এফ এম সুমন:
শান্তি শব্দটার অর্থ বিভিন্ন প্রকার হয়ে থাকে। যেমন শান্তি শব্দটি ইংরেজিতে বলা হয় (ঢ়বধপব) । কোন প্রকার সংঘর্ষ কিংবা যুদ্ধবিহীন সময়কাল। বৃহৎ পরিসরে শান্তি বলতে রাষ্ট্রের ঐক্য, শান্ত অবস্থা বিরাজমান যা অন্য কোন কিছু বিঘ্নতা সৃষ্টিকারী পরিবেশ দ্বারা আক্রান্ত না হওয়াকে বোঝায়। জনগণ ও সংগঠনের অভ্যন্তরে শান্তির পরিবেশ সৃষ্টি করাই রাষ্ট্রের ইপ্সিত লক্ষ্য হওয়া উচিৎ। আবার শান্তি প্রতিষ্ঠা বলতে কোন পরিবারে শান্তি প্রতিষ্ঠা, সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা কিংবা কোন দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা হতে পারে।
এবার আসি আমাদের প্রতিবেশী দেশ মায়ানমারে দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক সংকট। দেশে সেনা আগ্রসন, জনগনের ইচ্ছার প্রতিফলনে বাঁধা, সর্বোপরি দেশটি এক অরাজক পরিস্থিতিতে ছিল। যেখানে ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসির নেত্রী অংসান সুচি যাকে ১৯৮৯ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ২১ বছরের মধ্যে ১৫ বছরই তাকে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছিল। এর পর নির্বাচনে তার সংখ্যা গরিষ্ঠ আসনে বিজয় যার ফলে তিনি দেশের সীমানা ছাড়িয়ে আন্তজার্তিক বিশ্বে তার স্থান গড়ে নেন। ফলে নোবেল কমিটি তার দেশে একটি সংকটময় অধ্যায়ে তার ভুমিকা তার গৃহবন্ধি অবস্থায় তার দেশের প্রতি আন্তরিকতা সব মিলে তাকে দেশের জনগনের নেতা হিসেবে যিনি বিশ্ব বাসিকে শান্তির পথ দেখান এই ভেবে নোবেল কমিটি তাকে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করেন। বিশ্বব্যাপি শান্তির অগ্রদূত হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন এই অংসান। কিন্ত সেই সুচি যে হাতে নোবেল শান্তি পুরস্কার গ্রহন করেছেন সেই হাতে আজ নির্বিচারে আরাকানের মুসলিম গোষ্টিকে হত্যার নির্দেশ দিয়ে যাচ্ছেন। যিনি তার দেশের নাগরিক আরাকানের জনগোষ্টির রক্তে লাল করে দিচ্ছেন ভুখন্ড। বিশ্বের সরকারি বেসরকারি হিসেব বলছে আরাকানে প্রায় ১৪ লক্ষ জনগোষ্টি রয়েছে । যারা মায়ানমারের ঐ নাগরিক। কিন্ত তা বার বার অস্বীকার করে আসছেন বর্মি সরকার। সম্প্রতি চলতি বছরের ২৫শে আগষ্ট থেকে যেভাবে মায়ানমায় আর্মি আরাকানের রোহিঙ্গা মুসলিমদের নির্বিচারে হত্যা করে যাচ্ছেন তাদের ঘরবাড়ি পোড়াই দিচ্ছেন যুবতী মেয়েদের ধর্ষণ করছেন তা অতীতের সব রেকর্ডকে ছাড়িয়েছে। ইতিমধ্যেই বাংলাদেশে প্রাণে বাঁচতে কক্সবাজারে পালিয়ে এসেছেন প্রায় ৫ লক্ষাধিক যা বিভিন্ন হিসেব বলছে আরো বেশি মানুষ। যেখানে নারী ও শিশুর সংখ্যাই বেশি। যদিও বা তাদের আসা এখনো শেষ হয়নি। বেশ কিছু পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলে জানতে পারি এখনো জঙ্গলে লুকিয়ে আছেন কয়েক লক্ষাধিক রোহিঙ্গা। সীমান্তে বাংলাদেশে পালিয়ে আসার অপেক্ষায় রয়েছেন আরো কয়েক হাজার রোহিঙ্গা । হালিমা নামের পালিয়ে আসা এক রোহিঙ্গা বধু লেখককে বলেন আমি দশদিন পায়ে হেটে এখানে এসেছি আমার সামনে আমার স্বামীকে হত্যা করেছে আর্মিরা আমাকে ও তারা ধর্ষণ করেছে। আমি প্রাণে বাচঁতে আমার একমাত্র শিশুটিকে নিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছি। তিনি তার দেশে ফিরবেন কিনা লেখকের প্রশ্নে তিনি দীর্ঘশ্বাসে বলেন হা আমরা দেশে ফিরতে চাই যেখানে আমাদের বাপ দাদার জায়গা। এইরকম প্রায় সব রোহিঙ্গার অবস্থা বলা চলে। এমন কেউ কেউ আছেন যাদের পরিবারে তারা একমাত্র সেই বেচে রয়েছেন। মায়ের সামনে কোল থেকে কেড়ে নিয়ে তার সামনে তার ছেলেকে আগুনে ফেলে দেয়া হচ্ছে। সবার সামনে যুবতী মেয়েদের ধর্ষণ করা হচ্ছে। পেটল দিয়ে ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। সীমান্তে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য সিমান্তে জিরো পিলারে মাইন পুতে রাখা হয়েছে যার বিষ্ফোরনে ইতিমধ্যেই ১০ জন নিহত হয়েছে কয়েক শতাধিক রোহিঙ্গা আহত হয়েছে। পালিয়ে আসার সময় টেকনাফের নাফ নদীতে নৌকা ডুবিতে নিহত হয়েছে প্রায় অর্ধশতাধিক রোহিঙ্গা নারী পুরুষ। নিংসংতার নিম্মতম উদাহারণ সৃষ্টি করে যাচ্ছেন। সবচেয়ে উদবেগের বিষয় হলো যে সুচি বিশ্বে শান্তির মড়েল, তিনি আজ বিশ্বে অসান্তির সবচেয়ে বড় উদাহারণ। যিনি আজ নিজেকে হয়তো আয়নায় নোবেল বিজয়ী কিনা ? বা তার কাছে শান্তি বলে কিছু আছে কিনা? তা নিয়ে হয়তো নিজেই সন্ধিহান। যে মানুষ ১০/১৫ লাখ মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলে যার কাছে মানুষ নিজের দেশে আজ হত্যার শিকার হচ্ছে,তার কাছে বিশ্বের সবচেয়ে দামি ও সম্মানজনক পুরস্কার থাকা কতটা লজ্জার, হয়তো সেটা কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া আরাকানের রোহিঙ্গা জনগোষ্টিকে দেখলে বুঝা যাবে। অংসান সুচি আজ বিশ্বে ঘৃণীত ব্যাক্তির সবচেয়ে বড় উদাহারণ। যার কাছে শান্তি শব্দটা অসহায়। সুতারাং তার কাছ থেকে নোবেল কেড়ে নিয়ে নোবেল পুরস্কারটি কলঙ্ক মুক্ত করা এখন সময়ের দাবী। কেননা সুচির নোবেল আজ রোহিঙ্গাদের রক্তে লাল হয়ে গেছে।
এফ এম সুমন
সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী, পেকুয়া।
fmsomun@gmail.com