হাফেজ মুহাম্মদ কাশেম, টেকনাফ :

টেকনাফের সাবরাং ও শাহপরীরদ্বীপে চোরাইপথে আদম পারাপারের ৭টি ঘাটে ৩৬ জন দালাল সক্রিয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাছাড়া সাবরাং মানব পাচারের এয়ারপোর্ট খ্যাত খুরেরমুখ, কাটাবনিয়া ও নয়াপাড়া ৩টি ঘাটে আরও বেশ কয়েকজন সক্রিয় দালাল। এদের কাজ হচ্ছে মানবতার দোহাই দিয়ে মাথাপিছু বাংলাদেশী ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা নিয়ে চোরাইপথে বাংলাদেশে নিয়ে আসা। এদিকে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জাহিদ হোসেন ছিদ্দিক ৩০ আগস্ট বুধবার দুপুরে দালালদের ধরতে সাবরাং অভিযান পরিচালনা করেছেন।

জানা যায়, সাগর দিয়ে চোরাইপথে মালয়েশিয়ায় মানব পাচারের এয়ারপোর্ট খ্যাত ছিল শাহপরীরদ্বীপ, খুরেরমুখ ও কাটাবনিয়া। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সমুহের অব্যাহত অভিযানে মালয়েশিয়ায় মানব পাচার বর্তমানে শুন্যের কোটায়। এখন শুরু হয়েছে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ। মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে (রাখাইন স্টেট) অব্যাহত সহিংস ঘটনায় মিয়ানমার থেকে দলে দলে সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে। বিজিবি, পুলিশ ও কোস্টগার্ডের হাতে আটক হচ্ছে। তাঁদের ভাষায় মানবিক সহায়তা (খাবার, ঔষধ, পানি) দিয়ে পুশব্যাক করা হচ্ছে। সীমান্তের আইন শৃংখলা বাহিনীর প্রতিরোধ সত্বেও উল্লেখিত ঘাট সমুহের দালালদের সহযোগিতায় রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। আরও হাজার হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করার অপেক্ষায় আছে।

সেন্টমার্টিনদ্বীপ থেকে হোয়াইক্যং পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরের মোহনা এবং নাফ নদীর প্রশসস্থতা তুলনামুলক বেশী চওড়া। ইচ্ছামত তাড়াতাড়ি অল্প সময়ের মধ্যে এপারে চলে আসার সুযোগ কম। উপরন্ত এই সীমান্তে বিজিবি, পুলিশ ও কোস্টগার্ডের সজাগ-সতর্কতা বেশী। তাই ২৪ আগস্ট মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে (রাখাইন স্টেট) অব্যাহত সহিংস ঘটনার পর সেন্টমার্টিনদ্বীপ থেকে হোয়াইক্যং পর্যন্ত সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে তুলনামুলক রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ কম ঘটেছে।

কিন্ত পরিস্থিতি দালালদের কারণে খুব দ্রুত পাল্টে গেছে। সেন্টমার্টিনদ্বীপ, শাহপরীরদ্বীপ, সাবরাং, টেকনাফ, হ্নীলা ও হোয়াইক্যং দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বাড়ছে।

বিশেষ করে শাহপরীরদ্বীপ থেকে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ভয়াবহ রুপ নিচ্ছে বলে গোপন সুত্রে খবর পাওয়া গেছে। এমনকি ৩০ আগস্ট রাতে শতাধিক নৌকা যোগে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করার ব্যাপক প্রস্ততি নেয়া হয়েছে। রোহিঙ্গাদের এনে সুযোগ বুঝে সেন্টমার্টিনদ্বীপ, শাহপরীরদ্বীপ, নয়াপাড়া, খুরেরমুখ, কাটাবনিয়া, মহেশখালীয়াপাড়া, তুলাতলী, লম্বরী, মিঠাপানিরছড়া, রাজারছড়া, শীলখালী, শামলাপুর, মনখালী, ছেপটখালী, ইনানীসহ বাংলাদেশ উপকুলের বিভিন্ন পয়েন্টে নামিয়ে দেয়া হবে। মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে (রাখাইন স্টেট) অব্যাহত সহিংস ঘটনায় মিয়ানমার থেকে ২টি নৌকা বোঝাই করে রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশু বাংলাদেশের টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীরদ্বীপ পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে নৌকা ডুবির ঘটনা ঘটে। তম্মধ্যে ১টি নৌকায় ১৯ জন এবং আরেকটিতে ২৫ জন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশু ছিল। ২টি নৌকার মধ্যে ১টি শাহপরীরদ্বীপ মিস্ত্রীপাড়া ঘাটের নৌকা। ৩০ আগষ্ট সকালে উপজেলার শাহপরীরদ্বীপ এলাকার লোকজন নাফনদীর পশ্চিমপাড়া সীমান্তের কিনারায় ৪টি মৃত দেহ দেখতে পেলে স্থানীয় বিজিবিকে খবর দেয়। খবর পেয়ে একদল বিজিবির উপস্থিতিতে স্থানীয় লোকজন দুই শিশু ও দুই নারীসহ ৪ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করেন। মৃত দেহগুলো মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিক বলে নিশ্চিত হওয়া গেলেও নাম ঠিকানা পাওয়া যায়নি। এরপর টেকনাফ থানা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। শাহপরীরদ্বীপ মিস্ত্রীপাড়া, জেটিঘাট, ঘোলারপাড়া ও জালিয়াপাড়ায় এ ৪টি আদম পারাপারের চোরাই ঘাটে ৩৬ জন দালাল সক্রিয় রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তম্মধ্যে জালিয়াপাড়া ঘাটে ১৫ জন, ঘোলাপাড়া ঘাটে পিতা-পুত্র মিলে ৪ জন, জেটি ঘাটে ৩ জন এবং মিস্ত্রীপাড়া ঘাটে ১৪ জন। তাছাড়া সাবরাং মানব পাচারের এয়ারপোর্ট খ্যাত খুরেরমুখ, কাটাবনিয়া ও নয়াপাড়া ৩টি ঘাটে আরও বেশ কয়েকজন সক্রিয় দালাল।

সাবরাং ইউপি চেয়ারম্যান নুর হোসেন জানান স্থানীয় কিছু ট্রলার মালিক বিজিবি পুলিশ ও কোস্টগার্ডের চোখকে ফাঁকি দিয়ে মিয়ানমারে গিয়ে অবৈধভাবে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করার তৎপরতা চলছে। বিশেষ করে ৩০ আগস্ট সকালে সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীরদ্বীপ সৈকত থেকে ৪ রোহিঙ্গা নারী-শিশুর ভাসমান লাশ উদ্ধার করার ঘটনার পর প্রশাসন আরও বেশী তৎপর হয়ে উঠেছে। দেশের স্বার্থে পুরো বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করে কারা এসব অবৈধ কাজের সাথে জড়িত প্রশাসনের কাছে এদের তালিকা দেয়া হয়েছে।

তিনি আরও জানান ট্রলার মালিকদের অপতৎপরতার বিষয়টি জানতে পেরে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জাহিদ হোসেন ছিদ্দিক ৩০ আগস্ট বুধবার দুপুরে সাবরাং অভিযান পরিচালনা করেন। তবে কোন দালালকে ধরতে পারেননি। আগের দিন ২৯ আগস্ট ২ জন দালালকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছিল।

উল্লেখ্য, গত ১৯ আগস্ট শনিবার দুপুরে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোঃ আলী হোসেন টেকনাফে এসে জরুরী আইন শৃংখলা সভা করে যে কোন মুল্যে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ প্রতিরোধ করতে কঠোরভাবে নির্দেশ এবং এ কাজে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার হুশিয়ারী দিয়েছিলেন।

রাত ১০টায় এ রিপোর্ট লেখার সময় সাবরাং ও শাহপরীরদ্বীপ দিয়ে অবৈধভাবে ব্যাপক রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করার প্রস্ততি বিষয়ে জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জাহিদ হোসেন ছিদ্দিক বলেন দালালদের তালিকা আমার হাতে আছে। তাদেরকে ধরতে অভিযান চলছে। দালালদের প্রস্ততি নস্যাৎ করে দেয়া হবে। ##