর্ভূক্ত হতে পারে বলে আশংকা প্রকৃত মিল মালিকদের।
ইসলামপুরের এল.কে সল্ট ক্রাসিং ইন্ডাস্ট্রিজ এর মালিক ও কক্সবাজার লবণ মিল মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি মাস্টার আবদুল কাদের বলেন, চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা চৌধুরী সল্ট, বদরখালীর ওয়াজেদিয়া সল্ট, মাহমুদা চূর্ণবিচূর্ণ কারখানা, মহেশখালীর হোয়ানক মোহরাকাটা মোস্তাক আহমদ চৌধুরী সল্ট ক্রাসিং ইন্ডাস্ট্রিজ, মাতারবাড়ীর আল মোস্তফা সল্ট ইন্ডাস্ট্রিজ, নিউ বিসমিল্লাহ সল্ট ক্রাসিং মিল, টেকনাফের লেঙ্গুরবিল ছোট হাজিরবাগানের আল মক্কা সল্ট ক্রাসিং মিলসহ বেশ কয়েকটি অস্তিত্বহীন মিলের নামে পারমিট অনেকটা চূড়ান্ত পর্যায়ে।
তিনি বলেন, ভূয়া মিল মালিকদের একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পারমিট তদবির চূড়ান্ত করা হয়েছে। এসব অস্তিত্বহীন লবণমিলের কারণে প্রকৃত মিলাররা ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে তিনি মনে করেন।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর বৈরী আবহাওয়ার কারণে কক্সবাজার, মহেশখালী, চকরিয়া, খুটাখালীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় লবণ উৎপাদন কম হয়েছে। এ কারণে চলতি বছর পণ্যটির ঘাটতি ধরা হয়েছে পাঁচ লাখ টন। ঘাটতি মেটাতে সরকার সমপরিমাণ লবণ আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়। গত ৫ জুলাই বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ-সংক্রান্ত অনুমতি প্রদান করে। ১৬ জুলাই বিসিক ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নিবন্ধিত সচল মিল মালিকদের আওতায় পণ্যটি আমদানির জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সেই মোতাবেক সচল মিলগুলোর তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠায় বিসিক।প্রতিষ্ঠানটির প্রকল্প পরিচালক সফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, বাংলাদেশের লবণ মিলগুলো সচল আছে কিনা, সেটি প্রতি মাসে মনিটরিং করে বিসিক। ১৫-২০ দিন আগেই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়েয় চাহিদা অনুযায়ী ছয় মাস ধরে সক্রিয় আছে এমন ১৯৩টি মিলের তালিকা পাঠানো হয়েছে।
পণ্যটির আমদানি প্রক্রিয়ায় শিল্প মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সিন্ডিকেটের ভূমিকাকে দায়ী করছেন ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকরা।
কক্সবাজার লবণমিল মালিক সমিতির সভাপতি সামশুল আলম আজাদ বলেন, দেশের সব লবণ মিল নিয়মিতভাবে মনিটরিং করে বিসিক। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে শিল্প মন্ত্রণালয়ে সক্রিয় মিলের যে তালিকা দেয়া হয়েছে, তার ভিত্তিতেই আমদানির বরাদ্দপত্র দিতে হবে।
তিনি বলেন, শেষ সময় পর্যন্ত ২৬৪টি মিলের নামে পারমিটের আবেদন জমা পড়েছে। আর কক্সবাজার সদরের ইসলামপুরসহ পুরো দেশে বিসিকের তালিকা অনুযায়ী মোট লবণ মিল রয়েছে ১৯৩টি।
এর বাইরেও মহেশখালীর মাতারবাড়ীর এক ব্যক্তি ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের এক যুগ্ম-সচিব যৌথ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে আরো অন্তত ৪০ টি মিলের নামে আবেদন জমা পড়েছে। সব মিলিয়ে এবার লবণ পারমিট পেতে বিশাল একটি সিন্ডিকেট তৎপর রয়েছে। তাদের কারণে প্রকৃত মিলাররা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। প্রভাব পড়বে মাঠে।এ প্রসঙ্গে বিসিক লবণ শিল্প উন্নয়ন প্রকল্পের উপমহাব্যবস্থাপক মোঃ আবছার উদ্দিন বলেন, প্রকৃত লবণমিলের বিষয়ে আমাদের কাছ থেকে কোন তালিকা চাওয়া হয়নি। উপর থেকে তালিকা করে পারমিট দেয়া হয়েছে।
পারমিট পেতে ক্রাইটেরিয়া অনুরণ বাধ্যতামূলক কিনা? জানতে চাইলে তিনি বলেন, উর্ধতনমহল চায়লে সব পারেন। এ কারণে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে আলাদা ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করে লবণমিলের তালিকা করেছে। মনে হয়, সেই তালিকা অনুসারে পারমিট পাচ্ছে।
মূলতঃ সরকারের লবণ আমদানির সিদ্ধান্তের পর থেকে অস্তিত্বহীন লবণমিলের নামে পারমিত পেতে কারসাজি শুরু করে একটি চক্র। কোন ধরণের লবণ উৎপাদনে নেই; বছরের অধিকাংশ সময় বন্ধ থাকে, এমনকি বিসিকের তালিকায় নেই এমন মিলের নামেও আবেদন পড়ে।
অভিযোগ পাওয়া গেছে- বিসিককে পাশ কাটিয়ে চিহ্নিত সিন্ডিকেটটি তাদের পারমিট নিশ্চিত করতে প্রতি মিল থেকে নিয়েছেন নূন্যতম দেড় লাখ টাকা।
অন্য একটি সুত্রের দাবী, বিসিককে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে লবণ আমদানির আবেদন ফাইল সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জমা করেছে অস্তিত্বহীন লবণমিল মালিকরা।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) কক্সবাজারের লবণ শিল্প উন্নয়ন প্রকল্প কার্যালয় সূত্র জানায়, চলতি বছরে দেশে লবণের চাহিদা ১৫ দশমিক ৭৬ লাখ টন। এর বিপরীতে গত জুনে শেষ হওয়া মৌসুমে উৎপাদন হয়েছে ১৩ দশমিক ৬৪ লাখ টন। এ হিসাবে চাহিদার তুলনায় লবণের ঘাটতি আছে ২ লাখ ১২ হাজার টন। কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের বাঁশখালী (আংশিক) আঞ্চলের ৬৫ হাজার একর জমিতে লবণ উৎপাদন হয়।
উল্লেখ্য, কক্সবাজার সদরের বিসিক শিল্প নগরী ইসলামপুর কেন্দ্রিক ৩৫ মিলসহ জেলায় ছোট বড় মিলে গড়ে উঠেছে অন্তত ৫০ টি লবণ কারখানা।