মঈনুল হাসান পলাশ ॥
বাঙ্গালী অত্যন্ত হুজুগে জাতি। পুরো দেশ এখন রোহিঙ্গা হুজুগে মেতেছে। এরা আমার দেশের কেউ না। কোনোদিন কেউ ছিলো না। এদেশের কোনো উপকারেও এরা আসবে না। অথচ, সরকার-প্রশাসন-রাজনীতি সব ব্যস্ত এখন রোহিঙ্গা নিয়ে। দেশ উচ্ছন্নে যাক, আগে রোহিঙ্গাদের নিয়ে চিন্তা। আপনি একটু খোলা মনে, বিশ্বাস অর্জন করে যে কোনো রোহিঙ্গাকে জিগেস করুন,দেশে ফিরে যাবেন?
উত্তর একটাই,মরলে বাংলাদেশে মরবো,তবু বার্মা ফিরে যাবো না।
এদেশের অনেক অতিজ্ঞানী নব্য বুদ্ধিজীবি স্বরচিত গবেষণা করে রোজ বের করছেন,একটা কূটনৈতিক সমাধান হবে। রোহিঙ্গাদের ফেরত নিয়ে যাবে মায়ানমার।
আচ্ছা? আরাকান থেকে রোহিঙ্গা খেদিয়ে মুক্ত করার নীল নকশাঁ কি ২৫আগস্ট রাতেই রচনা করেছে মায়ানমার জান্তা? রোহিঙ্গামুক্ত বার্মা কি সম্পূর্ণ পূর্ব পরিকল্পিত নয়? তাহলে, রোহিঙ্গারা যাতে আর ফেরত আসতে না পারে,তার জন্যেও সকল প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে মায়ানমার!
আর আপনারা যতোই গল্প রচনা করুন,রোহিঙ্গারাই ভালো জানে,তাদের আর ফেরত নেবে না। তারাও যাবে না।
তাই তাদের কথা একটাই-“ মরলে বাংলাদেশে মরবো,তবু বার্মা ফিরে যাবো না”
অতএব,সব রোহিঙ্গা এবং তাদের প্রজন্মের পর প্রজন্ম বাংলাদেশের স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে যাবে। অবধারিত সত্য।
শুরুতেই বলেছি,আমরা হুজুগে জাত। তাদের উপর মায়ানমার কর্র্তৃপক্ষের বর্বর নির্যাতনে আমরা গভীর বেদনায় আক্রান্ত। এবং তাদের জন্য সহানুভূতির সর্বোচ্চ প্রদর্শন করছি আমরা। নিজে না খেয়ে খাওয়ানোর চেষ্টাও করছি কেউ কেউ।
কিন্তু,একটা সময় তো এই আবেগ ফিঁকে হয়ে আসবে। মায়ানমারে রোহিঙ্গা নির্যাতন পর্ব শেষ হয়ে এসেছে। অতএব,নির্যাতন কেন্দ্রিক “আহারে-উহুরে”আস্তে আস্তে কমতে থাকবে। বড়জোড় পরবর্তী মাস ছয়েক চলবে এইসব। তারপর হুজুগ শেষ হয়ে যাবে।
কিন্তু রয়ে যাবে,দশ লাখ রোহিঙ্গা।
একটু ভেবেছেন? আপনার ভিক্ষা দেয়া শেষ হবার পরে কি হবে দশলাখ রোহিঙ্গার জীবিকা?
আগামী এক দশকে যখন বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে বিশ লাখে দাঁড়াবে,তখন তাদের কোথায় জায়গা দেবেন? তাদের জীবিকা অর্জনের জন্য কি কাজ দেবেন? আপনার নিজের ভাইবোন-আত্মীয়স্বজনের কর্মসংস্থান করার সামর্থ্যই আপনার নেই। রোহিঙ্গাদের কি কর্মসংস্থান করবেন? আপনি মানবতাবোধ দেখিয়ে,রোহিঙ্গাদের কর্মসংস্থানের একটা উপায় অবশ্য শিখাচ্ছেন-ভিক্ষা করা! দেশী-বিদেশী ভিক্ষা,সরকারী-বেসরকারী ভিক্ষায় জীবিকার সংস্থান হবে ১০থেকে ২০ লাখ রোহিঙ্গার, তাই না?
ভাবলে খুব কষ্ট লাগে, আমার দেশের গরীব কৃষক অমানুষিক পরিশ্রম করে যে ফসল ফলাবে,সেই ফসল দিয়েই শত শত বছর ধরে লাখ থেকে এক সময় কোটিতে রুপান্তর হওয়া অশিক্ষিত, অকর্মণ্য, পরগাছা রোহিঙ্গাদেরকে খাওয়াতে হবে। যারা আমার বোঝাই শুধু না, জঙ্গি তৎপরতার জন্য আগামীর আশংকাও বটে।
যারা রোহিঙ্গাদের স্বাধীকারের বড় বড় কথা বলেন,তারা ভুলে যান ফিলিস্তিনের কথা, কাশ্মিরের কথা। সেখানে দশকের পর দশক দখল লড়াই করছে স্বাধীনতাকামীরা। তারা অন্যদেশে আশ্রয় নিয়ে বলছে না-“মরলে এইদেশে মরবো,তবু নিজের দেশে ফিরে যাবো না”।
এই চিন্তাগত পরনির্ভরতা আর দৈন্যতা নিয়ে আমার দেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা যে কতো ভয়ানক বিপর্যয় তৈরী করতে যাচ্ছে তা বুঝবার ক্ষমতা নেই কথিত নব্য মানবতাবাদীদের।

মঈনুল হাসান পলাশ, সম্পাদক-দৈনিক সমুদ্র কণ্ঠ।

আমিও তাদের মতো রোহিঙ্গাদের জন্য “আহারে-উহুরে” করতাম, হাউমাউ করে কান্না করতাম! যদি রোহিঙ্গারা ছয় মাস পর কিংবা এক বছর পর কিংবা দু’বছর পরে এইদেশ ছেড়ে চলে যেতো। কিন্তু তারা কেউই যাবে না। কখনোই না। তাদের জন্য কান্নাকাটির বদলে,আমাদের নিজেদের জন্য দুঃশ্চিন্তা হচ্ছে।
আজ রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে নেতিবাচক চিন্তার জন্য, যারা আমার মতো লোকদের গালাগাল করছেন, আপনাদের সাথে পার্থক্য একটা জায়গায়। আমি এবং আমরা নিশ্চিত একটা বিপর্যয় দেখতে পাচ্ছি। আপনারা চোখে ঠুলি দিয়ে রেখে, শুধু “আহারে-উহুরে” করছেন।
এরপর কি হবে?- এই প্রশ্নের জবাব আপনাদেরও জানা নেই।