বিনোদন ডেস্ক:
সাবেক স্ত্রী সামিরাই কি নায়ক সালমান শাহ’র খুনি-এ প্রশ্ন এখন বারবার ঘুরপাক খাচ্ছে সবার মধ্যে। রাবেয়া সুলতানা রুবি নামের যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী নারী বারবার ভিডিওচিত্রে সামিরাকে ঘিরেই কথা বলছেন। প্রথম ভিডিওতে তার চাইনিজ স্বামী এ খুনের সঙ্গে জড়িত বললেও পরে অন্য এক বার্তায় তিনি বাংলাদেশি তদন্তকারী সংস্থাকে ঘিরে কথা বলছেন। এতে ধারণা করা হচ্ছে রুবি কারও হুমকির মধ্যে রয়েছেন। আর এ কারণেই হয়তো দ্বিতীয় ভিডিও বার্তায় এলোমেলো কথা বলছেন।
জনপ্রিয় চলচ্চিত্র নায়ক সালমান শাহকে খুন করা হয়েছে- ভিডিওতে এমন দাবি করে তোলপাড় ফেলে দেয়া এই মামলার অন্যতম আসামি রাবেয়া সুলতানা দ্বিতীয় ভিডিওতে বলেছেন, তার ওই কথা বলা উচিত হয়নি।
গত সোমবার প্রথম ভিডিও প্রকাশ হয় যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী রুবির। আর দ্বিতীয় ভিডিওটি প্রকাশ হয় গতকাল। আগের ভিডিওতে রুবি জোরের সঙ্গেই বলেছিলেন, সালমান শাহ খুন হয়েছে। এ খুনের সঙ্গে নিজের স্বামী, ভাই, সালমান শাহের স্ত্রী সামিরা চৌধুরী জড়িত ছিলেন বলে দাবি করেন তিনি। বলেছিলেন, তাকেও খুন করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আর এই মামলার তদন্ত যেন চালু থাকে সেই অনুরোধ করে আদালতে সাক্ষ্য দেয়ার কথাও জানিয়েছিলেন রুবি। ওই ভিডিওতে তিনি এমনও বলেন যে, তিনিই একমাত্র জীবিত সাক্ষী যিনি কি না সবই জানেন। তবে পরের ভিডিওতে আগের অবস্থান থেকে সরে এসে রুবি বলেন, ‘আমি কিন্তু কোন ইনভেস্টিগেশনের মধ্যে বলব না যে এটা আত্মহত্যা, না হত্যা এটা আমার বলা উচিত না।’
আগেরবার কেন এমন বক্তব্য দিয়েছেন, সেটার কারণ বর্ণনা করে রুবি বলেন, ‘আমি আগেরবার যেটা বলেছি ভিডিও করে, সেটা আমার রং ছিল, আমি ইমোশনাল ছিলাম বেশি, যার জন্য আমি বলেছি যে এটা হত্যা।’
রুবির প্রথম ভিডিওটি ছিল দুই মিনিট ৫৯ সেকেন্ডের। আর পরের ভিডিওটি ২৫ মিনিট ৩৪ সেকেন্ডের। এই ভিডিওতে তিনি একাধিকারবার অসংলগ্ন কথা বলেছেন। একবার বলেছেন, ওটা খুন বলা উচিত হয়নি। আবার এটাকে খুন সন্দেহ করে সালমান শাহের স্ত্রী সামিরার দিকে পরোক্ষভাবে আঙ্গুল তুলেছেন, তিনি কেন সামনে এসে কথা বলেন না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন। বলেছেন, স্বামীর বাসায় থাকলেও এখন তার সঙ্গে সম্পর্ক নেই। জানান, তার নিজের ছেলে তাকে বলেছেন, ‘তুমি কেবল ঝামেলা করো।’
একবার বলেছেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রে তার বাসার সামনে মদের দোকানে পড়ে থাকতেন, গাঁজা খেতেন, আরেকবার বলেছেন, তিনি সৎ বাবার মেয়ে, সৎভাবে জীবনযাপন করেছেন।
সালমান শাহের মৃত্যুকে কেন হত্যা বলেছেন, সেই কারণও এই ভিডিওতে একাধিকবার বর্ণনা করেছেন। আবার বলেছেন, ওটা হত্যা বলার কারণ, সেদিন তার মাথা ঠিক ছিল না।
প্রথম ভিডিওটি প্রকাশের পর সালমান শাহের মৃত্যুর মামলা তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন-পিবিআই এ নিয়ে কথা বলেছে। জানিয়েছে, রুবির সঙ্গে যোগাযোগ করবে তারা। তার এই বক্তব্যে এই মৃত্যু রহস্যের জট খোলার কথাও বলেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা।
রুবি পরের ভিডিওতে জানান, পিবিআই খুঁজছে জেনে নিউইয়র্কে কনসাল জেনারেলের অফিসে গেছেন একাধিকবার। কিন্তু চেষ্টা করেও তার সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়নি।
এই ভিডিওতে রুবির বক্তব্যে আবার ধোঁয়াশায় পড়তে হতে পারে পিবিআইকে। কারণ এই ভিডিওতে রুবি বলেন, ‘কেমন করে খুন হয়েছে বা আত্মহত্যা হয়েছে, এটা নিয়ে আর কোন কথা বলব না। ওই দিন মাথা ঠিক ছিল না, ভীত ছিলাম, এই জন্য বলেছি, ওটা হত্যা। আর নীলা ভাবির কথা চিন্তা করেও।’
রুবি বলেন, ‘আমি হত্যা বা আত্মহত্যার কোন সাক্ষী ছিলাম না, আমি কিছুই দেখিনি। আমি শুধু ওখানে গেছি আর সামিরার কা-কারখানা দেখেছি। যা কিছু আমি জানি, সব কিন্তু সামিরার মুখ থেকে শোনা। বাইরের কোন মানুষের কাছ থেকে কিছু শুনিনি। সব কিছু শুনেই আমি আত্মহত্যা বলেছি।’
নতুন ভিডিওতে সালমান শাহের মৃত্যুর পর তার স্ত্রী সামিরার সঙ্গে দেখা হওয়া ও নানা ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরে রুবি স্পষ্টতই তার দিকে অভিযোগের তীর ছুড়েছেন। জানিয়েছেন, তার ছেলেকে সামিরা সেদিন কাপড়ে বেঁধে কিছু এটা দিয়েছিলেন। তবে সেটি কত বড়, সেখানে কী ছিল তাও তিনি জানেন না।
রুবি বলেন, ‘প্রথম কথা হচ্ছে, আমার ছেলেকে কেন সামিরা একটা জিনিস দিল আমাকে না জানিয়ে, যেটা ওদের বাসা থেকে আমার বাসার ছাদে ফেলা হলো। জিনিসটা যে কী ছিল, কত বড় ছিল এটা আমার কোন ধারণা নেই।’
সালমান শাহের মৃত্যুর কথা শুনে তার বাসায় যাওয়ার পর কী দেখেন সেটার বর্ণনা দেন রুবি। বলেন, ‘বাসার ভেতরে ঢুকে প্রথমেই দেখলাম ডাইনিং টেবিল আর কিচেনের পাশেই সামিরা। আমারে দেখেই চিৎকার করে বলল, রুবি আন্টি, ইমন মারা গেছে, ইমন মারা গেছে, জিহ্বা বের হয়ে গেছে।’
সালমান শাহের স্ত্রী সামিরা চৌধুরী কেন সামনে এসে কথা বলছেন না, সেই প্রশ্ন রাখেন রুবি। বলেন, ‘আমার প্রশ্ন, সামিরাকে কেন সামনে আনে না। ওর বাবা কেন ওর হয়ে কথা বলে। ওর হাজব্যান্ড কেন কথা বলে এখন, সামিরা কেন কথা বলে না। সামিরা কেন সামনে আসে না ও কি ভিআইপি? বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর চেয়ে ওপরে যে ও কথা বলতে পারে না? জনগণের সামনে আসতে পারে না? কেন ওর ভয়? কারণ, কথা বলতে পারবে না তো, জবাব নাই তো। সবাই মিলে দাবি করেন না কেন আপনারা যে সামিরা কেন সামনে আসে না। সামিরা সামনে আসলেই চলে। এত বছরে তো কেউ দেখে না ওদের।’
সামিরাকে সন্দেহ করার কয়েকটি কারণ বলেন রুবি। বলেন, ‘এই জন্যই আমি বলছি যে, এটা খুন। যেহেতু সামিরা হাসব্যান্ড মারা যাওয়ার সময়, যখন হাসব্যান্ড মারা গিয়েছে, হসপিটালে না যেয়ে তার গয়নাগাটি বা কোন কিছু, আমি জানি না কি ছিল কাপড়ের মধ্যে বাধা, এইগুলো নিয়ে ব্যস্ত ছিল।’
রুবি আরও বলেন, ‘এটা হত্যা কি আত্মহত্যা, এটা তো ঠিকমতো যদি সামিরাকে নিয়ে বা সামিরার বাবাকে নিয়ে যদি জিজ্ঞেস করা হয়, তাহলে ঠিকই বের হবে।’
রুবি জানান, সালমান শাহের মৃত্যুর পর তার স্ত্রী সামিরা তাকে জানান একটি সুইসাইড নোট রেখে গেছেন জনপ্রিয় এই চলচ্চিত্র নায়ক। আর ওই নোটটা আছে জনৈক আবুলের কাছে। তবে এই আবুল কে তা তিনি জানতেন না।
আগের ভিডিওতে রুবির বক্তব্য:
সোমবার অনলাইনে ছাড়া ভিডিওতে রুবি বলেন, ‘সালমান শাহ আত্মহত্যা করে নাই, তাকে খুন করা হইছে।’ সালমান শাহের মাকে উদ্দেশ্য করে রুবি বলেন, ‘প্লিজ কিছু একটা করেন, কিছু একটা করেন।’
‘সালমান শাহ আত্মহত্যা করে নাই, সালমান শাহ খুন হইছে। আমার হাজব্যান্ড এইটা করাইছে আমার ভাইরে দিয়ে। আমার হাজব্যান্ড করাইছে, এইটা সামিরার ফ্যামিলি করাইছে আমার হাজব্যান্ডরে দিয়ে, সবাইরে দিয়ে সব চাইনিজ মানুষ। সালমান শাহ আত্মহত্যা করে নাই, শালমান শাহ খুন হইছে।’
নিজের নাম প্রকাশ করে ভিডিওতে বলা হয়, ‘আমি রুবি, এখানে ভেগে আসছি, আমি ভেগে আসছি, এই কেস যেন না শেষ হয়। আমি যেভাবে পারি, ঠিকমতো যেন আমি সাক্ষী দিতে পারি। আপনারা আমার জন্য দোয়া করেন।’
তাকেও খুন করার চেষ্টা করা হচ্ছে জানিয়ে রুবি বলেন, ‘আমারেও খুন করার চেষ্টা করা হচ্ছে, দয়া করে আমার জন্য দোয়া করেন। আমি ভালো নাই, আমি কী করব আমি জানি না, এতটুক জানি যে সালমান শাহ ইমন আত্মহত্যা করে নাই। ইমনরে সামিরা, আমার হাজব্যান্ড ও সামিরার পুরো ফ্যামিলি সবাই মিলে খুন করছে। প্লিজ দয়া করে কিছু করেন।’
‘এরা কী মানুষ, পুরা চাইনিজ কমিউনিটি আপনারা জানেন না। আমি পুরা ভেগে আসছি এখানে, কোন রকমে। দয়া করে একটুখানি কারোরে জানান। কারোরে জানান যে, এটা আত্মহত্যা না, এটা খুন। খুন হইছে। আমার ছোট ভাই রুমিরে দিয়া খুন করানো হইছে। রুমিরেও খুন করা হইছে। আমি জানি না রুমির কবর কোথায় আছে। রুমির যদি কবর থেকে তুলে লাশ তুলে যদি ঠিকমতো আবার পোস্টমর্টেম করে, তাহলে দেখা যাবে যে ওরা গলা টিপে মাইরা ফেলছে।’
সালমান শাহের মা নীলা চৌধুরীকে উদ্দেশ্য করে ভিডিওতে বলা হয়, ‘ভাবি, আপনার ছেলেরে খুন করা হইছে। আমার যা করার আমি করব, আমি ভেগে আছি ভাবি, নাইলে আমারেও মেরে ফেলত এরা সবাই মিলে। লুসি, আমার হাজব্যান্ড জন, সবাই মিলে আমার বাচ্চাটা, আমার বাচ্চা রিকি আর আমার জানের ওপর অনেক জিনিস আছে ভাবি। দয়া করে কিছু করেন ভাবি, কিছু করেন, কিছু করেন। যেখানেই যান ইনভেস্টিগেশন করেন। এটা খুন ছিল, ইমন আত্মহত্যা করে নাই। সালমান শাহ আত্মহত্যা করে নাই, সালমান শাহ আত্মহত্যা করে নাই ভাবি, সালমান শাহ আত্মহত্যা করেনাই। আপনার ছেলে আত্মহত্যা করে নাই, আপনার ছেলেরে খুন করান হইছে। আমার বাপরেও মনে হয় মাইরা ফেলছে ভাবি, আমি জানি না, আমার ভাইটারেও মাইরা ফেলছে মনে হয়।’
বাংলা চলচ্চিত্রে তোলপাড় ফেলা নায়ক সালমান শাহ ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মারা যান। তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে পুলিশকে জানান তার স্ত্রী সামিরা। কিন্তু সালমান শাহের পরিবার একে হত্যা বলে আসছিল।
তবে গত দুই দশকেও এই মামলার রহস্য উদঘাটন হয়নি। পুলিশ দুই দফা ময়নাতদন্ত করে একে আত্মহত্যাই বলেছিল। কিন্তু নারাজি আবেদন করেছে সালমান শাহের পরিবার। মামলাটির বিচারবিভাগীয় তদন্তও হয়েছিল। এখন মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন-পিবিআইয়ে রয়েছে। সম্প্রতি মামলাটি আবার পুনরুজ্জীবিত করা হয়েছে।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।