বার্তা পরিবেশক :

কক্সবাজার মডেল হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ রমজান আলীর স্বেচ্চাচারিতায় ঐ বিদ্যালয়ের দু’জন শিক্ষিকাকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে চাকুরীচ্যুত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। নিলুফার ইয়াসমিন এবং সুজাতা বড়ুয়া কক্সবাজার কে.জি এন্ড মডেল হাই স্কুলের প্রাথমিক শাখার দু’জন শিক্ষিকা। নিলুফার ইয়াসমিন ঐ বিদ্যালয়ে ২১ বছর এবং সুজাতা বড়ুয়া ৫ বছর যাবত অত্যন্ত সুনামের সাথে চাকুরী করে আসছিলেন। কর্মক্ষেত্রে এরা দু’জনের যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। তাই বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীসহ অভিভাবকদের মধ্যে এরা দু’জন খুবই প্রিয় শিক্ষক হিসাবে বিবেচিত। চাকুরীকালীন সময়ে এরা কখনও শৃঙ্খলা ভঙ্গ বা কারো সাথে অসদাচরণ করেননি। তাই এদের বিরুদ্ধে স্কুল কর্তৃপক্ষের কোন সময় কোন অভিযোগও ছিলনা। এজন্য কর্তৃপক্ষের নিকট হতে কোনদিন কারণ দর্শানো নোটিশও এরা পাননি। এরা দু’জন অভিজ্ঞ শিক্ষকের অপরাধ হলো এদের সন্তানদ্বয় পড়ালেখায় অত্যন্ত মেধাবী। তেমনিভাবে বিগত ২০১৬ সালের পিএসসি পরীক্ষায় এদু’জন শিক্ষকের সন্তানদ্বয় যথাক্রমে তাহমিত জাওয়াদ চৌধুরী এবং নিলাঞ্জনা বড়–য়া অথৈ কক্সবাজার কে.জি এন্ড মডেল হাই স্কুল হতে টেলেন্টপুল বৃত্তিসহ জিপিএ-৫ অর্জন করেছে। এখানেই এদের সাফল্যের শেষ নয়। ২০১৭ সালে সরকারী স্কুলে ৬ষ্ট শ্রেণীতে প্রতিযোগীতামূলক ভর্তি পরীক্ষায় এ দু’জন শিক্ষার্থী নিজ নিজ ক্ষেত্রে সাফল্য দেখিয়ে সরকারী স্কুলে ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করেছে। এতেই ঘটে যায় বিপত্তি। সন্তানদের ক্রমান্বয়ে ভাল রেজাল্ট এবং সরকারী বিদ্যালয়ে ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করায়, চাকুরী হারাতে হয়েছে উক্ত শিক্ষার্থী দু’জনের মাতাকে। কক্সবাজার কে.জি এন্ড মডেল হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ রমজার আলী এদু’জন শিক্ষকের উপর চাপিয়ে দেয় এক অনৈতিক সিদ্ধান্ত। উক্ত দু’জন শিক্ষার্থীকে তার স্কুলে না রেখে সরকারী স্কুলে ভর্তি করানোর অপরাধে উল্লেখিত দু’জন হতভাগা শিক্ষিকাকে চাকুরী থেকে অপসারণ করেন বিতর্কিত ওই প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ রমজান আলী।

কক্সবাজর কে.জি এন্ড মডেল হাই স্কুল হতে এদু’জন শিক্ষার্থী সরকারী বিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাওয়ায়, তাদের ছাড়পত্রের জন্য উক্ত বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ রমজান আলীর নিকট গেলে তিনি এমর্মে নির্দেশনা জারী করেন যে, শিক্ষকদের চাকুরী হতে পদত্যাগ পত্র জমা নেয়া স্বাপেক্ষে বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সন্তানদের ছাড়পত্র প্রদান করা হবে। শিক্ষকদের সন্তানদের সরকারী বিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য অন্য কোন উপায় না দেখে প্রধান শিক্ষক কর্তৃক প্রদত্ত উক্ত অনৈতিক লিখিত সিদ্ধান্ত বিগত ০৪/০১/২০১৭ খ্রি. তারিখে তারা জেলা প্রশাসকের নিকট দাখিল করেন। তাৎক্ষনিকভাবে জেলা প্রশাসক প্রধান শিক্ষক রমজান আলীকে শিক্ষার্থীদের ছাড়পত্র প্রদানের জন্য টেলিফোনে নির্দেশনা প্রদান করেন। তার নির্দেশনা পেয়ে প্রধান শিক্ষক ছাড়পত্র প্রদান করতে বাধ্য হয় এবং জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপে তাদের সন্তানদেরকে কক্সবাজার সরকারী বালক/বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি করাতে সক্ষম হয়। তাদের সন্তানদেরকে বিদ্যালয় হতে ছাড়পত্র প্রদানের জন্য জেলা প্রশাসকের নির্দেশনার কারণে প্রধান শিক্ষক রমজান আলী পরবর্তীতে উক্ত দু’জন শিক্ষিকাকে তাদের শিক্ষকতার চাকুরী থেকে অপসারণের জন্য বিভিন্নভাবে হুমকি প্রদান করে আসছিলেন এরই ধারাবাহিকতায় বিগত ১৮/০২/২০১৭ তারিখে উক্ত দু’জন শিক্ষিকাকে স্কুলে আসতে মৌখিকভাবে নিষেধ করেন প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ রমজান আলী।

অত:পর চাকুরী ফেরত চেয়ে উক্ত দু’জন শিক্ষিকা ১২/০২/২০১৭ তারিখে জেলা প্রশাসক, কক্সবাজার বরাবর আবেদন করেন। জেলা প্রশাসক উক্ত আবেদনটির গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে অতি: জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি)-কে তদন্তের নির্দেশ দেন। উভয় পক্ষের বিস্তারিত শুনানী শেষে অতি: জেলা প্রশাসক কর্তৃক ১৮/০৪/২০১৭ তারিখে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। তদন্তে প্রমাণিত হয় যে, অভিযোগকারী শিক্ষিকাদের সন্তানদের উক্ত বিদ্যালয় হতে সরকারী বিদ্যালয়ে ভর্তি করার প্রেক্ষিতে প্রতিহিংসা এবং স্বেচ্ছাচারীমূলক আচরণ হিসাবে তথাকথিত গোল্ডেন হ্যান্ডস্যাকের মাধ্যমে উক্ত দু’জন শিক্ষিকাকে চাকুরী হতে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। মুহাম্মদ রমজান আলীর এহেন আচরণ প্রতিহিংসার বহি:প্রকাশ এবং নীতি নৈতিকতা বিবর্জিত মর্মে উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সচিব, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর পত্র প্রেরণ করেন যার স্মারক নং-০৫.২০. ২২০০.১২৭.১০.০০৪. ২০১৭-২৩১, তারিখ: ২৭/০৪/২০১৭ খ্রি.।

পাশাপাশি বিধি বহির্ভূতভাবে অপসারণকৃত দু’জন শিক্ষিকাকে স্ব-স্ব পদে বহাল করার জন্যও প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় দু’জন শিক্ষিকাকে স্ব-স্ব পদে বহাল করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের স্মারক নং-৩৭.০০.০০০০.০৭৩.৪১.১০৫.১৬-১৯৮, তারিখ: ৩০/০৫/২০১৭ খ্রি. এবং চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের স্মারক নং-চশিবো/বিদ্যা/কক্স(সদর)/১৬/৯৬(অংশ-২)/৯৭৮৮(৬), তারিখ: ২২/০৬/২০১৭ খ্রি. এর মাধ্যমে স্কুল কর্তৃপক্ষ বরাবর নির্দেশনা প্রদান করেন। সরকারের আদেশ পেয়ে ভূক্তভোগী দু’জন শিক্ষিকা বিগত ০৬/০৭/২০১৭ খ্রি. তারিখ বিদ্যালয়ে যোগদান করলেও প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ রমজান আলী তাদেরকে স্কুলে গমণে বিভিন্নভাবে বাধা দিয়ে আসছে এবং তাদেরকে যোগদান করতে দেয়া হবে না মর্মে প্রধান শিক্ষক সাফ জানিয়ে দেন। এতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বোর্ডের আদেশকে বৃদ্ধাঙ্গলি দেখাচ্ছে ওই বিতর্কিত প্রধান শিক্ষক। তার এহেন দু:সাহস দেখে অনেক অভিভাবক বলেন, রমজান আলীর খুঁটির জোর কোথায়? এদিকে প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ রমজার আলীর নীতি নৈতিকতা বিবর্জিত, অমানবিক, স্বেচ্ছাচারিতা ও প্রতিহিংসামূলক আচরণের জন্য তার এম.পি.ও বাতিলের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় হতে নির্দেশনা জারী করা হয়েছে। যার পত্র নং-৩৭.০০.০০০০.০৭৩.৪১.১০৫.১৬-১৯৯, তারিখ: ৩০ মে, ২০১৭ খ্রি.।

অনুসন্ধানে জানা যায় যে, ইতিপূর্বে তিনি মহেশখালীর কুতুবজোম আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলেন। উক্ত বিদ্যালয়ে কর্মরত থাকাকালীন তিনি সভাপতির সই জ্বাল করে চেক জালিয়াতির মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ টাকা আতœসাতের কারণে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। যার মামলা নম্বর-সিআর-১৩/১০। তাছাড়াও তিনি তার প্রতিপক্ষকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর জন্য মেডিকেল অফিসারের স্বাক্ষর জ্বাল করে মিথ্যা সার্টিফিকেট সৃজন করে আদালতে দাখিল করলে, তা ভূঁয়া বলে তদন্তকারী কর্মকর্তা অভিযোগপত্র দাখিল করেন। যার মামলা নম্বর-জিআর-৭০/০৪। কক্সবাজার মডেল হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসাবে তিনি বিগত তিন বছর পূর্বে যোগদানের পর হতে তার মনগড়া সিদ্ধান্তের কারণে বিদ্যালয়টিকে একটি আতংকের প্রতিষ্ঠান হিসাবে গড়ে তুলেছে। বিদ্যালয়টি ১৯৮১ সালে প্রতিষ্ঠার পর হতে অত্যন্ত সুনাম অর্জন করে আসছে। সম্প্রতি ওই প্রধান শিক্ষক ঘোষণা দিয়েছে যে, বিদ্যালয়ের প্রাথমিক শাখা বন্ধ করে দিয়ে মাধ্যমিক শাখায় ডাবল শিফ্ট চালু করবে। এতে প্রাথমিক শাখার শিক্ষার্থীদের অভিবাবক এবং শিক্ষকগণ খুবই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। প্রায় ৭২০ জন ছাত্র-ছাত্রী বর্তমানে প্রাথমিক শাখায় অধ্যয়নরত। হঠাৎ করে প্রধান শিক্ষকের মনগড়া সিদ্ধান্তে উক্ত বিদ্যালয়ের প্রাথমিক শাখা বন্ধ হয়ে গেলে ভবিষ্যতে শিক্ষার্থী এবং অভিবাবকগণকে চরম দুর্ভোগে পড়তে হবে। এ নিয়ে সচেতন অভিবাবক মহলে ইতিমধ্যে কানাঘুষা শুরু হয়ে গেছে। বর্তমানে প্রধান শিক্ষকের অমানবিক অত্যাচারে অন্যান্য শিক্ষকগণও আজ অতিষ্ট এবং চাকুরী হারানোর ভয়ে কর্মরত শিক্ষকগণ সদা আতংকিত থাকে । বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক-কর্মচারী তার ভয়ে আজ তটস্থ। তাই উক্ত বিতর্কিত প্রধান শিক্ষক অবৈধ ও অনৈতিক কার্যকলাপের জন্য তার যথাযথ শাস্তি দাবী করেছেন সচেতন অভিভাবক মহল।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে প্রধান শিক্ষক শিক্ষক রমজান আলী বলেন, ‘যে দু’শিক্ষিকাকে বহিস্কার করা হয়েছে সেখানে আমার কোনো ইনভলবম্যান্ট। কারণ তারা হলেন বিদ্যালয়ের প্রাথমিক স্তরের শিক্ষিকা আর আমি উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের প্রধান শিক্ষক। তারা শুধু শুধু অহেতুক আমাকে দায়ী করছে।
তিনি আরো বলেন, ‘আমার জানা মতে দু’শিক্ষিকা পুনর্বহালের মন্ত্রণালয়ের আদেশ রয়েছে উচ্চ আদালত স্থগিত করে দিয়েছে। বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির রীটের প্রেক্ষিতে ওই আদেশ স্থগিত করেছে। আসল কথা হলো, তারা যে কান্ড শুরু করেছেন তাহলো বিদ্যালয় বিরোধী ষড়যন্ত্র। একটি মহল তাদেরকে গাইড করছে।’