হাফিজুল ইসলাম চৌধুরী :

বিদ্যালয়ের চারপাশে সবুজ প্রকৃতি। অনেকে হারিয়ে গেছেন সোনালি স্মৃতির রাজ্যে। অন্যদিকে চলছে অতিথি, ছাত্র-শিক্ষক ও সহপাঠীদের তুমুল আড্ডা। বিকেলে নেচে গেয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ। সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) কক্সবাজারের রামুর অর্ধশত বছরের পুরোনো গর্জনিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মিলনমেলায় এভাবে মেতেছিলেন নবীন ও প্রবীণেরা। সকালে জাতীয় সঙ্গীতের শুরে শুরে-জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে আরম্ভ হয় এই মিলনমেলা। এর পর একে একে চলে আলোচনা সভা, কবিতা আবৃতি, স্মৃতিচারণ, প্রীতিভোজ ও সবশেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ও আকর্ষণ ছিলেন বিদ্যালয়ের কৃতি ছাত্র, লক্ষীপুরের সহকারি জজ মাইনুল ইসলাম লিপু। তাঁকে উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে সংবর্ধণা দেওয়া হয়। তিনি বক্তব্যে বলেন, প্রিয় শিক্ষকদের অবদানের কারণে এতোদূর পৌঁছা। শিক্ষার্থীদেরকে শুধু সার্টিফিকেট অর্জন করলে চলবে না। জ্ঞান অর্জন করতে হবে। আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে গর্জনিয়ার ছাত্র ছিল দু’একজন। বর্তমানে অসংখ্য শিক্ষার্থী দেশের নানা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। গ্রামের কৃষক-শ্রমিকের সন্তানদের সঠিক গাইড লাইন দিলে তাঁরাও সফলতার শীর্ষে পৌঁছাতে পারবে।

অনুষ্ঠানের উদ্বোধক ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এএইচএম মনিরুল ইসলাম বলেন, তরুণ প্রাক্তন ছাত্রদের এই আয়োজনে তিনি অভিভূত। এইজন্যে গুরুত্বপূর্ণ কাজে না গিয়ে অনুষ্ঠানে যোগ দেয়া। ইসলামি ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট এজিএম কামরুল ইসলাম প্রধান আলোচকের বক্তব্য দেন।

বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ ও অনুষ্ঠানের সভাপতি তৈয়ব উল্লাহ চৌধুরী বলেন, ১৯৪৪ সালে বৃটিশ-ভারত আমলে প্রখ্যাত জমিদার হাকিম মিয়া চৌধুরী অঁজপাড়া গাঁয়ে উচ্চবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। ১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বিদ্যালয়। ১৯৭৫ সালে রূপ নেয় পরিপূর্ণ উচ্চবিদ্যালয়ে। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে হাকিম মিয়া চৌধুরীর ছেলে বৃহত্তর গর্জনিয়ার প্রয়াত চেয়ারম্যান ইসলাম মিয়া চৌধুরী ও ইলিয়াছ মিয়া চৌধুরীও অবদান রেখেছেন। সেই থেকে আজ অবদি এটি শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে। তিনি আশা রাখেন যে, শুধু হান্নান বা লিপু নয় গর্জনিয়া উচ্চবিদ্যালয় থেকে লেখাপাড়া করা শত শত শিক্ষার্থী- আগামীতে সমাজের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার পাশাপাশি দেশের কল্যানেও কাজ করবেন। এগিয়ে আসবে রাজনীতিতেও।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক আবুল কাশেম মো.ফজলুল হক বলেন, গর্জনিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের ইতিহাস অনেক পুরোনো। রামুতে খিজারি আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের পরেই দুর্গম এলাকায় এই বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। ছাত্র-ছাত্রীদেরকে সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। নিজেকে তৈরী করতে হবে। মেধার ভিন্নতা রয়েছে। কিন্তু প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে সবার মনকে শানিত করতে হবে। আর মিথ্যা কথা বলা পরিহার করতে হবে। আমরা চায় ভাল মানুষ।

অনুষ্ঠানে দিকনির্দেশনা মূলক বক্তব্য দিয়ে সকলের হৃদয়ে স্থান করে নেন-বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র ও হাটহাজারী বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের প্রভাষক সাহাব উদ্দিন। তিনি বলেন, স্বপ্ন দেখতে হবে জেগে জেগে। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে নয়। সমালোচনাকে আলোচনায় পরিণত করতে হবে। চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করলে অবশ্যই সফলতা আসবে। উদ্যোগি তরুণরা চাইলে অনেক কিছুই করতে পারেন। যার প্রমান এই মিলনমেলা।

মিলনমেলা উদযাপন পরিষদের সদস্য সচিব হাফিজুল ইসলাম চৌধুরীর প্রানবন্ত ও কাব্যময় সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন-বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক কায়সার জাহান চৌধুরী, বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সদস্য হাবিব উল্লাহ চৌধুরী ও প্রাক্তন ছাত্র নাইক্ষ্যংছড়ি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক-দিদারুল আলম। অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি হিসাবে অংশ নেন-মহিউদ্দিন সিকদার, আবছার কামাল, নাইক্ষ্যংছড়ির উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম, প্রকৌশলি বেলাল উদ্দিন সাহেদ, কলিম উল্লাহ, জনি সিকদার, সরওয়ার কামাল প্রমূখ। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন-মিলনমেলা উদযাপন পরিষদের আহবায়ক ইমরান হোসেন।

অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন-প্রাক্তন শিক্ষার্থী রিয়াজ উদ্দিন সিকদার, নুরুল আজিজ, ফারজানা ইসলাম সুইটি, মো.ইয়াছিন, শহীদুল্লাহ শহীদ, ইসমাঈল হোসেন, ইকবাল হোসাইন স্বাধীন ও ওয়াসিমুল আলম চৌধুরী। কবিতা আবৃতি করেন ফাহমিদা হাবিব চৌধুরী। অনুষ্ঠানের শুরুতে কোরআন তেলোয়াত করেন সাঈদুর রহমান। এর পর সংবর্ধিত অতিথিকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন আজিজুল হক আজিজ ও ফারজানা ইসলাম সুইটি।

মিলনমেলায় অংশ নেওয়া আল ইফাত সিকদার, আবু হান্নান, তামিমা সুলতানা, নাসরিন জাহান, আবদুল্লাহ আল মারুফ, আবু তারেক ও ইনজামাম উল হক চৌধুরী বলেন, ‘পুরোনো বন্ধুদের দেখে খুব ভালো লাগছে। মনে হচ্ছে আবার পুরোনো দিনে ফিরে গেছি।’

মিলনমেলা উদযাপন পরিষদের সদস্য সচিব হাফিজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘অর্ধশত বছরের পুরোনো গর্জনিয়া উচ্চবিদ্যালয় থেকে বহু শিক্ষার্থী কৃতকার্য হয়ে বেরিয়েছেন। তাঁদের সবাইকে একটি আসরে এক করার ইচ্ছা আছে ভবিষ্যতে। এ জন্য সামনে আরও বড় আকারের অনুষ্ঠান করার পরিকল্পনা নিয়ে, সংশ্লিষ্ট সবাইকে উদ্যোগী হতে হবে।

এদিকে মিলনমেলায় বিকেল থেকে রাত আটটা পর্যন্ত ইচকান্দার মির্জার সার্বিক পরিচালনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পি এ্যানি বড়–য়া ও রাহুলসহ অনেকেই। শেষ পর্যায়ে গর্জনিয়ার কৃতি সন্তান ইচকান্দার মির্জা নিজেই সমধুর গান গেয়ে মঞ্চ মাতিয়ে তোলেন।