–ডঃ সৈয়দ এস, আর কাশফি

কবি শফিকুল ইসলামের তবুও বৃষ্টি আসুক অনন্য সুন্দর কাব্যগ্রন্থে সুলতা প্রসঙ্গ অনন্য কাব্যরস সৃষ্টি করেছে। কবির ব্যাকুল মন সুলতার মাঝেই অন্তহীন প্রেম খুঁজে বেড়িয়েছে ও আশা নিরাশার দ্বন্ধে আন্দোলিত হয়েছে। এখানে কবির কাব্য প্রেয়সী সুলতা এক অনিন্দ্য মাধুরীময় নারী। প্রেমিক যখন হৃদয়ভরা প্রেম নিয়ে তার প্রেমাস্পদকে খোঁজেন তখন ঐ অপরূপা তুলনাহীনার জন্য তার মনে জন্ম নেয় হাজারো আশা নিরাশার গুঞ্জরণ। তেমনি তবুও বৃষ্টি আসুক কাব্যে কবির মনে সুলতার জন্যে জন্ম নিয়েছে আশা নিরাশার দ্বন্ধ এবং তাকে পাওয়ার ব্যাকুল আগ্রহ। যেমন তিনি গভীর দরদমাখা বাক্যে বলেছেনঃ–

সুলতা তুমি এসে আমাকে

মুক্ত করে আলোতে নিয়ে যাও

অনন্তকাল আমি তোমারই প্রতীক্ষায় আছি।

(সুলতা, আজ তুমি কোথায় জানি না)

কবি জীবনানন্দ দাশের মনে যেমন আঁচল ফেলেছিল একজন বনলতা সেন, কবি ফররুখ আহমেদের মনে যেমন ঠাঁই নিয়েছিল একজন দিলরুবা । কবি র‌্যাবোর মনে যেমন প্রেমের জোয়ার এনেছিল একজন আফেলিয়া এবং সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের মনে যেমন ঝংকার তুলেছিল একজন নীরা তেমনি কবি শফিকুল ইসলামের মনে কবিতার ডানা মেলে উড়ে চলেছে একজন সুলতা। হৃদয়ের একান্ত আপন সুলতা। ভালবাসার একান্ত আপন সুলতা। কবি জীবননন্দ দাশ যেমন বলেছেনঃ–

হাজার বছর ধরে আমি পথ হাটিতেছি পৃথিবীর পথে

সিংহল সমূদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয় সাগরে

অনেক ঘুরেছি আমি, বিম্বিসার অশোকের ধূসর জগতে

সেখানে ছিলাম আমি, আরো দূর অন্ধকারে বিদর্ভ নগরে

আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন

আমারে দূ-দন্ড শান্তি দিয়েছিলো নাটোরের বনলতা সেন।

তেমনি কবি শফিকুল ইসলাম বলেছেনঃ–

সুলতা বহুদিন পর আজ

তোমার উদ্বেগভরা কোমল হাতের স্পর্শ পেলাম।

আমার তপ্ত ললাটে কোমল হাত ছুয়ে

তুমি পরখ করে নিলে আমার জ্বরের মাত্রা।

আর তোমার যাদু-স্পর্শে আমি যেন তখন থেকেই

একটু একটু করে আরোগ্য হয়ে উঠলাম ॥

(সুলতা, বহুদিন পর আজ)

দিলরুবার প্রতি কবি ফররুখ আহমেদ যেমন বিমোহিত এবং তার ব্যাকুল মনের সুরঃ–

বল কোন শাহবাদে অপরূপ সওদাগরজাদী

গোলাপ কুড়িঁর মতন মেলেছে রূপের মুক্তাদল,

অমা অন্ধকার যার কেশপাশে রয়েছে বিবাদী।

তেমনি সুলতার জন্য কবি শফিকুল ইসলামের মানসপটে ও আঁখির আঙিনায় এমনি এক অপরূপ আদল জন্ম নিয়েছে যা এ পৃথিবীর হাজারো মুখ দেখেও বিস্মৃত হয়না, হবার নয় এবং একজন একান্ত সুলতাই অন্তরে জাগ্রত থাকে এবং বারবার তাকেই ফিরে পেতে চায়। এমনি এক অপরূপা তুলনাহীনা সে । তাইতো কবি ব্যাকুল উচ্চারণঃ–

ভালবাসা চিরদিনই অপরাজেয়

এই ধ্রুব সত্যের সত্যতা রক্ষার জন্য

না হয় তুমি ফিরে এসো।

সুন্দর একটি পৃথিবীর নামে

আমি তোমাকে আহ্বান করছি-

একটি মুমূর্ষু হৃদয়কে বাঁচানোর নামে

আমি তোমাকে আহ্বান করছি,

একটি সুন্দর আগামীর নামে

আমি তোমাকে আহ্বান করছি,

তুমি ফিরে এসো-

আর কোন দ্বিধা নয়

চলে এসো তুমি

এই ভালবাসাকে ভালোবেসে ॥

(সুলতা, এখনও সময় আছে)

কবি র‌্যাবো, একজন অফেলিয়া যিনি তার কাব্য প্রেয়সী তারই প্রেমে হয়েছিলেন আকুল। মানসপটে অহরহ দেখতে পেতেন শান্ত আর কালো কালো ঢেউয়ের ওপরে নক্ষত্রেরা যেখানে ঘুমায়, সেখানে বিশাল কুমুদীর মতো সাদা অফেলিয়া ভাসে, ভেসে চলে খুব ধীরে ধীরে, শুয়ে তার দীর্ঘ ওড়নায়। তেমনি কবি শফিকুল ইসলামের মনের গভীরেও সুলতার প্রতিচ্ছবি যা ভোলা যায়না। তিনি ভোলেন না। বিস্মৃতির আচড় থেকে সুলতা বহু বহু দুরেই থেকেই যায় । তাইতো কবির উচ্চারণঃ–

সুলতা তোমার কাছে

আমার অনেক অপরিশোধিত ঋণ,

তোমার রেখে যাওয়া স্মৃতিগুলো আমার

জীবনে অমূল্য সম্পদ।

(সুলতা তোমার কাছে)

তবুও বৃষ্টি আসুক কাব্যে সুলতা এমন এক অপরূপা নারী যা কবি শফিকুল ইসলামের সমগ্র কাব্যমন জুড়ে জড়িয়ে আছে। জড়িয়ে আছে কবির চোখের কার্নিশ, জুড়িয়ে আছে কবির মনের প্রান্তর। আঁখির আঙিনা থেকে মনের উঠান সর্বত্র শুধু সুলতার আদল কবিকে করেছে মুগ্ধ। তাই কবির মননে মগজে একমাত্র সুলতা। শুধুই সুলতা, হৃদয়ের ভাজে ভাজে কেবলই সুলতা।তাই কবির সহজ উচ্চারণঃ–

আমার দুচোখ জুড়ে সারাক্ষণ

তোমারই মুখচ্ছবি ভাসে

আমার বুক জুড়ে তুমি শুধু তুমি।

(প্রিয়তমা বল কি করে)

কবি জীবনানন্দ দাশ বনলতা সেনের সৌন্দর্য বর্ণনায় বলেছিলেনঃ–

চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা

মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য…

এখানে জীবনান্দ দাশ বনলতা সেনের চুলে ও মুখে সৌন্দর্য খুঁজে বেড়িয়েছেন এবং উপমায় তা প্রকাশ করেছেন । অন্যদিকে কবি শফিকুল ইসলাম সুলতার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে বলেছেনঃ–

তোমার দেহের প্রতিটি বাঁক

অঙ্গের ভাজে জমে থাকা এতটুকু মেদ

সবই আমার মুখস্থ,

সারাক্ষণ তোমার সৌন্দর্য আমি আবৃত্তি করি।

(প্রিয়তমা বল কি করে)

অন্য এক জায়গায় তিনি আরো বলেনঃ–

এখনও মনে পড়ে যেন

অবিকল তার চেহারা,

সেই হুবহু মুখের আদল

ভ্রু-ভঙ্গিমা, পটল-চেরা চোখ,

গোলাপ পাপড়ির মত

রাঙা ঔষ্ঠরেখা,

শাওন -মেঘ কালো চুলের বন্যা,

সবই মনে পড়ে-

দাড়ি-কমা, সেমিকোলন

প্রতিটি যতিচিহ্ন সহ-

তার প্রতিটি কথা যেন

বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ কবিতার

এক একটি পংক্তি,

তার কন্ঠস্বরের উত্থান পতন

যেন বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ সংগীত,

তার যৌবনভরা সুগঠিত দেহ

যেন বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ভাস্কর্য ।

(আকাশের মেঘও এক সময়)

এখানে কবির হৃদয়ে এমনি এক প্রেমিক পুরুষ খুঁজে পাওয়া যায় যিনি সুলতার সৌন্দর্যের দরিয়ায় আকন্ঠ ডুবে । সুলতার সৌন্দর্য আঁখির পেয়ালা ভরে পান করেছেন। একজন কবি হাফিজ যিনি তার প্রিয়ার গালের একটি তিলের জন্য সমরকন্দ কিংবা বোখারা অনায়াসে বিলিয়ে দিতে পারেন । সেই প্রিয়ার বিরহে কবির হাল কতটা বেহাল হয়ে পড়েছিল সে উচ্চারণ আমরা জোরালোভাবে পাইনা কিন্তু তবুও বৃষ্টি আসুক কাব্যে ঠিকই খুঁজে পাওয়া যায়। একজন সুলতাকে না পাওয়ায় কবির ব্যাকুল হৃদয় কতটা বিদগ্ধ কতটা বিহ্বল । তাইতো তার অন্য রকম উচ্চারণঃ–

তুমি তো জাননা

তুমিহীন সুস্থ্য জীবনে আমি কতটা অসুস্থ,

তুমি জাননা

তোমার সান্নিধ্য সুখের অভাবে

আমি কতটা অসুখী,

তুমিহীন আমার জীবনে

নেমে আসে মৃত্যুহীন মৃত্যু ॥

(সুলতা, বহুদিন পর আজ)

তিনি আরো বলেছেনঃ–

সুলতা যে দিন তুমি

আমায় ছেড়ে চলে গেলে

তখন থেকে এ ঘর

আমার কাছে কারাগার-

আমার সমস্ত দিন

কখন নিরবিচ্ছিন্ন অন্ধকার রাতে

পর্যবসিত হয়ে যায়

তুমিহীনতায়॥

(সুলতা তোমার মত)

কবি শফিকুল ইসলামের উপরের কাব্যাংশ পারস্যের বিখ্যাত কবি মাওলানা রুমীর কয়েকটি পংক্তিকে মনে করিয়ে দেয়। সেগুলোঃ–

(১) প্রেম মহব্বতে ব্যথা কষ্ট ক্লেশ দূর হয়। প্রেম মহব্বতে অসুখ সুখ হয়।

(২) প্রেম মহব্বতে জেলখানা ফুলবাগান মনে হয়। মহব্বতের অভাবে ফুল বাগানও কন্টকময় জঙ্গল বলে মনে হয় ।

(৩) প্রেম মহব্বতে অসুস্থ সুস্থ হয় । প্রেম মহব্বতে আযাব রহমত হয়।

সুলতার প্রতি কবি শফিকুল ইসলামের ভালবাসা অন্তিমে আধ্যাত্মিক প্রেমের মূল উপকরণে বিলীন হওয়াকে মনে করিয়ে দেয়। যে প্রেমে সুফীগণ খোদার সঙ্গে আপন সত্তায় মিলন ঘটান অনেকটা সে রকম প্রেমের ঝংকার কবি শফিকুল ইসলামের কবিতায় পাওয়া যায় । যেমনঃ–

তুমি বিশাল আকাশ হয়ে

আমার পৃথিবী ঘিরে আছ,

তুমি নদীর স্রোতধারার মতো অবিচেছদ্য

ঢেউয়ের মতো অবিভাজ্য আমার জীবনে,

আমার জীবন আর তুমি

নদীর জল আর তীরের মতো

এক হয়ে মিশে আছ।

আমার প্রেম আর কবিতার মতো

এক হয়ে মিশে আছো তুমি

আমার চিত্তে।

( প্রিয়তমা, যখন দেখি তুমি নেই)

সর্বদিক থেকে সুলতা একটি স্বার্থক কাব্য চরিত্র যা কালোত্তীর্ণ ও কাব্যমধুর ॥

———————-

কবি শফিকুল ইসলামের জীবনী

উদভ্রান্ত যুগের শুদ্ধতম কবি শফিকুল ইসলাম। তারুণ্য ও দ্রোহের প্রতীক । তার কাব্যচর্চ্চার বিষয়বস্তু প্রেম ও দ্রোহ। কবিতা রচনার পাশাপাশি তিনি অনেক গান ও রচনা করেছেন। তার দেশাত্ববোধক ও সমাজ-সচেতন গানে বৈষম্য ও শোষণের বিরুদ্ধে দেশবাসীকে জাগিয়ে তোলার প্রচেষ্টা লক্ষ্য করা যায়। তিনি বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের তালিকাভুক্ত গীতিকার।

শফিকুল ইসলামের জন্ম ১০ই ফেব্রুয়ারী, সিলেট জেলা শহরের শেখঘাটস্থ খুলিয়াপাড়ায়। তার পিতার নাম মনতাজ আলী। তিনি পেশায় একজন কাষ্টমস অফিসার ছিলেন। তার মাতার নাম শামসুন নাহার।

শফিকুল ইসলাম সিলেট জেলার এইডেড হাইস্কুল থেকে এসএসসি ও মদন মোহন মহাবিদ্যালয় থেকে এইচএসসি উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীতে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি ও সমাজকল্যাণে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন। এছাড়া এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ থেকে এম,এ ইন ইসলামিক ষ্টাডিজ ডিগ্রী অর্জন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে শিক্ষাজীবনে অনন্য কৃতিত্বের জন্য স্বর্ণপদক প্রাপ্ত হন।

কর্মজীবনে একজন সৎ ও নিষ্ঠাবান কর্মকর্তা কবি শফিকুল ইসলাম চাকরীসূত্রে বিসিএস(প্রশাসন) ক্যাডারের একজন সদস্য। তার কর্মজীবনের শুরু কুষ্টিয়া ডিসি অফিসে সহকারী কমিশনার হিসেবে।তিনি ঢাকার প্রাক্তন মেট্রোপলিটান ম্যাজিষ্ট্রেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সাবেক এডিসি। এছাড়া ও তিনি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশনের জেনারেল ম্যানেজার এবং ত্রাণ ও পুনর্বাসন অধিদপ্তরে উপপরিচালক ছিলেন। তিনি স্বরাষ্ট্র্র মন্ত্রণালয়ে সিনিয়র সহকারী সচিব, অর্থমন্ত্রণালয়ের ইআরডিতে উপসচিব পদে ও বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব। তিনি সরকারী কাজে যে সব দেশ ভ্রমণ করেছেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে বৃটেন, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, দক্ষিণ কোরিয়া, ফিলিপাইনও সিঙ্গাপুর।

লেখালেখির শুরু ছাত্রজীবনে স্কুল ম্যাগাজিনে লেখালেখির প্রচেষ্টা থেকে। থেকে। সেটি ছিল ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দ। তখন কবি ক্লাস সেভেনে পড়েন। কাব্যচর্চা দিয়ে লেখালেখি শুরু করেন। ১৯৮০সালে সিলেটের মুসলিম সাহিত্য সংসদের উন্মুক্ত চত্বরে কবিতা পাঠের মাধ্যমে প্রথম জনসমক্ষে আত্মপ্রকাশ।মদন মোহন কলেজে পড়াকালিন তার সম্পাদনায় ‘স্পন্দন’ নামে একটি সাহিত্য পত্রিকা বের হয়। আর সেই ম্যাগাজিনে তার প্রথম লেখা বের হয়।সেটি ছিল একটি কবিতা। এরপর কলেজ ম্যাগাজিনে তার লেখা কবিতা ও গল্প প্রকাশিত হতে থাকে। চাকরীসূত্রে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে কর্মকালীন সময়ে তার কবিতা ও গান বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ব্যাপকভাবে প্রকাশিত হতে থাকে।পরবর্তীতে স্থানীয়, জাতীয় ও অনলাইন পত্র-পত্রিকায় তার লেখা প্রকাশিত হয়।

ছা্ত্রজীবনে ১৯৮১সালে তৎকালীন ক্রীড়া ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কর্তৃক একুশে ফেব্রুয়ারী উপলক্ষে দেশব্যাপী আয়োজিত সাহিত্য প্রতিযোগীতায় বাংলাদেশ পরিষদ সাহিত্য পুরস্কার প্রাপ্ত হন। এছাড়া আন্তর্জাতিক লেখক দিবস উদযাপন পরিষদ কর্তৃক লেখক সম্মাননা পদক ২০০৮প্রাপ্ত হন। সম্প্রতি তার জনপ্রিয় কাব্যগ্রন্থ ‘তবুও বৃষ্টি আসুক’ এই অনন্য কাব্যগ্রন্থের জন্য তিনি নজরুল স্বর্ণপদক প্রাপ্ত হন।( মোবাইল ফোনে google play store -এ Tobuo Bristi Asuk / ‘তবুও বৃষ্টি আসুক’ লিখে search দিয়ে বইটি ডাউনলোড করা যাবে)। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে সাহিত্য ক্ষেত্রে অনন্য অবদানের জন্য বিভিন্ন পদকে ভূষিত হন।

আপাতদৃষ্টিতে তাকে অনেকে প্রেম ও বিরহের কবি হিসেবে আখ্যায়িত করলে ও তিনি যে একজন সমাজ-সচেতন কবি তা তার দহন কালের কাব্য ও প্রত্যয়ী যাত্রা কাব্যগ্রন্থ পাঠে সুস্পষ্টভাবে প্রতিভাত হয়। সমাজের বিভিন্ন অসংগতি ও বৈষম্য যে তাকে সংক্ষুব্ধ করেছে, অনায়াসে তা উপলব্ধি করা যায়।

কবি শফিকুল ইসলামের হাতে প্রকৃতির সকল বৈচিত্র সমাহৃত হইয়া কবির হাতে নূতন রূপে রূপায়িত হইয়া উঠিয়াছে। তুণাঙ্কুর, ধুলিকণা, শিশিরকণাটি পর্যন্ত নব নব শ্রী ও সম্পদ লাভ করিয়াছে। কবি পাঠকের মনেও সৃজনী-মাধুরীর প্রত্যাশা করিয়া তাঁহার সৃষ্টিকে ব্যঞ্জনাময়ী করিয়াছেন- ছবির আদ্‌রা আঁকিয়া কবি পাঠককে দিয়াছেন তাহার নিজের মনের রং দিয়া ভরিবার জন্য। কবি কবিতাকে নব নব রূপ দান করিয়াছেন। তিনি নিজের সৃষ্টিকে নিজেই অতিক্রম করিয়া নূতন রূপসৃষ্টি করিয়াছেন। কবি নব নব ছন্দ আবিস্কার করিয়াছেন। তাঁহার বাগ-বৈভবে ও প্রকাশ ভঙ্গিমায় কবি মানসের যে একটি অভিনব রূপ তিনি প্রকাশ করিয়াছেন তাহা বিস্ময়কর।

তার প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থসমূহ ঃ একুশে বইমেলায় বিভিন্ন সময়ে তার কাব্যগ্রস্থ প্রকাশিত হয়।এই ঘর এই লোকালয়(২০০০) প্রকাশিত হয় প্রবর্তন প্রকাশন থেকে । একটি আকাশ ও অনেক বৃষ্টি(২০০৪) প্রকাশিত হয় আমীর প্রকাশন থেকে। তবু ও বৃষ্টি আসুক(২০০৭) ও শ্রাবণ দিনের কাব্য (২০১০) প্রকাশিত হয় আগামী প্রকাশনী থেকে । দহন কালের কাব্য(২০১১) ও প্রত্যয়ী যাত্রা(২০১২) প্রকাশিত হয় মিজান পাবলিশার্স থেকে। গীতি সংকলন ঃ মেঘ ভাঙ্গা রোদ্দুর(২০০৮) প্রকাশিত হয় আগামী প্রকাশনী থেকে। এছাড়া রয়েছে আড়াই হাজারের অধিক গান নিয়ে ‘শফিকুল ইসলামের শ্রেষ্ঠ গীতিকবিতা’ নামের পাচ খণ্ড বিশিষ্ট গ্র্ন্থ। দেশে-বিদেশে বিভিন্ন লেখক, সাহিত্যিক. অধ্যাপক, আমলা, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাংবাদিক তার রচিত সাহিত্যকর্মের উপর আলোচনা ও গবেষণা করেছেন।

সকল স্রষ্টার সৃজনীপ্রতিভা যে ভাবে ক্রমবিকাশ লাভ করে কবি শফিকুল ইসলাম প্রতিভার বিকাশও সেই ভাবেই হইয়াছে। প্রথম যৌবনে অন্তর্গূঢ় প্রতিভার বিকাশ-বেদনা তাঁহাকে আকুল করিয়াছে– তখন কুঁড়ির ভিতর কেঁদেছে গন্ধ আকুল হয়ে, তখন ‘কস্তুরীমৃগসম’ কবি আপন গন্ধে পাগল হইয়া বনে বনে ফিরিয়াছেন। প্রথম জীবনের রচনায় এই আকুলতার বাণী, আশার বাণী, উৎকন্ঠা, উচ্চাকাঙ্খা, সংকল্প, ক্ষণিক নৈরাশ্যে আত্মসাধনা, মহাসাগরের ডাক, বাধা বিঘ্নের সহিত সংগ্রাম ইত্যাদির কথা আছে।

বাস্তবিক কবি শফিকুল ইসলামের সমস্ত রচনার মধ্যে এই সীমাকে উত্তীর্ণ হইয়া অগ্রসর হইয়া চলিবার একটি আগ্রহ ও ব্যগ্র তাগাদা স্পষ্টই অনুভব করা যায়। যাহা লব্ধ তাহাতে সন্তুষ্ট থাকিয়া তৃপ্তি নাই, অনায়ত্তকে আয়ত্ত করিতে হইবে, অজ্ঞাতকে জানিতে হইবে, অদৃষ্টকে দেখিতে হইবে- ইহাই কবি শফিকুল ইসলামের কথা।

সাধারণ কবিদের মত তিনি ভাববিলাসিতায় ভেসে যাননি। ভাবের গড্ডালিকা প্রবাহে নিজেকে অবলুপ্ত করে দেননি। প্রকৃত কবির মত তার কবিতায় কাব্যিক মেসেজ অনায়াসে উপলব্ধি করা যায়। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন জাগতে পারে কি সে মেসেজ? তার কাব্যসৃষ্টিতে সাম্য, মৈত্রী ও মানবতার নিগূঢ় দর্শন অন্তঃসলিলা ফল্গুধারার মত প্রবহমান। তার ‘তবুও বৃষ্টি আসুক’ কাব্যগ্রন্থের প্রথম কবিতায় কবি বলেছেনঃ-

“তারও আগে বৃষ্টি নামুক আমাদের বিবেকের মরুভূমিতে,
সেখানে মানবতা ফুল হয়ে ফুটুক-
আর পরিশুদ্ধ হোক ধরা, হৃদয়ের গ্লানি…”
(কবিতাঃ ‘তবুও বৃষ্টি আসুক’)

পংক্তিগুলো পাঠ করে নিজের অজান্তে আমি চমকে উঠি। এতো মানবতাহীন এই হিংস্র পৃথিবীতে বিশ্ব মানবের অব্যক্ত আকাংখা যা কবির লেখনীতে প্রোজ্জ্বলভাবে প্রতিভাত হয়েছে। এতো শুধু কবির কথা নয়, এতো একজন মহামানবের উদ্দীপ্ত আহ্বান। তার কবিতা পাঠে আমি অন্তরের অন্তঃস্থলে যেন একজন মহামানবের পদধ্বনি শুনতে পাই। যিনি যুগ মানবের অন্তরের অপ্রকাশিত আকাংখা উপলব্ধি করতে পারেন অনায়াসে আপন অন্তরের দর্পণে। তাই তিনি বিশ্ব মানবের কবি। বিশ্বমানবতার কবি।

বর্তমানে www.grontho.com, sheiboi.com, www.chorui.com, bengaleboi.com এবং www.noboboi.com, www.eakash.com সহ বিভিন্ন ওয়েব সাইট থেকে এবং banglapdf.net, www.boighar.com, kazirhut.com, www.boilovers.com ও www.boierdunia.in সহ বিভিন্ন ফোরাম থেকে তার রচিত বইসমূহ ডাউনলোড করা যায়।এছাড়া গুগোল প্লে-ষ্টোরে রয়েছে তার রচিত বইয়ের বিশাল ভাণ্ডার, যা তাৎক্ষণিকভাবে ডাউলোড করে পাঠ করা যায়। ফেসবুক গ্রুপ এবং ইউটিউবেও রয়েছে তার রচিত কবিতা আবৃত্তি ও গানের অসংখ্য ভিডিও। বর্তমানে www.rokomari.com থেকে অনলাইনে(Help: 16297 অথবা 01519521971 ফোন নাম্বারে) সরাসরি তার সকল বই সংগ্রহ করা যায়।

— লেখক : সাংবাদিক নিজাম ইসলাম