॥ অর্পন বড়ুয়া ॥

কোথায় যেন আমাদের ভুল হচ্ছে। আমরা বার বার মিথ্যেই বলে বেড়াচ্ছি। আর সেটিকে সত্যে রুপান্তর করে যাচ্ছি। ফেসবুকের টাইমলাইন, চা এর দোকান, বাসস্ট্যান্ড, স্কুল-কলেজ সবখানেই ‘‘শুধু রিফাত নেই; রিফাত নেই’’! এ কথা শুনতে শুনতে আজ আমি অস্থির। আমি নির্বাক। আমি বাক্রুদ্ধ। কই নাতো ! সবাই বলছে রিফাত নেই। আমি দৃঢ় বিশ^াস নিয়ে বলছি এসব মিথ্যে। সবাই মিথ্যেই বলে যাচ্ছে। রিফাত আছে আমাদের মাঝে। কিন্তু রিফাত নেই। অথচ রিফাত আছে ফেসবুকের টাইমলাইন জুড়ে। নির্মম সত্য আজ রিফাত নেই।

আমার মত অনেকেই এখনও মেনে নিতে পারেনি রিফাতের এই অবেলায় চলে যাওয়া। রিফাতের মৃত্যু এ যেন হাজারো তরুণের স্বপ্নভঙ্গ। ফেসবুকের টাইমলাইন জুড়ে তারুণ্যের আকুতিই সেটি প্রমাণ করে। আমার এখনও বিশ^াস হয় না রিফাত মারা গেছে। আমাদেরকে না বলে অভিমান করে চির বিদায় নিয়ে একেবারেই এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে। সত্যি আমার এখনও বিশ^াস হয় না। চোখের সামনে বার বার ভেসে উঠছে রিফাতের সদা হাস্যোজ্জল ছবিটি। তার কন্ঠে ‘‘জয় বাংলা’’ শ্লোগান। যেদিন একসাথে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার র‌্যালিতে অংশ নিয়ে জয় বাংলা শ্লোগানে রাজপথ মুখরিত করেছিলাম। হয়ত আর কোন র‌্যালিতে একসাথে শ্লোগান ধরা হবে না। তুমি দেখাবে না বিজয় চিহ্ন। হবে না দেখা মিছিলে।

বন্ধু রিফাতের পুরো নাম হোছাইন মাহমুদ রিফাত। অনেক ছোট বেলা থেকে তার সাথে আমার ঘনিষ্টতা। রিফাত ছিল অত্যন্ত ভদ্র ও বিনয়ী স্বভাবের। আমি ছাত্র ইউনিয়ন করলেও রিফাতের সাথে বুঝাপড়ার জায়গাটি ছিল খুব পরিস্কার। সর্বস্তরের মানুষের মন যুগিয়ে চলার যোগ্যতা যে কারো থাকে না। সেটি রিফাতের মাঝেই ছিল। ফলে রিফাত সব মানুষের কাছেই অতি অল্প সময়ের মধ্যে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠে।

আজকালের ছেলে-মেয়েরা রাজনীতি করতে চায় না। শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগ একটি অংশ মনে করে ছাত্র রাজনীতি মানেই মারামারি-হানাহানি। অথবা ছাত্রনেতা মানেই চোখের সামনে ভেসে উঠে একজন বখাটের চেহারা। মাদকের সহজ লভ্যতার কারনে ক্ষমতার সংস্পর্শে থেকে মাদকাসক্ত হয়ে উঠার প্রবণতা। চোখের সামনেই দেখেছি অনেক মেধাবী ছাত্রনেতাই পথভ্রষ্ট হয়ে গেছে। ফলে জনপ্রিয় হওয়ার চেয়ে সাধারণ মানুষের কাছে অপ্রিয় হয়ে উঠার সম্ভাবনাই ছাত্র রাজনীতিতে আছে বলে বেশিরভাগ অভিভাবকই মনে করে। অথচ আমরা কেউই রাজনীতির বাইরে নই।

সবাই রাজনীতির ভিতরে থেকেও যখন রাজনীতি বিমুখ; ঠিক এই সময়টাতে এসে ছাত্র রাজনীতিকে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে পেরেছে রিফাত। রামুর ছাত্র রাজনীতিতে প্রচন্ড সম্ভাবনাময় একটি নাম হোছাইন মাহমুদ রিফাত। আসলে ভালো মানুষগুলো খুব তারাতারি চলে যায়। হয়তবা’ আমরা রিফাতের মত হতে পারিনি। তাই পাপের বোঝা নিয়ে অপরাধীর মত বেঁেচ আছি নির্মম বাস্তবতায়।

রিফাতের মৃত্যুতে তার মা-বাবা-ভাই-বোন ও আত্মীয়-স্বজনসহ তার রাজনৈতিক পরিমন্ডল ও বন্ধু মহলে গভীর শূণ্যতা তৈরি হয়েছে। যারা রিফাতকে ভালোবাসেন। রিফাতের আদর্শকে ভালোবাসেন। তারা নিঃসন্দেহে দেশ মাতৃকাকে ভালোবাসেন। আমি মনে করি রিফাতের প্রতি ভালোবাসা এমনিতেই সৃষ্টি হয়নি। রিফাতের আদর্শকে ভালোবাসেন বলেই রিফাতের প্রতি আকাশসম ভালোবাসা। তার মৃত্যুতে শোকে মাতম। আজ দিশেহারা সবাই। জানি রিফাতকে আর ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়। তবে রিফাতের আদর্শকে ভালোবেসে যারা রিফাতের আদর্শের সাথী হয়েছেন সবাই রিফাতের আদর্শের পথে থেকে তার স্বপ্ন পুরণ করুন। দেশকে মায়ের মত ভালোবাসুন। আসুন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাই। তবেই তার অতৃপ্ত আত্মা শান্তি পাবে।

লেখক : সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন,কক্সবাজার জেলা সংসদ।