পর্যটন ব্যবসায় চরম মন্দা

প্রকাশ: ২২ আগস্ট, ২০১৭ ০৪:৫৩

পড়া যাবে: [rt_reading_time] মিনিটে


পর্যটক নেই তাই কেনাকেনা শূন্য। অলস সময় কাটাচ্ছে ব্যবসায়ীরা। ছবিটি সৈকতের লাবণী পয়েন্টের ঝিনুক মার্কেট থেকে তোলা।

শাহেদ মিজান, সিবিএন;
পর্যটন রাজধানী কক্সবাজারে পর্যটন ব্যবসায় চরম মন্দা বিরাজ করছে। পর্যটক না আসায় হোটেল-মোটেল ও পর্যটন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এই মন্দা বিরাজ করছে। এতে এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চরম অর্থাভাবে পড়ে হোটেল-মোটেলসহ সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তাদের অর্ধেক কর্মী ছাটাই করেছে। এখন সময় পর্যটনের মন্দা মৌসুম হলেও বিগত বছরগুলোতে এর মোটামুটি পর্যটক আসতো বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তবে বর্তমানে পর্যটক শূন্যতা উত্তরাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যাকে দায়ী করছেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।

পর্যটন সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রতি বছর গ্রীষ্মকালের পর থেকে পর্যটন মৌসুম শেষ হয়ে যায়। আবার শুরু হয় অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে। তবে মন্দা সময়েও ছুটিরদিনসহ বিভিন্ন উপলক্ষ্যে কিছু কিছু পর্যটক কক্সবাজারে বেড়াতে আসেন। কিন্তু চলতি বছরে গ্রীষ্মের পর থেকে আর তেমন পর্যটক কক্সবাজারমুখী হননি। মাঝে ঈদুল ফিতরের পর সপ্তাহ খানিক কিছু পর্যটক আসলেও অন্য পুরোটা সময় ৫শতাংশ পর্যটকও আসেনি।

সূত্র মতে, বর্ষার শুরুতে কক্সবাজারে বন্যা সৃষ্টি হয়েছিল। দু’দফায় বন্যায় ওই সময় ভয়ে কক্সবাজার আসেনি ভ্রমনপিপাসুরা। যদিও ওই সময় কক্সবাজারের পর্যটন কেন্দ্রেগুলোতে বন্যার প্রভাব পড়েনি। কিন্তু গণমাধ্যমে ঢালাওভাবে বন্যার খবর প্রচার হওয়ায় অজ্ঞাতবশত: পর্যটকেরা ভয়ে কক্সবাজারে আসেনি। এরপরে কক্সবাজারের বন্যা পরিস্থিতি কেটে গেলেও উত্তরবঙ্গসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ভয়াবহ বন্যা সৃষ্টি হয়েছে। গত একমাস থেকে এক পর্যন্ত বন্যার প্রভাব রয়ে গেছে। বন্যা ওসব এলাকার মানুষের চরম দুর্দিন চলছে। বন্যার কারণে পর্যটক আসছে না।

পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, প্রতিবছর মন্দা মৌসুম শুরু হলেও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো সব খোলা রাখা হতো। কারণ যে অল্প পরিমাণ পর্যটক আসতো তাতে অন্তত খরচটা উঠতো। কিন্তু চলতি বছরে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা রেখে তার আশানুরূপ সুফল পাননি ব্যবসায়ীরা। কারণ প্রত্যাশার অর্ধেক পর্যটকও কক্সবাজারে বেড়াতে আসেনি। পর্যটক না আসায় পুরোটা সময়জুড়ে হোটেল-মোটেলসহ অন্যান্য পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো চরম দুরাবস্থায় পড়ে গেছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতিবছর পর্যটন মৌসুম শেষ হলে হোটেল-মোটেলসহ পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলো এক তৃতীয়াংশ কর্মী ছাটাই করে থাকেন। এ বছরও প্রথম দিকে সে হারে কর্মী ছাটাই করা হয়েছিল। কিন্তু এবারে পর্যটক না আসায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ভাড়া ও কর্মীদের বেতন নিয়ে চরম বেকাদায় পড়ে যায় ব্যবসায়ীরা। ফলে বাধ্য হয়ে হোটেল-মোটেল ও বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অর্ধেক অনেকে অর্ধেকের বেশি কর্মী ছাটাই করে দিয়েছে। একই ভাবে ভাড়াসহ অন্যান্য খরচের সংকটে পড়ে অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রাখতে বাধ্য হয়েছে ব্যবসায়ীরা।

সৈকতের লাবণী পয়েন্টের ঝিনুক মার্কেটের ব্যবসায়ী মাহমুদুল হক বলেন, ‘পুরো ছয় মাস ধরে ব্যবসায় চরম মন্দা যাচ্ছে। তাই দোকানের চারজন কর্মীর তিনজনকে ছাটাই করে দিয়েছি। এখন অবস্থা এমন দাঁড়িয়ে, দোকান ভাড়া, এক কর্মীর বেতন ও খাবারসহ আনুষঙ্গিক খরচ পর্যন্ত বাড়ি থেকে এনে দিতে হচ্ছে।’

সৈকত ঝিনুক শিল্প বহুমূখী সমবায় সমিতির সভাপতি আনোয়ার উল্লাহ জানান, স্বাভাবিক দিনে পুরো সৈকত জুড়ে ১০ জনও পর্যটকও খুঁজে পাওয়া যাবে না। ছুটির দিনগুলোতে স্থানীয় লোকজন সৈকত দর্শনে আসে। কিন্তু তারা কোনোর রকম কেনাকাট করে না। ফলে ছুটির দিনেও বেচাকেনা হয় না।

হোটেল-মোটেল গেষ্ট হাউজ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার জানান, হোটেল-মোটল ব্যবসা পুরোপুরি পর্যটক নির্ভর। তাই পর্যটক না আসায় পুরোপুরি অলস পড়ে হোটেল-মোটেল গেষ্ট হাউজগুলো। তারপরও এই পরিস্থিতি কিছুটা হলেও কাটিয়ে উঠতে একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছিলাম। স্বনামধন্য ২০টি হোটেল-মোটেল গেষ্ট হাউজে নামমাত্র মূল্যে (৩০০-৫০০ টাকা) রুম বুকিং প্যাকেজ চালু করা হয়। এক মাস ব্যাপী এই প্যাকেজ চলছে। তবে তাতেও আশানুরূপ সাড়া মেলেনি।

আবুল কাশেম সিকদার বলেন, ‘সারাদেশজুড়ে ভয়াবহ বন্যা পর্যটন ব্যবসায় চরম প্রভাব পড়েছে। প্রথম দিকে ছিলো কক্সবাজারের বন্যা, বর্তমানে উত্তরবঙ্গের বন্যা। ফলে পুরোটা সময় বন্যার কবলে গেছে। এই কারণে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অনেক পর্যটক বেড়াতে আসতে পারেনি। নভেম্বর-ডিসেম্বর না আসা পর্যন্ত আর তেমন পর্যটকের আশাও করা যাচ্ছে না। বন্যার ক্ষত কাটিয়ে উঠতে একটা বিরাট সময় লাগবে।’