এইচ এম আবু ছিদ্দিক
সাম্প্রতিক চট্টগ্রামে এক নিকট আত্বীয়ের বাসায় বেড়াতে গিয়েছিলাম। খাওয়া-দাওয়া শেষে কথা হয় ৩৭তম বিসিএসে অংশ নেওয়া একজন মেধাবী শিক্ষার্থীর সাথে। কথার প্রসঙ্গে সে বললো, পরীক্ষা ভাল হলেও কোটা বা দলীয় পদ্ধতির কারণে সাধারণ মেধাবী শিক্ষার্থীদের সরকারি চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা বিরল। অনুনয়-বিনয়ের স্বরে সে আমার কাছে জানতে চাইল সরকারি প্রতিষ্ঠানে এভাবে ভাগ-ভাটোয়ারা আর কতদিন চলবে? তার প্রশ্নের কোন সদউত্তর আমি দিতে পারিনি। শুধু এইটুকু বলেই তাকে শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করলাম। দেশের সরকার বা নীতি-নির্ধারকরা যতদিন চাইবে ততদিন। তার কথা যদি সত্যিই অর্থবহ মনে হয়, তাহলে জাতি আসলেই ভুল-ভ্রান্তির বেড়াজালে আটকা পড়ছে। কোটা পদ্ধতির কারণে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীরাই পরীক্ষায় বেশী নাম্ভার পেয়েও চুড়ান্ত বিবেচনায় উত্তীর্ণ হতে পারেনা। যার ফলে তারা দেশের মানুষের সেবা করার সুযোগ পায়না, বা দেশ গড়ার কাজে অংশ নিতে পারেনা। পক্ষান্তরে কোটা সুবিধাভোগী শিক্ষার্থীরা খুব অল্প নাম্ভার পেয়েও সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তাদেরকে চাকরি, বা কাজের সুযোগ দেওয়া হয়। এসব পিছিয়ে থাকা শিক্ষার্থীরাই রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত হয়। এমনকি সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও শিক্ষকতার মতো মহান পেশায় দায়িত্ব পালন করে। কোটা সুবিধাভোগী শিক্ষার্থী, বা ছাত্র রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত অনেকেই শিক্ষাজীবনে নিয়মিত পরিশ্রম করে লেখাপড়া করেনা। এদের মাথায় অনাকাক্সিক্ষত অশুভশক্তি বাসা বাঁধে। এরা মনে করে পরীক্ষার ফলাফল যাই হোক’না কেন, কোটা বা দলীয় ছত্রছায়ায় চাকরি’তো অবশ্যয় হবে। তাছাড়া ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িত শিক্ষার্থীরা বছরজুড়েই বেশীরভাগ সময় লেখাপড়ার চেয়ে সাংগঠনিক বা দলীয় কর্মসূচি নিয়ে ব্যস্ত থাকে। লেখাপড়া হোক’বা না’ই হোক, বড় নেতা হওয়া চাই-চাই। তাদের এরকম আত্মঘাতী সিদ্ধান্তের কারণে দেশ তথা জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি নিজেরাও শিক্ষার প্রসার ঘটাতে পারেনা। যা এদের কর্মজীবনেও ব্যাঘাত ঘটায়। জন্মসূত্রে মানুষ কোন’না কোন প্রতিভা নিয়ে জন্মায়। কিন্তু প্রত্যেকে সেই প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে পারেনা। পৃথিবীতে যত খ্যাতিমান বিজ্ঞানী তাঁদের কর্মদ্বারা আমাদের জীবনমান সহজ করে দিয়েছেন, এরা কেউই জন্মসূত্রে সেই উপাধি নিয়ে জন্মায়নি। অক্লান্ত পরিশ্রম ও মেধার সমন্বয়ে তা অর্জন করেছে। বিশিষ্ট বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসনকে লেখাপড়ায় উদাসিনতার অপরাধে যখন স্কুল থেকে বের করে দেওয়া হয়। তখন তাঁর মা কোটা সুবিধা দিয়ে আবার স্কুলে ভর্তি করার কথা ভাবেননি, বরং উৎসাহ দিয়ে ছেলেকে বলেছিলেন তুমি লেখাপড়া ও বুদ্ধিমত্তায় এতোই ভাল যে, তোমাকে পড়ানোর যোগ্যতা সেই স্কুল শিক্ষকদের নেই। বাংলাদেশে অনগ্রসর অংশ বলতে কাদের বুঝানো হয়েছে তা আমার বোধগম্য নয়। এরপরও নির্দিষ্ট কিছু এলাকাকে অনগ্রসর বলে ধরেই’নি, দায়িত্বজ্ঞান থেকে বলতে চাই, তাদের ও মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানেরা লেখাপড়া বা বুদ্ধিমত্তায় দেশের অন্যান্য ছেলেমেয়েদের চেয়ে কোন অংশেই কম নয়। এদেরকে পর্যাপ্ত শিক্ষার পরিবেশ ও জীবনমান উন্নয়নে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোসহ (পরিশ্রম করে) লেখাপড়ার উৎসাহ প্রদান করলে নিঃসন্দেহে এরাও একদিন যোগ্যতার প্রমাণ দিতে সক্ষম হবে। তবে তাদেরকে মনে রাখতে হবে পরিশ্রমই সুভাগ্যের প্রসূতি। বিশিষ্ট বিজ্ঞানী এডিসন প্রতিভায় বিশ্বাস করতেন না, বলতেন পরিশ্রমই হচ্ছে প্রতিভার মূল শক্তি। এদেশের প্রত্যেক শিক্ষার্থী ও যুব সমাজকে মেধাবী ও যোগ্য নাগরিক হিসাবে গড়ে তুলার লক্ষ্যেই হতে হবে উন্নত জাতি গঠনের প্রধান হাতিয়ার, বা সঠিক সিদ্ধান্ত। আমাদের দেশের নীতি-নির্ধারণী কমিশন তা চিন্তা-ভাবনা নাকরে সর্বক্ষেত্রে দলীয়করণ প্রথা চালু করেছে ও করছে, যা উন্নত জাতি গঠনে মোটেও কল্যাণকর নয়। সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলো এতই দলীয়করণ ও কোটাভিত্তিক করেছে যে, প্রতিভাবান ও যোগ্য মানুষের পদচারণার বড়ই অভাব। আজকের প্রবন্ধে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনার মধ্যদিয়ে এগোতে চাই। প্রবাদ আছে “শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড” অন্যদিকে কুশিক্ষাই হতে পারে ‘জাতির মৃত্যুদন্ড’ সুতরাং-বর্তমান প্রেক্ষাপটে একটু যোগ করে বলব ‘সুশিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড’ বা ‘নৈতিক শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড’। নৈতিক শিক্ষা ছাড়া কোন জাতির অস্তিত্ব কল্পনা করাটাও অবান্তর। আমাদের শিক্ষাঙ্গন বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়ার চেয়ে রাজনীতি বেশী। এছাড়া কোটাভিত্তিক ও দলীয় বিবেচনায় শিক্ষক নিয়োগের ফলে যোগ্য ও মেধাবী শিক্ষার্থীরা শিক্ষকতার মতো মহান পেশায় সুযোগ পাওয়া দুর্লভ। তবে এর ব্যতিক্রম যা হয় তা সংখ্যায় খুবই নগণ্য। কর্মক্ষেত্রে অযোগ্য, বা অদক্ষ শিক্ষকেরা অনেকাংশেই শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়। যার ফলাফল শিক্ষা ব্যবস্থায় আন্তর্জাতিক মানের ধারে-কাছে যাওয়াও সম্ভব হচ্ছেনা। হয়তো অনেকেই দ্বিমত পোষন করে বলতে পারেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে’তো বিসিএস ক্যাডার নিয়োগ দেওয়া হয়না। সে প্রতিষ্ঠানগুলো কেন আন্তর্জাতিক মানের প্রতিযোগীতায় শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বি হতে পারছেনা। আসলে সত্যি কথা বলতে গেলে সেখানেও অধিকাংশই মেধার চেয়ে রাজনৈতিক বিবেচনা প্রাধান্য পায়। তাছাড়া গোড়ায় গলদ থাকলে আগাগোড়া যা হবার তাই হয়। সাম্প্রতিক একটি জাতীয় পত্রিকায় উপসম্পাদকীয় কলাম পড়ে বিস্মিত না হয়ে পারছিনা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানে উপাচার্য আরেফিন ছিদ্দিকীর সাড়ে ৮ বছরে ৯০৭জন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, অনেকেই নাকি ¯œাতকোত্তর পাশ করতে পারে নাই। কথাটা যদি সত্যি হয় তাহলে (জাতির স্তম্ভ) জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়টিকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। একটি স্বাধীন জাতি হিসাবে এর চেয়ে হতাস্বাস আর কি হতে পারে। এর দায় নেবে কে? সরকার, উপাচার্য না আমরা জনগণ। খেসারত কিন্তু শেষমেশ জনগণকেই দিতে হয়। আমাদের রাষ্ট্র পরিচালনা কমিশনের সদস্যদের সন্তানেরা প্রায় বিদেশে লেখাপড়া করে। দেশীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস হয়ে গেলেও এনিয়ে তাদের কোন মাথা ব্যথা নেই। দলীয় আনুগত্য শিক্ষকের পাল্লা ভারী করাই হচ্ছে এদের মুখ্য বিষয়। কিন্তু আমরা যারা সাধারণ নাগরিক মধ্যবিত্ত ও নি¤œবিত্ত পরিবারের সন্তান। জোড়াতালি দিয়ে সংসার চালাই, আমাদের’তো বাধ্য হয়ে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে লেখাপড়া করতে হয়। কেউ’কি ভেবে দেখেছেন আমার মতো সাধারণ মানুষের সন্তানদের অবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? এর ধারা অব্যাহত থাকলে একদিন যেই শিক্ষকদের আমরা মানুষ গড়ার কারিগর হিসাবে জানি এবং সম্মান করি। সেই শিক্ষক মহোদয়গণ শিক্ষার্থীদের ক্লাসে কি পড়ায়, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে। কোটা বা দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ প্রাপ্ত কিছু (কর্মক্ষেত্রে) অযোগ্য শিক্ষকদের কারণে জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হোক, এবং মেধাবী ও যোগ্য শিক্ষক মহোদয়গণের অসম্মান হউক সেটা কারো কাম্য নয়। আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মেধার ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হলে শিক্ষার মান আরও অনেকগুণ বৃদ্ধি পাবে। সারাদেশে লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীরা যেখানে মেধাবী ও যোগ্য শিক্ষকের কাছে পড়ালেখার সুযোগ পাবে, সেখানে কমমেধাবী ও অযোগ্য শিক্ষকের কাছে শিক্ষা নিতে বাধ্য হচ্ছে এসব শিক্ষার্থীরা। এতে করে বর্তমান শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার গুণগত মান নিয়েও প্রশ্ন উঠা অস্বাভাবিক কিছু নয়। এসব শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসংখ্য মেধাবী থাকা সত্ত্বেও, মানসম্মত শিক্ষার অভাবে হাতেগোনা কয়েকজন ছাড়া অধিকাংশই বেকার হয়ে পড়ছে। যে যতবেশী সার্টিফিকেটের মালিক হচ্ছে, তার ততবেশী বেকারত্বের ঝুঁকি বাড়ছে। কর্মজীবনে কাজে আসছেনা (সোনার থাল) শীর্ষ বিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট। এর বাস্তবতা আমরা হাড়ে হাড়ে টের পায়। আমাদের দেশে ছোট-বড় যেকোন প্রকল্প বাস্তবায়নে পরামর্শ দাতা বিদেশ থেকে ধার করে আনতে হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে দেশের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে গঠনমূলক যুক্তিতর্ক উপস্থাপনে লিখিত বক্তব্য ছাড়া আমরা অসহায়। যার পরিণামে দেশের সম্পদ বিলিয়ে দিয়েও নিজেদের ন্যায্য অধিকার আদায়ে ব্যর্থ হই। এরকম হাজারো উদাহরণ দাঁড় করানো যায়। আমাদের দেশে কিছু ক্ষমতার পুঁজারী বুদ্ধিজীবি বা নীতি-নির্ধারকেরা কথায় কথায় ভারত-পাকিস্তানের উদাহরণ দেয়, কিন্তু বেমালুম ভুলে যায়। মালয়েশিয়ার কিংবদন্তি ড. মাহাথির স্যারের কথা। যিনি মালয়েশিয়ার হত-দরিদ্র জনগোষ্টীকে স্বল্প সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ চূড়ায় পৌঁছে দিয়েছে। তাঁর হাতে কোন আলাদ্দিনের চেরাগ বা যাদুবিদ্যা ছিলনা। শুধু শিক্ষাগত যোগ্যতা, সততা, অক্লান্ত পরিশ্রম, সুন্দর পরিকল্পনা ও প্রতিভার অধিকারী ছিলেন তিনি। বাংলাদেশে প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর। সেই সম্পদকে যথাযত কাজে লাগাতে চাইলে সাগরের অফুরন্ত মাছের মতো ঝাঁকে ঝাঁকে সৎ-যোগ্য, ত্যাগী, মেধাবী ও পরিশ্রমী মানুষের দরকার। দেশের মোট জনসংখ্যার ৫৫ ভাগ মেধাবী শিক্ষার্থীদের বাদ দিয়ে তৃণমূল মানুষের উন্নয়ন কিছুতেই সম্ভব নয়। গত তিন দশক ধরে আমরা লক্ষ করছি, কিছু ভোগ-বিলাশী অবৈধ উপার্জনকারী শাসক দলের নেতাকর্মী, ঘুষখোর আমলা ও লোভী ব্যবসায়ীদের সাথে তৃণমূলের বৈষম্য বাড়ছে। মোদ্দা কথা, একদিকে ত্রাণের হাহাকার, অন্যদিকে কালো টাকার পাহাড়। স্বাভাবিকভাবে বলতে হয়, স্বাধীন দেশের অসাধারণ কাহিনী। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইন “সংবিধান” এসব বৈষম্য সমর্থন করেকি’না। প্রায় সচেতন মানুষের কমবেশী জানা কথা, তবুও স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। সংবিধানের প্রস্তাবনায় বলা আছে যে, “গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এমন এক শোষণমুক্ত সমাজতান্ত্রিক সমাজের প্রতিষ্টা- যেখানে সকল নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত হইবে”। আরও বলা হয়েছে, প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ; এবং জনগণের পক্ষে সেই ক্ষমতার প্রয়োগ কেবল এই সংবিধানের অধীন ও কর্তৃত্বে কার্যকর হইবে। তবে ২৮ এবং ২৯ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, নাগরিকদের যে কোন অনগ্রসর অংশ যাহাতে প্রজাতন্ত্রের কর্মে উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব লাভ করিতে পারেন, সেই উদ্দেশ্যে বিশেষ বিধান-প্রণয়ন করা হইতে রাষ্ট্রকে নিবৃত্ত করিবে না। এখানে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, উপযুক্ত প্রতিনিধিত্বের কথা বলা হয়েছে। কোটাভিত্তিক ও দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ প্রাপ্তরা কতটুকু ‘উপযুক্ত প্রতিনিধি’ প্রশ্ন থেকেই যায়। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধা কোটার সুনির্দিষ্ট কোন দিক-নির্দেশনা নেই। সাম্প্রতিক মুক্তিযোদ্ধা কোটায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে সেসব পদে মেধাক্রম অনুযায়ী নিয়োগের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রীসভা। নিঃসন্দেহে এটা সরকারের ভাল উদ্যোগ, এর ফলে জাতি উপকৃত হওয়ার পাশাপাশি অন্তত কিছু সংখ্যক মেধাবী শিক্ষার্থীদের বেকারত্বের অবসান হবে। তবে কয়েকজন ৩৮তম বিসিএস পরীক্ষার্থীর সাথে কথা বলে যতটুকু জানতে পেরেছি, এরা সরকারের এই সিদ্ধান্তকে গুরুত্ব দিচ্ছেনা। এদের অভিযোগ এটা কোন স্থায়ী সমাধান নয়, বরং অসহায় মেধাবী শিক্ষার্থীদের বোকা বানানোর নতুন কৌশল। স্বাধীনতা যুদ্ধের পরবর্তী সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানে বা তাদের আত্মত্যাগের স্বীকৃতি স্বরূপ কোটা সুবিধা দিয়ে জাতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতেই পারে। কিন্তু দীর্ঘ ৪৫ বছর পর মুক্তিযোদ্ধাদের ছেলেমেয়েসহ নাতি-পুতিদের কোটা সুবিধা দেওয়া সরকারের সঠিক সিদ্ধান্ত কিনা বিবেচ্য বিষয়। আমি শুধু এটুকুই বলতে পারি, এনিয়ে দেশের লক্ষ লক্ষ মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। প্রিয় পাঠক আজকে যার সূত্র ধরেই আপনাদের কাছে আসার সুযোগ পেয়েছি, সে পল্লী গ্রামের শিক্ষানুরাগী পরিবারের মেধাবী সন্তান। অক্লান্ত পরিশ্রম ও পরিবারের সদস্যদের একান্ত প্রচেষ্টায় এই পর্যন্ত এসেছে। তার অসহায়ত্ব ও নিরব কান্নার ¯্রােত, এবং কোটা ৫৫ বনাম মেধা ৪৫ এর প্রতি তাকে যেরকম হিংসা-বিদ্বেষ ও ক্ষোভের আগুনে জ্বলতে দেখেছি, একজন ক্ষুদ্র লেখক হিসাবে বিবেকের দায়বোধ থেকে বিষয়টি তুলে ধরে নিজের দায়িত্ব পালন করেছি মাত্র। জানিনা সারাদেশে এরকম আরও কত হাজার হাজার মেধাবী শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবারে কতকিছু জ্বলছে। এ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলে মেধাবী ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার প্রতি অনীহার ঝুঁকি বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকেও মূখ ফিরিয়ে নিতে অনেকেই দ্বিধাবোধ করবেনা। এরা মনে করবে লেখাপড়ার চেয়ে রাজনীতির গুরুত্ব বেশী। তখন আমরা তুফান সরকারের মতো অহরহ নেতা পাব ঠিকই, কিন্তু জাতি হিসাবে দক্ষ জনশক্তির পরিবর্তে, দর্জি, মুচি ও কামলার গোডাউন ছাড়া কিছুই বানাতে পারবনা। নাইকোর মতো বিদেশী কোম্পানী এসে প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংস করে দিলেও দক্ষ বিশেষজ্ঞের অভাবে আমাদের করার কিছুই থাকবেনা। সুতরাং- নিজের অদক্ষ ছেলের চেয়ে সতিনের দক্ষ সন্তান যদি জাতির ভাগ্য বদলে দিতে পারে, তাতে দোষের কি। এক সময় প্রবীণ রাজনীতিবিদদের মূখে প্রায় শুনতাম, ব্যক্তির চেয়ে দল বড় দলের চেয়ে দেশ বড়। তাই যদি সত্যি হয়, তাহলে লক্ষ লক্ষ মেধাবী শিক্ষার্থীদের অবজ্ঞা করে স্বাধীন দেশে কোটা বা দলীয়করণ প্রতিরোধ করা অত্যাবশ্যক। সমাজে ধনী-গরীব বৈষম্য কমাতে দূর্নীতি, দখলবাজি ও টেন্ডারবাজিকে রহিত করতে হবে। সবাই মিলে সুন্দর, সমৃদ্ধ ও উন্নত জাতি গঠনে এক সাথে কাজ করাই হবে জাতির মঙ্গল। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় নিরস্ত্র বীর মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানী সশস্ত্র হানাদার বাহিনীর সাথে প্রাণপণ যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন, তাঁরা জাতির শ্রেষ্ট ও গর্বিত সন্তান। এদের মধ্যে যারা যুদ্ধকালিন সময়ে শহিদ হয়েছেন, এবং তদনন্তর যারা পরলোক গমন করেছেন আমি তাদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। আর যারা এখনও বেঁচে আছেন, তাদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা আজীবন থাকবে। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্ন ছিল গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে একটি শোষণমুক্ত স্বাধীন সমৃদ্ধ রাষ্ট প্রতিষ্টা করা। তাদের সেই স্বপ্ন পূরণে এদেশের প্রত্যেক নাগরিকের দায়বদ্ধতা যেমন রয়েছে, তেমনি তাদের ছেলেমেয়ে নাতি-পুতিরাও এর দায় এড়াতে পারেনা। দেশকে এগিয়ে নিতে হলে লোভ-লালসা পরিহার করে সৎ-যোগ্য, পরিশ্রমী ও মেধাবীদের অগ্রধিকার ভিত্তিতে দেশের উন্নয়নে অংশীদারিত্বের সুযোগ দিতে হবে। বিশেষ করে আমাদেরকে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজেকে যোগ্যতার পরিচয় দিতে হবে। কোটা সুবিধা আদায়ের পরিবর্তে, সরকারকে দলীয়করণ ও কোটা বাতিলের সুপারিশ করতে হবে। এক্সট্রা গোল নিয়ে মাঠে নামলে সর্বোচ্চ গোল দাতা হওয়া যায়। কিন্তু প্রকৃত বিজয়ের স্বাধ পাওয়া যায় না। বিজয়ের স্বাধ পেতে হলে খেলার মাঠে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকতে হয়। আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি বীরের সন্তানেরা বীরের মতো লড়াই করবে, দেশের তৃণমূল মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য। অসত্যের বিরুদ্ধে সত্যের জন্য, অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের জন্য, জুলুমের বিরুদ্ধে মজলুমের জন্য। অত্যাচারীর অট্রহাসির বিরুদ্ধে নির্যাতিতদের আর্তনাদ আমলে নিতে হবে। পরিশেষে সবাইকে বানবাসি অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ রইল।
লেখক: কলামিস্ট ও প্রতিষ্টাতা পরিচালক, দৈনিক কক্সবাজার বাণী।
মোবাইল:-০১৫৫৮৩৬৩৩৪৩,
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।