আবুল আলী, টেকনাফ:

মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর নির্মম অত্যাচার-নির্যাতনে আরাকান রাজ্য থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নারীরা বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে নাফ নদীতে নৌকার মধ্যে ও মাঠে-ঘাটে অনেক নবজাতকের জন্ম দিচ্ছেন।

মিয়ানমার বাহিনীর নির্যাতন থেকে প্রাণে বাঁচতে গর্ভবতী সানোয়ারা বেগম (২৯) পরিবারের ৬জন সদস্য নিয়ে পালিয়ে আসেন। নাফ নদী পাড়ি দিয়ে শাহপরীরদ্বীপ ঘোলারচর এলাকায় পোঁছাই সেখন থেকে টেকনাফে উদ্দেশ্য রওনা হন। আসার পথে হঠাৎ করে পছন্দ বেদনা শুরু হয় তার। এক দিকে ওপারে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষীর বেপরোয়া গুলির ভয়, আবাার এপারে আসার সময় বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষীর হাতে ধরা পড়ার ভয়। নৌকাযোগে গত সনিবার রাত ১০টার সময় পালিয়ে আসে মাজপথে সাবাবাং এলাকার রাস্তা পাশে রাত ১২টার দিকে জন্ম দিলেন তিনি এক নবজাতকের। এ নবজাতকের মাতৃভূমি কোন দেশে তা নির্ণয় করা কঠিন হয়ে পড়েছে। সানোয়ারা এ নবজাতকসহ ৫ সন্তানের মা। নবজাতকের বাবা মিয়ানমার মংডু বাঘগোনা এলাকার মোঃ উসমানের ছেলে মো: ইউছার ১দিনে শিশু, মোঃ আয়ুব(৯), মেয়ে সেকুফা বেগম(৭), সনিরা বেগম(৫), রোকিয়া বেগম(৩)। নদী পার হওয়ার পর টেকনাফ রোহিঙ্গা ক্যা¤প লেদা বি ব্লক ২০৩ নাম্বার রুম তার রোনের জামাই হাবিবের বাড়িতে মানবিক কারণে সানোয়ারা বেগমকে আশ্রয় দিয়েছেন। সেনুরা জানান, আর্থিক সঙ্কটের কারণে তিনি কোনো চিকিৎসা পাচ্ছেন না। স্বামী কোথায় গিয়ে কাজ করা মত কোন জায়গা নাই কি ভাবে এক মুতু ভাত খাব তা নিয়ে চিন্তায় আছি।

তার বাবা উসমান জানার, আমার ছোট ছোট ৫ সন্তান নিয়ে এখন আমাদের কী হবে। আমাদের এলাকার থেকে অনেক মানুষ চলে আসছে দেখে মনে হচ্ছে আমরা কোন কাজ পাব না- এ কথা বলের সাথে সাখে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

এ রকম অনেক অগণিত রোহিঙ্গা শিশুর জন্ম হচ্ছে। কারো নাফ নদে নৌকার মধ্যে, কারো নদের পাড়ে, কারো ধানক্ষেতে, জঙ্গলে, গাছের নিচে, রাস্তায় বা খোলা আকাশের নিচে। অর্থাৎ বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের নাফ নদের আশপাশে তাদের জন্ম। এ রকম শিশুর জন্ম দেয়া একজন মা হামিদা বেগম (৩২)। তিনি মিয়ানমারে বাহিনীর তাণ্ডব থেকে বাঁচতে গর্ভবতী অবস্থায় মাইলের পর মাইল পথ হেঁটেছেন। যখন নাফ নদের তীরে পৌঁছে নৌকায় পা দিয়েছেন, তখনই তার প্রসব বেদনা ওঠে। অগত্যা তীরে উঠে খোলা আকাশের নিচেই জন্ম দিলেন পুত্রসন্তানের।