ইমাম খাইর, সিবিএন:
জাতিগত সহিংসতার শিকার হয়ে পালিয়ে আসা লোকদের রোহিঙ্গা বলতে নিষেধ করেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, ওরা রোহিঙ্গা নয়। কোন অবস্থাতেই তাদের রোহিঙ্গা বলা যাবেনা। ওদের বলতে হবে ‘মিয়ানমার ন্যাশনাল’ তথা মিয়ানমারের নাগরিক। ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি ডিলিট করে দিন।
রবিবার সন্ধ্যায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে ওবায়দুল কাদের এ নির্দেশ দেন।
সেতুমন্ত্রী বলেন, গত ২/৩ দিন ধরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ঘুরেছি। খুব খারাপ অবস্থা। চারিদিকে এক প্রকার অমানবিক দৃশ্য। খুব কষ্ট করে দিন কাটাচ্ছে রোহিঙ্গারা। সড়কগুলোর বেহাল অবস্থা।
তিনি বলেন, যাকে দিয়ে যে কাজ দ্রুত হবে, তাকে দিয়ে সেকাজ সম্পন্ন করতে হবে। কোন অবহেলা সহ্য করা হবেনা। মানুষকে কষ্ট দেয়া যাবেনা। কে বড় আর কে ছোট না দেখে সবাই ভাগাভাগি করে দ্রুত প্রয়োজনীয় কাজ সেরে ফেলুন।
এ সময় তিনি জনবল ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম বিবেচনায় সেনা বাহিনীকে দিয়ে কাজ সম্পন্ন করার মত দেন।
এ সময় তথ্য মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম, সেনা ক্যাম্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত কমান্ডার মেজর মুহাম্মদ রাশেদ আকতার এস.পি, সাইমুম সরওয়ার কমল এমপি, আবদুর রহমান বদি এমপি, জেলা প্রশাসক মোঃ আলী হোসেন, পুলিশ সুপার ডঃ একেএম ইকবাল হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল মোস্তফা, জেলা জাসদের সভাপতি নঈমুল হক চৌধুরী টুটুলসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, গত ২৪ আগষ্ট রাতে মিয়ানমারের কয়েকটি সেনা ও পুলিশের চৌকিতে রোহিঙ্গা জঙ্গি হামলার অভিযোগে আরাকান রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন শুরু করে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। হত্যা, ধর্ষণের পাশাপাশি গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় বর্তমানে সাড়ে চার লাখের বেশী রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। তারা কুতুপালং, বালুখালীসহ বিভিন্ন এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে। এসব রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। ঘটে হতাহতের ঘটনা। এসব প্রেক্ষিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে শুরু সামাজিক সংগঠনগুলো সেনা বাহিনীর হাতে দায়িত্ব দেয়ার আহবান জানায়।
রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সেনাবাহিনীর দীর্ঘদিন ধরে চলমান সংঘর্ষ-সহিংসতা সঙ্কট সমাধানে ২০১৬ সালের আগস্টে গঠিত হয় অ্যাডভাইজরি কমিশন অন রাখাইন স্টেট। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে ওই কমিশন এক বছরের তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের প্রধান অংসান সুচির কাছে জমা দেয় চলতি বছরের ২৪ আগস্ট।
৬৩ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদন জমা দেয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই ২৪ আগস্ট দিবাগত রাতে ত্রিশটি পুলিশ ও সেনাচৌকিতে রহস্যজনক হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় নিহত হয় নিরাপত্তা বাহিনীর ১২ সদস্য। তারপরই হামলার জন্য রোহিঙ্গা ‘জঙ্গি’দের দায়ী করে জবাব হিসেবে সেনাবাহিনী পুরো অঞ্চলে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে।
সেনাবাহিনীর ওই হামলায় এখনও পর্যন্ত ৫শ’র বেশি মানুষ মারা গেছে, আর প্রাণভয়ে রোহিঙ্গারা সীমান্ত পেরিয়ে পাড়ি জমাচ্ছে বাংলাদেশে। নৌপথে পালিয়ে আসার পথে নৌকাডুবিতেও বাড়ছে মৃতের সংখ্যা।
এই শরণার্থীদের ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বার বার আহ্বান জানানো হলেও মিয়ানমার তাতে সাড়া দেয়নি। রোহিঙ্গাদের নিজেদের নাগরিক হিসেবে মেনে নিতেও তারা রাজি নয়।
রোহিঙ্গাদের এই স্রোত ঠেকাতে মিয়ানমারে জাতিসংঘের মতো কোনো একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার তত্ত্বাবধানে একাধিক নিরাপদ এলাকা (সেইফ জোন) গড়ে তোলার প্রস্তাব দিয়ে রেখেছে বাংলাদেশ। এছাড়া সীমান্তে যৌথ টহলেরও প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। কিন্তু কোনো প্রস্তাবেই মিয়ানমারের সাড়া মেলেনি। উল্টো তাদের অভিযান সঠিক বলে দাবী করে বিবৃতি দিয়েছে। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়ন না করার উদ্দেশ্যেই মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এই হত্যাকা- শুরু করে।