খালেদ হোসেন টাপু, রামু:
রবিবার ২৭ আগষ্ট। ২০১০ সালের এইদিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ট সহচর, কক্সবাজারের শ্রেষ্ঠ সমাজ সেবক, জাতীয় সংসদ সদস্য, সাবেক রাষ্ট্রদুত অধ্যক্ষ আলহাজ্ব ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরী ইন্তেকাল করেন। এরপর থেকে রামুর এ কীর্তিমান পুরুষের প্রয়াণে অনেকটা অভিভাবকশূণ্য হয়ে পড়ে কক্সবাজারের রাজনৈতিক অঙ্গন।

সফল রাজনীতিক আলহাজ্ব ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরী বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের অধিকারী ছিলেন। নারী ও ধর্মীয় শিক্ষার প্রসার, সমাজসেবা আর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন তিনি। দুর্যোগ, জলোচ্ছ্বাস আর দরিদ্র মানুষের দুর্দিনে নিজেকে উৎসর্গ করতেন ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরী। অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠায় রেখেছেন অনন্য ভূমিকা। বর্ণিল কর্মময় জীবনের অধিকারী এ কীর্তিমান রাজনীতিককে তাই এখনো পরম শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছে কক্সবাজারসহ সারাদেশের আপামর জনসাধারণ।

কক্সবাজার জেলার সফল এই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, কীর্তিমান পুরুষ আলহাজ্ব ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরীর জন্ম ১৯৩৭ সালের ১৮ অক্টোবর রামু উপজেলার ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের মন্ডল পাড়ায়। তাঁর পিতার নাম মালেকুজ্জামান সিকদার। ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরী ১৯৫৫ সালে রামু খিজারী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক, ১৯৫৭ সালে চট্টগ্রাম নাইট কলেজ থেকে আইএ, ১৯৫৯ সালে ঢাকা কলেজ থেকে বিএ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে এমএ পাশ করেন। তিনি ১৯৬৩ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। এরপর থেকে দলীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। একাত্তরের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে তিনি সংগঠক হিসেবে সক্রিয় দায়িত্ব পালন করেন। ওই সময় পাক-হানাদার, রাজাকার, আলবদর বাহিনী তাঁর বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। স্বাধীনতার পর মুক্তিযুদ্ধ ও পুনর্বাসন প্রকল্পে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭০-১৯৭৩ সালে রামু-উখিয়া-টেকনাফ নির্বাচনী এলাকা হতে প্রাদেশিক পরিষদ ও জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং বাংলাদেশ বন মন্ত্রণালয় ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির উপদেষ্টা ছিলেন। ১৯৯৬ সালে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর হতে ২০০১ সাল পর্যন্ত ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরী সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত-এর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৮, ১৯৯১ ও ১৯৯৪ সালের ভয়াবহ বন্যা-জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড়ে ব্যাপক প্রাণহানি ও ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ-পুর্নবাসন কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন। রেডক্রস সমিতির সহ-সভাপতি হিসেবে ১৯৭৮ সালে বার্মিজ শরণার্থীদের ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করেন। তিনি কক্সবাজার মহিলা কলেজের প্রতিষ্ঠাতা এবং অধ্যক্ষ ছিলেন। তাছাড়াও তিনি রামুর প্রথম বাংলা কলেজসহ বেশ কয়েকটি কলেজ, উচ্চ বিদ্যালয়, মাদ্রাসা ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। এছাড়াও রামু ডিগ্রী কলেজ, কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, রামু বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, কক্সবাজার সৈকত বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় তিনি প্রশংসনীয় অবদান রেখেছেন।

রাজনীতির পাশাপাশি সংগঠক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরী। তিনি ১৯৫৭-১৯৫৯ সালে ঢাকা কলেজ সাময়িকী মসিরেখা সম্পাদনা করেন। ১৯৬১-১৯৬২ সালে ইকবাল হল ছাত্র সংসদের এজিএস ও ১৯৬২-১৯৬৩ সালে ডাকসুর সাহিত্য সম্পাদক ছিলেন। ১৯৬২ সালে লাহোরে ছাত্র নেতৃত্ব প্রশিক্ষণ শিবিরে যোগ দেন। হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশন রিপোর্টের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও তিনি ১৯৬৮-৬৯ সালে কক্সবাজার কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংকের সভাপতি, ১৯৬৯-১৯৭০ সালে চট্টগ্রাম জেলা লবণ উৎপাদক সমিতির সভাপতি, কক্সবাজার মহকুমা রেফারী ও আম্পায়ার এসোসিয়েশনের প্রথম সভাপতি, জাতীয় যক্ষ্মা নিরোধ সমিতি, লায়ন্স ক্লাব, রামু দুর্বার শিল্পী গোষ্ঠিসহ অনেকগুলো সামাজিক, সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর সভাপতি ও উপদেষ্টা ছিলেন। বর্তমানে তাঁর সন্তান রামু কক্সবাজার সদর আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল বাবার আদর্শে উজ্জীবিত একজন যোগ্য উত্তরসুরী সফল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব পার্লামেন্টারিয়ান হিসেবে দেশ ও জাতির উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন।

এদিকে রবিবার আলহাজ্ব ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরীর ৭ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে রামু চৌমুহনী বাস স্ট্যান্ড চত্বরে রামু ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরী স্মৃতি পরিষদের উদ্যোগে দিনব্যাপী স্মরন সভাসহ খতমে কোরআন, মিলাদ, আলোচনা সভা, ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন, মোনাজাতের আয়োজন করা হয়েছে। এতে তাঁর সকল শুভানুধ্যায়ীকে উপস্থিত থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন রামু ওসমান সরওয়ার আলম স্মৃতি পরিষদের আহবায়ক উপজেলা চেয়ারম্যান রিয়াজ উল আলম, যুগ্ম আহ্বায়ক জেলা পরিষদ সদস্য শামসুল আলম চেয়ারম্যান ও চাকমারকুল চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম সিকদার।