ডেস্ক নিউজ:
তিনি ইহকালের বাসিন্দা নন তাও নয় মাস পেরিয়ে গেছে। ঘুমিয়ে আছেন কবরে। রহস্যের জাল থেকে বেরিয়ে নিশ্চিতও হওয়া গেছে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহ সম্পাদক দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর মৃত্যুর কারণ-‘তিনি আত্মহত্যা করেননি, তাকে হত্যাই করা হয়েছে।’ এর মধ্যেই তার নামে একটা চিঠি এলো। মৃত্যুর প্রায় ২৭০ দিন পরে আসা এই চিঠিটা নতুন করে পোড়াচ্ছে তার পরিবারকে।
চিঠিটা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সহকারী সচিব/সহকারী পরিচালক পদে নিয়োগপ্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেওয়া প্রসঙ্গে। মৃত্যুর কিছুদিন আগে এই পদে আবেদন করেছিলেন দিয়াজ ইরফান চৌধুরী। সেই পদের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর। এই পদের আবেদনকারী হিসেবে দিয়াজ ইরফান চৌধুরীকেও লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিতে অনুরোধ জানিয়ে চিঠিটি পাঠানো হয়েছে।
২১ আগস্ট দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর মামা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) কর্মকর্তা রাশেদ বিন আমিন চৌধুরীর ঠিকানায় এই চিঠি আসে। পরে তিনি তা দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর মা জাহেদা আমিন চৌধুরীকে দেন।
দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর নামে আসা ইউজিসি’র সচিব ড. মো. খালেদ স্বাক্ষরিত এই চিঠিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ মঞ্জুরি কমিশনের সহকারী সচিব/সহকারী পরিচালক পদে নিয়োগপ্রাপ্তির জন্য আপনার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আপনাকে জানানো যাচ্ছে যে, আগামী ১৫-০৯-১৭ তারিখ শুক্রবার বেলা ৩:৩০টা থেকে ৪:৩০টা পর্যন্ত শেরে বাংলা নগর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, শেরে বাংলানগর ঢাকা-১২০৭ এ লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। উক্ত লিখিত পরীক্ষায় উপস্থিত থাকার জন্য আপনাকে অনুরোধ করা হলো।’
জানতে চাইলে দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর বড় বোন অ্যাডভোকেট জুবাঈদা ছরওয়ার চৌধুরী নিপা বলেন, ২১ আগস্ট চবি বঙ্গবন্ধু পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪২তম শাহাদত বার্ষিকী ও শোক দিবসের আলোচনা সভা চলাকালে চিঠিটা হাতে পান আমার মা। হত্যার কিছুদিন আগে আমার ভাই এই পদে নিয়োগপ্রাপ্তির জন্য আবেদন করেছিল। এমনিতে ভাই হারানোর পর থেকে কান্না ছাড়া আমাদের জীবনে আর কিছু নেই। ওর নামে আসা এই চিঠিটা নতুন করে কাঁদাচ্ছে আমাদের।
অভিমানী মা জাহেদা আমিন চৌধুরী বলেন, আমার কাছে যখন চিঠিটা এসেছে তখন আমার ছেলে আমার কাছ থেকে অনেক দূরে। আমি আর কাঁদবো না। আমার বুকে পাথর।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যন্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা দিয়াজ ইরফান চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। পরে ছাত্রলীগের বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক মনোনীত হন।
গত বছরের ২০ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তর ক্যাম্পাসে অবস্থিত নিজেদের ভাড়া বাসা থেকে দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হওয়া প্রথম ময়নাতদন্তের পর তিনি আত্মহত্যা করেছেন এমন প্রতিবেদন দেওয়া হয়। কিন্তু ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে-এমন অভিযোগ এনে গত বছরের ২৪ নভেম্বর জাহেদা আমিন চৌধুরী বাদি হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীসহ ১০ জনকে আসামি করে আদালতে মামলা করেন।
পরে ৬ ডিসেম্বর মরদেহ কবর থেকে তুলে পুনরায় ময়নাতদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। গত বছরের ১১ ডিসেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগে দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত হয়। প্রতিবেদনটি চলতি মাসের ১ তারিখ তদন্ত কর্মকর্তার হাতে এসে পৌঁছায়। এতে বলা হয়, দিয়াজকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে।
দিয়াজের নামে আসা ইউজিসির চিঠির একেবারে শেষের দিকে বলা হয়, নির্ধারিত সময়ের পরে আগতদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ প্রদান করা হবে না।
কিন্তু কর্তৃপক্ষ তো জানে না, দিয়াজ ইরফান চৌধুরী শুধু এই পরীক্ষা নয়, আর কোনো পরীক্ষাতেই নির্ধারিত সময় দূরে থাক, হাজিরই হতে পারবেন না। কারণ তিনি যে সব প্রতিযোগিতার বাইরে, তার নামের শুুরুতে আজ যে কেবল উচ্চারিত হয় ‘প্রয়াত’।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।