আব্দুল আলীম নোবেল

কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের বড় বাধা হতে পারে রোহিঙ্গা সংকটটি। প্রতিদিন জেলাজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গারা। এই রোহিঙ্গাদের জন্য জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে উখিয়া উপজেলায় নিদৃষ্ট রোহিঙ্গা শিবিরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর পরেও এক শ্রেণীর দালালদের সহযোগিতায় তারা রোহিঙ্গা শিবিরে না গিয়ে কক্সবাজারের বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান করছে। এমন সুযোগে কক্সবাজার শহরেও রোহিঙ্গার উপস্থিতি অনেক বেড়েছে। এর আগেও শহরও শহরতলীর আশে পাশে অর্ধলক্ষাধিক রোহিঙ্গা অবস্থান করে আসছে। এইবারের রোহিঙ্গা স্রোতের সুযোগে বেশ কিছু রোহিঙ্গারা কক্সবাজার শহরের পাশের পাহাড়, টিলা, বসত বাড়িতে, বিশেষ করে বাসটার্মিণাল, লারপাড়া,উত্তর ডিককুল,দক্ষিল ডিককুল, ঝরঝিরি পাড়া, ঘোনার পাড়া,পাহাড়তলী, পেশকার পাড়া,মাঝির ঘাট,মামুন পাড়া, সাহিত্যকা পল্লী,এবিসি ঘোনার পাড়া, টেকনাফ্যা পাড়া, খাজা মঞ্জিল, বাচাঁ মিয়ার ঘোনা, গোদারপাড়া, জানারঘোনা, হাজিপাড়া, মোহাজের পাড়া, কলাতলী আদর্শগ্রাম,পূর্ব সৈকত পাড়া, কলাতলী, সমিতি পাড়া,ফদনার ডেইল,উত্তর নুনিয়ারছড়া অবস্থান করছে।

একইভাবে কক্সবাজার শহরের বিপুল জনস্রোতে মিশে যাচ্ছে রোহিঙ্গারা। এটি কক্সবাজারবাসীর জন্য আগামীতে মোটেও ভাল দিক বয়ে আনবে না। তাদের কারণে পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে। রোহিঙ্গাদের আচার অচারণ কেমন এই এলাকার মানুষতো ভাল করে জানে। কারণ রোহিঙ্গারা চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, খুনখারাবিসহ করেনি এমন অপরাধ খুবই কম আছে। তারা এইবার করবে না এমন নিশ্চিয়তা কে দেবে।

প্রশাসনের তরফ থেকে তাদেরকে শিবিরে রাখার নির্দশনা থাকলেও এই নির্দশনার বাস্তবতার চিত্র উল্টো এখনও। কক্সবাজার শহরে রোহিঙ্গা কমছে না প্রতিদিন বাড়ছে। পর্যটন নগরী কক্সবাজারে নানা করণে রোহিঙ্গা মুক্ত কক্সবাজর শহর রাখা সময়ের দাবী হয়ে ওঠেছে। এখন তাদের লাগাম টেনে না ধরলে ভবিষ্যৎতে রোহিঙ্গাদের ধমিয়ে রাখাতে বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে এই জনপদের মানুষকে। রোহিঙ্গা সর্ম্পকে সাধারণত কমবেশি মানুষের নীতিবাচক ধারণা রয়েছে। কারণ এই দেশে আগে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের বায়োডাটা মোটেও ভাল নয়। প্রতিদিন এই কক্সবাজার শহরে দেশবিদেশী অসংখ্য পর্যটক আসছে। কিছু পর্যটকের সাথে কথা বলে জানাগেছে তারাও চাই পর্যটন শহরে কোন রোহিঙ্গা না থাকাটা ভাল। তবে পর্যটন শিল্প ও অর্থনৈতিক এই দুই বিষয়ে কল্যাণ কর হবে যদি রোহিঙ্গা মুক্ত শহর হয়। এই ক্ষেত্রে প্রশাসনকে আরো অনেক বেশি কঠোর হওয়ার দরকার। সংগত কারণে রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রে

প্রশাসনের ভুমিকা অনেকটা নমনিয়। এই নমনিয়তা যদি বেশি মানবিকতায় চলে যায় পরে কিন্তু বিশাল এই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠিকে সামাল দেয়া বড় কঠিন হবে। একদিকে মানবিকতা আর অন্যদিকে জাতীয় উন্নয়ন। দুটি বিষয় গুরুত্ত্বের দিক থেকে সমানভাবে বিবেচনায় নিতে হবে আমাদের। সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা রোহিঙ্গা সমস্যাটি। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারকরা রোহিঙ্গা সমস্যার সমসধানে চেষ্টার কোনভাবে কমতি নেই। মনবতার খাতিরে সাময়িক পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুধু আশ্রয়দাতার ভূমিকা পালন করেননি উদার মানবিকতার ও পরিচয় দিয়েছেন। আর এই বিষয়টিই আমাদের সবার বিবেককে ্েবশি নাড়িয়ে দিয়েছে। আমাদের সময় পরিস্থিতির উপর কোন কোন কারণে একটু কঠোর হওয়া দরকার। কারণ দেশপ্রেম সবার আগে। কক্সবাজার শহরটি পর্যটন শহর হওয়ায় রোহিঙ্গা বিষয়টি নিয়ে আমাদের একটু ভিন্নভাবে দেখতে হবে। এই শহরে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ,অবস্থান যাতে না করতে পারে সেই ক্ষেত্রে আমাদের আরো জোরালো ভুমিকা থাকা দরকার।

রোহিঙ্গা সমস্যা আজকের বিষয় না ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় এই ব্যাপার হাজার বছরের পুরানো। সময়ের পরিবর্তন ঘটেছে ঠিক কিন্তু তাদের ভাগ্য বা অবস্থার কোন পরিবর্তন হয়নি বিগত কয়েক’শো বছরেও। আর নিয়তি তাদের বানিয়ে দিয়েছে আজ রোহিঙ্গা রিফিউজি। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অমানবিক নির্যাতনের শিকার তারা। এই পরিস্থিতিতে তাদের কাছে বাংলাদেশের থেকে ভালো বন্ধু আর কেউ নেই। বিবেক ও মানবিকতার প্রশ্নে তাদের অশ্রয় দিতে আমরা বাধ্য কিন্তু এই বিপদগ্রস্থ জাতি গোষ্ঠী কক্সবাজারের জন্য বিপদের কারণ হতে পারে। রোহিঙ্গা সমস্যার কারণে কক্সবাজারে ভ্রমণপিপাসু মানুষের সংখ্যা কমে গেছে কয়েকগুন এমন দাবী কক্সবাজার পর্যটন ব্যবসায়ীদের। গেল কুরবানীর ঈদ ও পূজার ছুটি থাকা সত্ত্বেও পর্যটন নগরীতে পর্যটক আগের তুলনায় কম।

যেখানে রোজার ঈদের ছুটিতে তিন লাখের অধিক পর্যটকের আনাগোনাতে মেতে উঠেছিল পর্যটন নগরী কক্সবাজার। রোহিঙ্গা ইস্যুকে কেন্দ্র করে থমথমে অবস্থা বিরাজমান থাকায় পর্যটকদের সংখ্যা কমে গেছে বলে দাবি করছেন স্থানীয় পর্যটন অংশীদাররাও। পর্যটনের উন্নয়নের খাতিরে অনন্তত কক্সবাজার শহরটি রোহিঙ্গা মুক্ত করতে সংশ্লিষ্টদের আরো গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নিতে হবে। তাছাড়া তাদের দিয়ে এখানে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে এখানকার পর্যটনে বড় ধরনের সমস্যা করতে পারে। যেটা কক্সবাজারের উন্নয়নের বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে।

লেখক- আব্দুল আলীম নোবেল, সাংবাদিক ও সমন্বয়ক পরিকল্পিত কক্সবাজার আন্দোলন