ডেস্ক নিউজ:
আর সেটা যদি হয় কোনো এক সাধারণ গ্রাম থেকে বেড়ে ওঠা দুরন্ত কিশোর,তাহলে তো কথাই নেই। কিন্তু জীবনে হতাশার কোনো সুযোগ নেই। লক্ষ্য ঠিক রেখে সঠিক পরিকল্পনা মাফিক এগিয়ে যেতে পারলে,জন্ম যেখানেই হোক না কেন,সব কঠিনকে জয় করা সম্ভব।
অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম সেরা ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি, সিডনিতে পিএইচডি গবেষণারত সৌমেন বড়ুয়া শুধু অধ্যয়ন নয়, একই সময় তিনি পূর্ণকালীন চাকরিও করছেন অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম টেলিকম প্রতিষ্ঠান টিপিজি টেলিকমে। বর্তমানে তিনি ন্যাশনাল প্রজেক্ট-এর অধীনে স্টেট ভিত্তিক ফাইবার নেটওয়ার্ক পরিকল্পনার দায়িত্বে নিয়োজিত। পূর্ণকালীন চাকরি করেও যে সর্বোচ্চ ডিগ্রির আশা করা যায়, সৌমেন বড়ুয়া সেটা প্রমাণ করে যাচ্ছেন।
বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাইয়ের দমদমা গ্রামে কোনো এক মধ্যবিত্ত পরিবারে বাকি দশটা গ্রামের ছেলের মতোই সৌমেন দুরন্ত শৈশব পার করেছেন। ছোট বেলা থেকেই সব পরীক্ষায় প্রথম হওয়া সৌমেন কখনোই নিজের মধ্যে ভিন্ন হওয়ার নেশা বিসর্জন দেননি।
গ্রামে সব প্রতিকূলতাকে জয় করে ভর্তি হন ঢাকার স্বনামধন্য নটরডেম কলেজে। এর পর ভর্তি হন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইলেকট্রিক অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি শেষ করে যোগ দেন বাংলাদেশের সেরা টেলিকম কোম্পানি গ্রামীণফোনের প্ল্যানিং অ্যান্ড ডিজাইন ডিভিশনে। কিন্তু সৌমেন এখানেই থেমে থাকতে চাননি। সর্বোচ্চ বেতন আর প্রতিষ্ঠানের চাকরি ছেড়ে তিনি জার্মানি পাড়ি জমান উচ্চশিক্ষার জন্য।
জার্মানির যে কয়েকটি প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয় প্রযুক্তি ও গবেষণা খাতে ব্যাপক অবদান রেখে চলছে তাদের মধ্যে ডার্মস্টাড ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি (টিইউডি) অন্যতম। ১৮৮৩ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই বিশ্বের প্রথম ইলেকট্রিকাল ডিগ্রি প্রদান করা হয়।
সেখান থেকে ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিষয়ে মাস্টার অব ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করে সৌমেন সরাসরি চলে যান অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি, সিডনিতে পিএইচডি করার জন্য। গবেষণার পাশাপাশি একই প্রতিষ্ঠানে তিনি সহকারী শিক্ষক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
এরই মধ্যে সৌমেন পেয়ে যান অস্ট্রেলিয়ার সর্বোচ্চ স্কলারশিপ ‘অস্ট্রেলিয়ান পোস্ট গ্রাজুয়েট অ্যাওয়ার্ড’। গবেষণা আর খণ্ডকালীন শিক্ষকতা মিলিয়ে চলে যাচ্ছিল ভালো মতোই। কিন্তু আবার কিছুদিন পর সুযোগ পেয়ে যান অস্ট্রেলিয়ার এ যাবৎ কালের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগের সরকারি প্রতিষ্টান ‘ন্যাশনাল ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক’-এ কনসালটেন্ট হিসেবে যোগদানের জন্য।
এই অবস্থায় তাঁর পিএইচডি চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়ে যায়। চাকরির সুযোগ পেলেও তিনি কখনোই সর্বোচ্চ ডিগ্রির স্বপ্ন ছেড়ে দেননি। সৌমেন সিদ্ধান্ত নেন, দুটোই চালিয়ে যাবেন। অবশ্যই তাঁর প্রফেসর তাঁকে এটার জন্য অনুমতি দিতে হবে। প্রফেসর অনুমতি দিলে সৌমেন এরপর আবার যোগ দেন অপর অস্ট্রেলিয়ান কোম্পানি টিপিজি টেলিকমে।
সব কিছু বদলে যায়। সময় ,চাকরি, নিজের অবস্থান। কিন্তু সৌমেন কখনোই নিজের স্বপ্নের পরিবর্তন করেননি। একটার পর একটা সাফল্য তাকে আরো আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি পিএইচডি গবেষণার দ্বিতীয় স্তর অতিক্রম করেছেন। যদিও তিনি অস্ট্রেলিয়াতে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি পেয়েছেন, তারপরও তার ইচ্ছে একসময় দেশে ফিরে নিজের গ্রামের মানুষের জন্য কিছু করা।
সৌমেন মনে করেন, উচ্চশিক্ষা বিশেষ করে পিএইচডি জন্য অস্ট্রেলিয়া নিঃসন্দেহে একটি ভালো গন্তব্য। এখানে পিএইচডি শেষ করে স্থায়ী ভাবে বসবাসের সুযোগ রয়েছে। তবে পিএইচডি অফার পাওয়া অতটা সহজ না, বিশেষ করে আন্তর্জাতিক ছাত্র ছাত্রীদের জন্য।
উন্নত জীবনযাত্রার মান, নাগরিক সুবিধা, ভালো অবকাঠামো থাকায় অনেকেই অস্ট্রেলিয়াতে গবেষণা করতে আসতে চায়। আর সেজন্য প্রতিযোগিতাও কিছুটা বেশি। কিন্তু সঠিক পরিকল্পনা করে এগিয়ে গেলে সেটা অসম্ভব কিছু নয়।
সৌমেন জানান, অস্ট্রেলিয়াতে পিএইচডি পাবার জন্য প্রথম যেটা দরকার সেটা হচ্ছে একাডেমিক ভালো ফলাফল এবং ভালো কনফারেন্স অথবা জার্নালে প্রকাশিত কয়েকটা পেপার। এই দুটো থাকলে মোটামুটি সে বাকিদের থেকে অনেক এগিয়ে থাকে। ভর্তির জন্য প্রথমে ইউনিভার্সিটি প্রফেসর কে ই-মেইলে যোগাযোগ করতে হয়।
এরপর প্রফেসর যদি গ্রহণ করেন,তাহলে উনি নিজেই পরবর্তী করণীয় ঠিক করে দেবেন। ই-মেইল করার সময় কিছু ব্যাপার লক্ষ রাখা উচিত যেন সেটা প্রফেসরের দৃষ্টি আকর্ষণ হয়। আবার আন্তর্জাতিক ছাত্রছাত্রীর ক্ষেত্রে চাকরির কিছু সীমাবদ্ধতাও আছে। যাদের স্থায়ী বসবাসের অনুমতি আছে তাদের জন্য পূর্ণকালীন চাকরি করারও অনুমতি আছে।
শুধু স্বপ্ন থাকলে চলবে না। দরকার সেটার বাস্তবায়ন। স্বপ্নের কখনো বিনাশ হওয়া উচিত না। জন্ম হোক যথা তথা,কর্ম হোক ভালো।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।