এইচ.এম নজরুল ইসলাম
টানা দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় কক্সবাজারে আপনার অষ্টম বারের মতো গত ১২ সেপ্টেম্বর সফর হলেও প্রথম বারের রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্প দেখতে যাওয়া। জানিনা বাংলাদেশের আর কোন জেলার মানুষের কক্সবাজার জেলাবাসীর মতো সুভাগ্য হয়েছে কিনা আপনাকে অতবার কাছে পাওয়ার বা দেখার মতো। সমুদ্রের ঢেউয়ের প্রতি আপনার ভালোবাসার প্রকাশ যেমন গতবার মেরিন ড্রাইভ সড়কের উদ্বোধনের সময়ে বিশ^াবাসী দেখেছে নুনা জলে পা ভেজানোর মতো অপুরূপ দৃর্শটি,ঠিক তেমন করে আপনার সু-দৃষ্টিতে এগিয়ে যাচ্ছে কক্সবাজারের উন্নয়ন প্রকল্প বলতে গেলে নন্দিত শহরে পরিনত হচ্ছে প্রতিমুহুর্তে আমার প্রিয় সমুদ্র শহর কক্সবাজার।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার নেতৃত্বাধীন সরকারের টানা দু’ মেয়াদে কক্সবাজারে দেড় লাখ কোটি টাকা উন্নয়ন প্রকল্প কাজ চলচ্ছে। এসব প্রকল্পের মধ্যে মাতারবাড়ি কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্র হচ্ছে দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে মেগা প্রকল্প। এছাড়াও এক হাজার ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বিশ্বের দীর্ঘতম কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক। বিমানবন্দরের সম্প্রসারিত রানওয়েতে সুপরিসর ৭৩৭-৮০০ বোয়িং বিমান চলাচলের উদ্বোধন। শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম, মহেশখালী এলএনজি টার্মিনাল, মেডিকেল কলেজ, নাফ ট্যুরিজম পার্ক প্রকল্পও বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ প্রকল্প। এসব প্রকল্পের অর্ধেক বাস্তবায়ন হয়েছে। অবশিষ্টগুলো বাস্তবায়নে আলোর মূখ দেখতে পাচ্ছে জেলাবাসী।
বলতে গেলে উন্নয়নের মহাসড়ক যেন কক্সবাজার দিয়ে চলছে। কক্সবাজার জেলাব্যাপী চলা দেড় লাখ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের মহাসড়কটি শেষ পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের জ্যামে আটকে যাবে না তো?
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার থেকে আর কিছুই চাওয়ার নেই জেলাবাসীর। আপনি না চাইতে অনেক কিছু উপহার দিয়েছেন। তারপরও আমরা আজ ততবেশি সুখে নেই! মিয়ানমার ফেরত নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত প্রায় ১২ লক্ষ রোহিঙ্গার ভারে ন্যুয়ে পড়েছে আমার-আপনার প্রিয় শহরটি! একদিকে যেমন মিয়ানমার আমাদের ইয়াবা নামক গুটিতে গুটিবাজী করে যুব সমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে প্রতিদিন,ঠিক তেমনি করে মিয়ানমার আরাকান রাজ্যে সহিংসতার নামে যে নাটকটি মঞ্চায়িত হচ্ছে সেই নাটকরে দর্শক যারা আমার ভূখন্ডে আশ্রয় নিয়েছে সেইসব রোহিঙ্গাদের হাতে আজ প্রতিমূহুত্বে রক্তাক্ত হচ্ছে সবুজে ঘেরা পাহাড়-বনভূমি। শুধু কি তাই রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণে আজ অপরাধ জগত চুরি,ছিনতাই,ডাকাতি,হত্যাসহ এমন কোন কাজ নেই যার সাথে রোহিঙ্গাদের সম্পৃক্ত নেই। আমাদের শ্রম বাজার আজ রোহিঙ্গাদের দখলে।
আজ আপনার কাছে শুধু একটাই চাওয়া রোহিঙ্গা নামক বিষফোঁড় থেকে জেলাবাসীকে বাঁচান।
রোহিঙ্গাদের কারনে বনজঙ্গল থেকে শুরু করে সমুদ্রের ঝাউবন আজ কেন কিছুই নিরাপদ নেই। নিরাপদ নেই প্রিয় মাতৃভূমি, রোহিঙ্গদের নিয়ন্ত্রণে কক্সবাজার-বান্দরবানে সক্রিয় আছে রোহিঙ্গা জঙ্গী সংগঠন আরএসও,আল ইয়াকিন সহ একধিক উগ্রবাদী সংগঠন। জেলা জুড়ে আজ অতিরিক্ত মানুষের চাপে এক ধরনের মানবিক বিপর্যয় গঠতে যাচ্ছে।
সম্প্রতি আগত রোহিঙ্গাদের মানবিক বিবেচনায় নিদিষ্ট জায়গায় রাখতে ২ হাজার একর জমি বরাদ্ধ দেওয়ার চিন্তা করছে প্রশাসন,কিন্তু জেলার অধিকাংশ স্থানীয় লোকজন ভূমিহীন হিসেবে যুগ যুগ পার করে যাচ্ছে অনিশ্চিত রাত্রী যাপনের মধ্য দিয়ে!! আমার কি সাংবিধানিক অধিকার নেই বাসস্থানের অধিকার দাবী করা? তাই বলছি আমি ভিক্ষা চাইনা আমি আমার বাসস্থানের অধিকার চাই। দ্রব্যমূল্যের দাম আজ সাধারণ মানুষের নাগালের বাহিরে, হু হু করে বাড়ছে প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রে দাম। আমরা এই বিপর্যয় থেকে মুক্তি চাই। মুক্তি চাই রোহিঙ্গা নামক বিষফোঁটা থেকে।
১২ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঃ ১৮ দিনের আসে তিন লাখের অধিক ঃ আরো আসার অপেক্ষা কিভাবে এতো বড় বোঝা বহন করবে বাংলাদেশ।
প্রতিদিন ঠেলে দিচ্ছে বাংলাদেশের দিকে সে দেশের সামরিক জান্তার দমন-নিপীড়নে উপায়ান্তর না দেখে আবার কখনও ভাগ্যান্বেষণে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের লোকজন ক্রমাগতভাবে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেই চলেছে।
মিয়ানমার সরকারের পক্ষ থেকে প্রায়ই বলা হয়ে থাকে, তারা তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেবে। আবার কখনও কখনও রোহিঙ্গাদের সে দেশের নাগরিক নয় বলেও বলা হয়ে থাকে।
এদিকে টেকনাফ-উখিয়া সীমান্ত এলাকাসহ কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলা এবং গোটা দেশের বিভিন্ন স্থানে বর্তমানে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা অবৈধভাবে অবস্থান করছে। যদিও সরকারী পরিসংখ্যান বিভিন্নভাবে কক্সবাজার-বান্দরবানে ৫ লক্ষাধিক বলে দাবি করা হয়ে থাকে। বিভিন্ন সময়ে সহিংসতার মুখে সেখান থেকে পালিয়ে এসে পাঁচ লাখের বেশি মানুষ বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে আছে বলেও ইউএনএইচসিআরের সূত্রে জানা গেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. তারেক শামসুর রেহমান কথা অনুসারে বলতে হয় প্রথমত, বাংলাদেশ এত বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা নাগরিকের উপস্থিতি, কিংবা তাদের স্থান দেয়ার মত পর্যাপ্ত জায়গা বাংলাদেশের নেই। দ্বিতীয়ত, রোহিঙ্গাদের মাঝে জঙ্গীবাদ মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। এটা বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্যও হুমকি স্বরূপ। এইসব জঙ্গীদের বিদেশ থেকে অর্থায়ন হচ্ছে । অস্ত্র ও অর্থ আসছে বাইরে থেকে। এর একটা অংশ চোরাকারবারীদের হাত হয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে জঙ্গীদের হাতে চলে যেতে পারে। তৃতীয়ত, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সম্পর্ক আমাদের পররাষ্ট্র নীতির জন্য গুরুত্বর্পূণ। কিন্তু রোহিঙ্গা বিদ্রোহীরা যদি বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করতে চায়, তাহলে দু’দেশের সর্ম্পকে অবনতি হতে বাধ্য। চতুর্থত, রোহিঙ্গারা পরিবেশ নষ্ট করছে। এটা চলতে দেয়া যায় না। পঞ্চমত, রোহিঙ্গারা ইতিমধ্যে বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে নাগরিক সমাজের মাঠে মিশে গেছে। কেউ কেউ ব্যবসা বাণিজ্যে বিনিয়োগ করছে। এটা খারাপ নজির। সুতরাং সময় এসেছে শক্তভাবে রোহিঙ্গা সমস্যাটা দেখা এবং আন্তজাতিক পরিসরে মিয়ানমারের উপর ‘চাপ’ প্রয়োগ করা। অর্থনৈতিক অবরোধের বিষয়টিও আমরা প্রস্তাব আকারে কিংবা ওআইসির সহযোগিতায় তুলতে পারি। বাংলাদেশ যেন এই সংকটকে হালকাভাবে না নেয়, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
লেখক নির্বাহী সম্পাদক দৈনিক কক্সবাজার৭১,সভাপতি রিপোর্টার্স ইউনিটি কক্সবাজার
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।