মোহাম্মদ নাজমুল হোছাইন :

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল অর্থাৎ টেকনাফ তথা কক্সবাজার জেলায় অদূর ভবিষ্যৎ এ একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী/জাতির আবির্ভাব হতে পারে এমন ধারনা করাটা নিতান্তই অমূলক নয়।বর্তমান মায়ানমার সীমান্তে চলমান পরিস্থিতি তারই অশনিসংকেত। বিগত কয়েক বছরে যে হারে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঘটেছে বাংলাদেশে তারই কুফল ভয়ংকর ভাবে দৃশ্যমান হয়েছে ইতোমধ্যে। মায়ানমার সীমান্তে উৎসারিত সর্বনাশা ইয়াবার করাল থাবায় জর্জরিত ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষাগত মিল থাকায় এই জনগোষ্ঠী খুবই সাবলীল ভাবে মিশে গেছে বাঙালী জনপদের সাথে। ফলশ্রুতিতে তারা বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে মধ্যপ্রাচ্য সহ বিভিন্ন দেশে পাড়ি দিয়ে বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে লিপ্ত হচ্ছে। যার ঘানি টানতে হচ্ছে বাংলাদেশিদের। কক্সবাজার জেলার স্থানীয় নির্বাচন গুলোতে তাদের প্রভাব দৃশ্যমান হবে সেদিন আর বেশি দূরে নয়।

মানবাধিকার, মানবিকতার ধারনা অনেক পরিব্যাপ্ত। মানবিকতার চর্চা করতে গিয়ে নিজের ঘরের যেন ক্ষতি না হয় সেদিকেও সজাগ থাকা বাঞ্চনীয়। সেদিন ইহুদীদের প্রতি এত দরদ না দেখালে হয়ত ফিলিস্তিনীদের এমন করুণ পরিণতি হতো না আজকে। ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইসরাইল রাষ্ট্রের পত্তনের পটভূমি অনেকটাই বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ এর সাথে মিলে যায়। যেখানে ১৯০৫ থেকে ১৯১৪ সাল পর্যন্ত ফিলিস্তিনে ইহুদীদের সংখ্যা ছিলো মাত্র কয়েক হাজার সেখানেই ১৯৪৮ সালে স্বাধীন ইসরায়েল রাষ্ট্রের উত্থান ঘঠে। এ যেন ‘খাল কেটে কুমির আনা’ অথবা ‘দুধ দিয়ে কাল সাপ পোষার’ নামান্তর। আমার প্রিয় স্বদেশ সেই পথেই হাঠছে কিনা এমন প্রশ্ন প্রতিনিয়ত মনের মধ্যে কাটা হয়ে বিঁধছে।

তাছাড়া বিশ্ব মোড়লদের (হায়েনা) লিপ্সু দৃষ্টি বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চল এবং কক্সবাজার জুড়ে পড়েছে সে অনেক আগেই। মানবাধিকার রক্ষার দোহায় দিয়ে তারা এসব অঞ্চলে দোকান খুলে বসেছে তাও অনেক আগে থেকেই। কথায় আছে, গরীবের বউ নাকি সবার ভাবি হয়। মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উপর গনহত্যা বন্ধের জন্য মিয়ানমার সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করার চাইতে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন বাংলাদেশ অংশে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন এর ব্যাপারে বেশি আগ্রহী মর্মে প্রতীয়মান হয়। তারা যে একটি সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে আগাচ্ছে না তা হলফ করে কেউ বলতে পারবে না।

স্বাভাবিকভাবেই চলমান রোহিঙ্গা সমস্যা মানবিকতার দৃষ্টিকোন থেকে খুবই স্পর্শকাতর একটি ইস্যু। একই সাথে বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়নের পথে এটি অন্তরায়। কাজেই বাংলাদেশের জনগন তথা সরকারের আবেগের বশবর্তী না হয়ে কূটনৈতিক দূরদৃষ্টি দিয়েই রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান করাটা সমীচীন হবে।

লেখক- ১০ম সহকারী জজ সুপারিশ প্রাপ্ত