– মাহবুব মোর্শেদ বিন খালেদ 
রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প গুলোতে বিরাজ করছে চরম অস্বস্থি ও অনিশ্চয়তার দোলাচাল। লক্ষ লক্ষ উদ্বাস্তুর বড়ো অংশ এখনো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে যত্রতত্র বিক্ষিপ্ত। বৃষ্টি ভরা আবহাওয়া দুর্ভোগ বাড়িয়ে দিয়েছে।পাল্লা দিয়ে বাড়ছে রোগ-শোক। ঝুপড়িতে-ঝুপড়িতে ব্যথা-বেদনার আর্তস্বর গুমরে-গুমরে কাঁদছে। শিশুদের অবুঝ আহাজারি কিংবা পাণ্ডর চোখের পাশে অপলক বসে আছেন উদ্বেগের পথশ্রান্ত জগজ্জননী। একটি মানবিক বিপর্যয় এড়াতে যথাযথ ও কার্যকর পদক্ষেপ নেবার একনই সময়।
হাজার হাজার নির্যাতিতা নীরব যন্ত্রণায় সয়ে যাচ্ছেন কঠিন পরিস্থিতি। বর্মী সামরিক ধর্ষণের নির্মমতায় লাঞ্ছিত এসব নারীর অনেকেই ইতোমধ্যে ইনফেকশন বা পচনধরায় অাক্রান্ত। বাকীরাও কোন রকম চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত। নিজেদের সমস্যা কাউকে লজ্জা/শরমে খুলে বলতেও পারছেন না। ফলে এদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি দিন দিন বাড়ছে। তাদের চিকিৎসা দেয়ার জন্যে মহিলা ডাক্তার, নার্স ও মেডিকেল ছাত্রীদের সমন্বয়ে অধিক সংখ্যক টিম এখনই সক্রিয়া করা আবশ্যক।
হাজার হাজার শিশু ও বৃদ্ধ সর্দি, জ্বর, কাশি, হাপানি, গ্যাস্ট্রিক, পেটের পীড়া, ছোট-মাঝারি আঘাতের ক্ষত ইত্যাদি রোগে জর্জরিত। এদের জন্যে এবং অন্যান্য
চিকিৎসার জন্যেও বিশেষ ব্যবস্থা থাকা একান্ত দরকার। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকের নেতৃত্বে শিক্ষার্থী, নার্স ও স্বেচ্ছাসেবীদের নিয়োগ করা যেতে পারে। দেশের ঔষধ কোম্পানী গুলোকে ঔষুধ সরবরাহের ভার দেয়া যেতে পারে।শরণার্থীদের জন্যে মশারী, তাঁবু, হাঁড়ি-পাতিল, বাসন-কোসন, পোশাকের মধ্যে লুঙ্গি-থামি ইত্যাদিকে ত্রাণ হিসেবে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
আর সেই সাথে জেগে ওঠো বাংলাদেশ। ভারত ও চায়নার সাথে বোঝাপড়া আরও খোলাসা করো হে স্বদেশ। বিশ্ব সমাজে তুমি আরও তৎপর হও। নিজেকে হীন জ্ঞান করো না প্রিয়। এভাবে চলতে পারে না যুগ যুগান্তর। অউন সাং এর ঘনিষ্ট বন্ধু ও বর্মার স্বাধীনতা সংগ্রামের শীর্ষ নেতা এম এ রশিদ ও আবদুল রাজ্জাকের উত্তরসূরী আজকের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। কিন্তু তাঁরা নিজদেশে পরবাসী। জাতিশুদ্ধ নির্মুল’র (এথনিক ক্লিনজিং) ধারাবাহিক বর্বর আক্রমণের শিকার হয়ে তাঁদের জীবন বিপন্ন প্রায়। এমন প্রেক্ষাপটে বরাবর পালিয়ে আত্মরক্ষার্থে রোহিঙ্গাদের এক বড় অংশ বাংলাদেশে চলে আসেন। মানবিক কারণে আমরা তাঁদের বারবার ঠাঁই দিয়েছি বৈকি। কিন্তু হে মাতৃভূমি, এভাবে চলতে পারে না। এটা হয় না। মানবতার বিরুদ্ধে বর্মী সামরিক বাহিনী যে ক্ষমাহীন অপরাধ করে চলেছে, তা তুমি ব্যাপক প্রচার করো। 13-15 লাখ মানুষ এরই মধ্যে নিহত, যাদের সংখ্যাগরিষ্ট অংশই যুবক। তুমি বিশ্ববাসীকে এটা ঠিক ভাবে জানাও। দুনিয়ায় শুভবোধ আর শুভ বুদ্ধি এখানো হারিয়ে যায়নি। দেশে-দেশে শত কোটি সাধারণ মানুষের বুকে-মস্তিষ্কে যে বিবেক জেগে আছে, তুমি তার কাছে যাও। জাগো। হে স্বদেশ জাগো।

7 আশ্বিন 1424, 22 সেপ্টেম্বর 2017
কক্সবাজার।