বিনোদন ডেস্ক
ওর মধ্যে ছেলেমানুষি কাজ করত বেশি। কখনোই তাকে স্থির থাকতে দেখিনি। খুব প্রাণচঞ্চল একজন মানুষ ছিল। দেশের সিনেমার ক্ষণজন্মা নায়ক সালমান শাহকে নিয়ে বললেন তাঁর বহু সিনেমার সহশিল্পী শাবনূর। বুধবার এসব কথা বলেন তিনি।
১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকায় মারা যান ওই সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় নায়ক সালমান শাহ। চার বছরের অভিনয়জীবনে তিনি মাত্র ২৭টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। জীবনের প্রথম সিনেমা কেয়ামত থেকে কেয়ামত-এ মৌসুমীর সঙ্গে জুটি হয়ে পর্দায় আবির্ভাব হলেও দ্বিতীয় সিনেমা ‘তুমি আমার’-এ নায়িকা হিসেবে পেয়েছিলেন শাবনূরকে। এরপর তাঁরা দুজন জুটি হয়ে ১৩টি সিনেমায় অভিনয় করেন। এ জুটির বেশির ভাগ সিনেমা ব্যবসায়িক সফলতা পাওয়ার পাশাপাশি দর্শকনন্দিতও হয়েছে।
সিনেমায় কাজ করতে গিয়ে সালমানের সঙ্গে দারুণ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয় শাবনূরের। এই বন্ধুত্ব তাঁদের দুজনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। দুই তারকার পরিবারের সদস্যরাও একে অপরের সঙ্গে দারুণ সম্পর্কে আবদ্ধ হয়েছিলেন। এক সময়ের দাপুটে চিত্রনায়িকা শাবনূর বললেন, সালমানের বউ সামিরা ছিল আমার খুব ভালো বন্ধু। আবার আমার মায়ের সঙ্গে সালমানের খুব শ্রদ্ধার সম্পর্ক ছিল। আমরা একসঙ্গে ঘুরতে যেতাম। দেশের মানুষের কাছে সালমান শাহর জনপ্রিয়তা যেমন তুঙ্গে ছিল, তেমনি মানুষ হিসেবেও ছিল সে অনন্য।
সালমান মানুষ হিসেবে খু্ব শৌখিন ছিলেন বলেও জানান শাবনূর। তিনি বলেন, সালমান টাকা-পয়সা নিয়ে ভাবত না। যা আয় করত, তা-ই খরচ করে ফেলত বলা যায়। গাড়ির প্রতি সালমানের ছিল খুব বেশি আগ্রহ। বাজারে নতুন গাড়ি এলেই তার কিনতে হবে। সালমান গাড়ি চালাতেও খুব ভালোবাসত। শুটিং শেষে প্রায়ই সামিরা ও আমার মাসহ গাড়িতে ঘুরতে বের হতাম।
শাবনূরকে সালমান ‘পিচ্চি’ বলেই ডাকতেন বলে জানান। সালমানের নিজের ছোট বোন ছিল না। তাই নাকি শাবনূরকে ছোট বোনের মতোই দেখতেন। শাবনূর বলেন, সালমান শাহ আর আমাকে নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলেছেন। তাঁদের উদ্দেশে বলতে চাই, এসবের কোনোটিই সত্য নয়। সালমানের কোনো বোন ছিল না। তাই সে আমাকে তার ছোট বোন হিসেবেই দেখত। আমাকে সে পিচ্চি বলে ডাকত। সালমানের মা-বাবাও আমাকে খুবই আদর করতেন। সালমানের কারণে তাঁরা আমাকে তাঁদের মেয়ে হিসেবেই দেখতেন। সালমান অনেক বড় মনের মানুষ ছিল। বয়সে বড় সবাইকে সে যথেষ্ট সম্মান করত। কোনো অহংকার তার মধ্যে ছিল না। অনেক বেশি ভালো ছিল। সহশিল্পীদের সবার প্রতি খুব আন্তরিক আর কাজপাগল একটা ছেলে ছিল। আমাদের দুজনের বোঝাপড়াটা ছিল চমৎকার। বলতে পারেন, একে অন্যের চোখের ইশারা বুঝতে পারতাম।
সালমান খুব ফুর্তিবাজ ছিলেন। শুটিংয়ে ফাঁকে দেখা যেত হুট করে সবাইকে নিয়ে খাওয়াদাওয়া আর আড্ডায় মেতে থাকতেন। শাবনূর বলেন, আমরা যখন কক্সবাজার শুটিং করতাম, তখন রাতে প্রায়ই সাগরপাড়ে ক্যান্ডেললাইট ডিনার করতাম। আমাদের সেই আড্ডায় দুই পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও অন্য সহশিল্পী এবং পরিচালকও থাকতেন। খুব হইচই করতাম আমরা। এটা একেবারে সত্যি কথা, সালমানকে আমি ভাই ছাড়া আর অন্য কোনো চোখে দেখতাম না। সালমানের মৃত্যুর পর কিছু লোক আমাকে জড়িয়ে ব্যবসা করতে চেয়েছে।
কিছু সাংবাদিকও আমাদের সম্পর্ক নিয়ে নানা ধরনের মুখরোচক গল্প ছেপেছেন। এটা করে কী লাভ হয়েছে, আমি জানি না। আমি আমার ক্যারিয়ারটা অনেক কষ্ট করে তৈরি করেছি। তিল তিল করে গড়ে তুলেছি। কিছুসংখ্যক লোক গুজব ছড়িয়ে আনন্দ পাওয়ার চেষ্টা করেছে।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।