মোঃ নাজিম উদ্দিন, দক্ষিণ চট্টগ্রাম প্রতিনিধি :
চট্টগ্রাম শাহ আমানত সেতুর টোল প্লাজা থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব দেড়শ কিলোমিটার। পুরো মহাসড়ক জুড়েই অসংখ্য ছোট-বড় খানা-খন্দে ভরা। পর্যটন নগরী কক্সবাজার ও বান্দরবানে প্রতিদিন দেশ-বিদেশের হাজারও পর্যটকের আগমন হওয়ায় এ মহাসড়কটি গুরুত্বপূর্ণ হলেও বছরের বেশি ভাগই দেখা যায় সড়কের বেহাল দশা। বছরে একাধিক স্থানে একবার করে নামমাত্র সংস্কার হলেও নি¤œমানের কাজ হওয়ায় বেশিদিন টিকেনা সড়ক। ভারি বর্ষণ হলেই সড়কে জমে যায় পানি। পানি জমার ফলে একাধিক স্থানে ছোট বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। এতে সড়কের পাশে চলাচল করতে গিয়ে যানবাহনের চাকা থেকে ছিটকে পড়া কাঁদাযুক্ত পানিতে নাস্তানাবুদ হয় পথচারীরা। তবে সড়কটির বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চন্দনাইশ, বিজিসি ট্রাস্ট, বাগিচার হাট, দোহাজারী, সাতকানিয়ার নয়াখাল, কেরানীহাট, চার বটতল, মিঠাদিঘী, রাজঘাটা, ও লোহাগাড়ার, নোয়াপাড়া, পদুয়া, তজুমন্সির গ্যারেজ, বন্ধন কমিউনিটি সেন্টার, পুনাণ বিওসি, চুনতি বাজার, চুনতি ফরেস্ট অফিসসহ ৫০ কিলোমিটার দূরত্বের অংশে। ফলে যাত্রী, পথচারী, যানবাহনের চালকরা গুরুত্বপূর্ণ এ মহাসড়কটিতে চরম হতাশা ও উদ্বেগের মধ্যদিয়ে চলাচল করছে। সড়কে খানা-খন্দেকে ভরে যাওয়ায় প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছে যানবাহনগুলো। এতে অকালে ঝরে যাচ্ছে হাজারও তাজা প্রাণ। পঙ্গুত্ব বরণ করছে অনেকেই।
মোটরসাইকেল আরোহী মো. নোমান তালুকদার জানান, মহাসড়কে এতোগুলি গর্ত, দেখেই মনে হয় এসবের কোন কর্তৃপক্ষ নাই। একটু বৃষ্টি হলেই কেরানীহাট থেকে আমিরাবাদ যেতে অভর্নণীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ধুলো-বালি আর কাঁদা পানিতে জামা-কাপড় নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়া গর্তে পড়ে গাড়িও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সাতকানিয়ার মাদার্শার বাসিন্দা এনামুল হক বলেন, প্রতিবছর চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের একাধিক স্থান সংস্কারের নামে সরকারের যে বিপুল পরিমাণ টাকার ব্যয় হচ্ছে তার হিসাব আছে? নি¤œমাণের বিটুমিন ও পাথর দিয়ে সংস্কার হওয়ায় বেশিদিন টিকেনা এ সড়ক। এছাড়া বেশি গর্ত হলে তালি-পট্টিও দেয়া হয়। এসব তালি-পট্টি সর্বোচ্চ মাস খানেক ঠেকে। এর পর আগের বেহাল চেহারায় ফিরে যায় মহাসড়ক। প্রাইভেট কার চালক মোস্তাক আহমদ বলেন, কেরানীহাট থেকে পটিয়া পর্যন্ত সড়কের নাজুক অবস্থা। শহর পর্যন্ত এই ৫০ কিলোমিটার মহাসড়ক পাড়ি দিয়ে চট্টগ্রামে পৌঁছতে আগে এক ঘন্টা লাগতো। এখন দুই ঘন্টাইও পৌঁছাতে পারিনা সড়কে অসংখ্য গর্তের কারণে। ব্যবসায়ীক কাজে সপ্তাহে কয়েক বার কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামে যাতায়াত করেন কক্সবাজারের স্টীল ব্যবসায়ী বাসু দাশ। তিনি বলেন, মহাসড়কের অধিকাংশ এলাকাজুড়ে অসংখ্য খানা-খন্দক ভরা। এবারের বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকেই সড়কের এমন অবস্থা দেখে আসছি। বাসে করে চট্টগ্রামে গেলে গর্তে ভরা এলাকা পাড়ি দেয়ার সময় মনে হয় ভুমিকম্প হচ্ছে। গত বুধবার এ মহাসড়ক দিয়ে চট্টগ্রামে গিয়েছিলাম। বেশ কিছু অংশে সড়কের বেহাল দশা দেখে মনে হলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ঘুমাচ্ছে। হানিফ এন্টারপ্রাজের চালক জামিলুর রহমান বলেন, সড়ক বেহাল দশা হওয়ায় এ মহাসড়কে যানবাহন নিয়ে আসতে মন চাই না। গত কয়েক মাস ধরে দেখছি গর্তে ভরা এ মহাসড়। গাড়ির ঝাকুনিতে মাথা ব্যথা শুরু হয়ে যায়।
দোহাজারী সড়ক ও জনপদ বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. কুতুব উদ্দিন বলেন, মইজ্জার টেক থেকে চুনতী পর্যন্ত পুরো রাস্তায় অসংখ্য গর্ত হয়েছে। একদিকে মেরামত হলে, বৃষ্টির কারণে অন্যদিকে সড়কে গর্ত সৃষ্টি হচ্ছে। এ বৃষ্টির মধ্যে সড়ক মেরামত করে কোনো ভাবেই টিকিয়ে রাখা যাচ্ছে না। শীত মৌসুমে ট্রাকে করে লবণ পরিবহন ও অতিরিক্ত যানবহনের চাপে সড়কটি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
দোহাজারী সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী তোফায়েল মিয়া বলেন, মহাসড়কের ৭৭ কিলোমিটার অংশে প্রতি বছর একেক স্থানে গড়ে ১০ কিলোমিটার করে সংস্কার কাজ করা হচ্ছে। অতিরিক্ত যানবাহন চাপ ও বর্র্ষায় ভারি বর্ষণের ফলে কয়েক বছর আগে করা সংস্কার কাজের অংশে খানা-খন্দকের সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি থামলেই কয়েকটি ট্রাক করে পাথর ও বিটুমিন মিশিয়ে একাধিক স্থানে মেরামত কাজ করানো হচ্ছে। বৃষ্টির কারণে বর্তমানে কোথাও কাজ করা যাচ্ছে না।
ছবির ক্যাপশা: চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক গর্তে ভরা। কেরানীহাট এলাকা থেকে ছবি তোলা হয়েছে।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।