হয়তো একসময় এন.আই.ডি ছাড়া মৃত দেহ দাফনও করা যাবেনা!
এম.আর মাহমুদ,:
কক্সবাজারের বাসিন্দাদের বিপদ যেন পিছু ছাড়ছেনা। মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের কারণে কক্সবাজারবাসী পদে পদে বিপদ আপদ ও মছিবতের সম্মুখিন হচ্ছে। গত ২৫ আগষ্ট থেকে পুণরায় মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী ও উগ্র বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের নির্মম নির্যাতনে ইতিমধ্যে প্রায় ৪ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা উখিয়া, টেকনাফ ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সিমান্তবর্তী এলাকায় উদ্বাস্ত হিসেবে মানবেতর জীবন যাপন করছে। এ পরিমাণ রোহিঙ্গা যেন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সে লক্ষ্যে সরকার মহা সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে পরীক্ষণ ফাঁড়ি বসিয়ে যানবাহনে তল্লাসি চালাচ্ছে। এসময় রোহিঙ্গা পরিবারের সদস্যদের সন্ধান পেলে পুণরায় সরকার নির্ধারিত ক্যাম্পে নিয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় ঘোষণা দিযেছে রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত বন্ধ করতে যাত্রীদেরকে বাস কাউন্টার থেকে টিকিট কাটার সময় জাতীয় পরিচয় পত্র প্রদর্শন বাধ্যতামুলক করেছে। এতে প্রতিনিয়ত অসংখ্যা মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। জাতীয় পরিচয় পত্র ছাড়া বর্তমানে কোন কিছুই করার সুযোগ নেই। সবক্ষেত্রে পরিচয় পত্র একটি প্রয়োজনীয় দলিল হয়ে দাড়িয়েছে। বিশেষ করে বিয়ে-সাদী, জমি বেছা-বিক্রি, ব্যাংকের হিসাব খোলাসহ সব ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করতে হচ্ছে। ভিটা-বাড়ীর দলিল, খতিয়ান না থাকলেও চলবে। ভুমিহীন হিসেবে ইউনিয়ন পরিষদের সনদপত্র নিয়ে কাজ সম্পাদন করা যাবে। তবে জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া চলা যাবেনা। একেক সময় একেক ধরণের ফরমান। সাধারণ পাবলিক মহা বিপদে। যা বলাও যায়না, হজম করাও যায়না। নির্বাচন কমিশন ওয়ান ইলেভেনের সময় তড়িঘড়ি করে সারাদেশে ভোটার তালিকা প্রণয়ন করেছে। সে মোতাবেক জাতীয় পরিচয়পত্রও সরবরাহ করেছে। সরবরাহ করা পরিচয়পত্রে অসংখ্য ভুলও রয়েছে। জন্ম তারিখ, নাম, পিতা-মাতার নাম ভুল থাকলেও সংশোধন করতে গিয়ে পদে পদে নেকানি চুকানি খেতে হচ্ছে। এ সমস্যায় ভুক্তভোগি ছাড়া কারো পক্ষে মন্তব্য করা বড়ই কষ্টকর। এছাড়া দেশের লাখ লাখ ভোটার এখনো জাতীয় পরিচয়পত্র পায়নি। কবে পাবে এমন নিশ্চয়তাও নির্বাচন কমিশন দিতে পারছেনা। এসব দিক বিবেচনা না করে শুধুমাত্র জাতীয় পরিচয় পত্র সর্বক্ষেত্রে বাধ্যতামুলক করেছে সরকার। হয়তো ক’দিন পর রাষ্ট্রীয় ভাবে মৃত্যু ব্যক্তির দাফন ও সৎকারের ক্ষেত্রেও জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদর্শন বাধ্যতামুলক করতে পারে। তবে শতভাগ জন্ম নিবন্ধন হলেও সেক্ষেত্রেও রয়েছে জন্ম তারিখ ও নাম, পিতা-মাতার ক্ষেত্রে গড়মিল। যা সংশোধন করতেও নানা ভোগান্তি। ইউনিয়ন পরিষদের সচিবদের মতে বর্তমানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সুপারিশ সহকারে জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের জন্য জাতীয় নিবন্ধন বিভাগে পাঠালেও সেখান থেকে নানা অজুহাতে ফিরিয়ে দিচ্ছে। আবার নগদ নারায়ণ দিলে এসব ভোগান্তি পোহাতে হয়না। জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের ক্ষেত্রে জুড়িশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে হলফ নামা, জাতীয় পত্রিকায় হলফ নামা বিজ্ঞাপন ছাপানো ও নির্বাচন কমিশনের নির্ধারিত ফি ব্যংকে জমা দিয়ে সংশোধন করতে হচ্ছে। এ যেন এক বিশাল কর্মযজ্ঞ। গ্রামের সাধারণ মানুষের পক্ষে এসব করা কতই যে জটিল তা ভোক্তভোগি ছাড়া কারো পক্ষে বর্ণনা করা যাবেনা। জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্ম নিবন্ধন প্রসঙ্গে বেরসিক এক ব্যক্তি সুন্দর একটি গল্পের অবতারনা করেছে- “এক নব বিবাহিত দম্পতি হানিমুন করতে গিয়েছিল কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে। সন্ধ্যার দিকে নব দম্পত্তি পড়ে পুলিশের খপ্পরে, এসময় পুলিশ নব দম্পতির কাছে বলল- তোমরা অনৈতিক কাজে লিপ্ত। তোমাদেরকে থানায় যেতে হবে। তখন নব বিবাহিত যুবক পুলিশকে বলল- উনি আমার স্ত্রী, আমরা সবে মাত্র বিয়ে করেছি। ভ্রমণ করতে এসেছি কক্সবাজারে। এসময় পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলে বসল- ঠিক আছে মেনে নিলাম তোমাদের কথা। কামিন নামার কপি দেখাতে হবে। নব দম্পতি হতাশ হয়ে বলল বিয়ে করেছি ৭ দিন হয়নি, কামিন নামা দেখাবো কোত্থেকে। কথা না বাড়িয়ে শেষ পর্যন্ত নব দম্পত্তি সামাজিক মর্যাদা রক্ষায় পুলিশকে ম্যানেজ করে রক্ষা পায়”। জাতীয় পরিচয়পত্র বাধ্যতামুলক করায় অনেকটা এ ধরণের পরিস্থিতির সৃষ্টি যে হবেনা, কোন দায়িত্বশীল ব্যক্তির পক্ষে হলফ করে বলাও যাবেনা। আইন মানুষের কল্যাণে করা হচ্ছে। দেশে বেশুমার মানুষ ভুমিহীন। বন জঙ্গল, নদীর পাড় ও সরকারী খাস খতিয়ান ভুক্ত জমিতে বসবাস করছে। তারা ভোটার হতে নানা প্রতিকুলতার সম্মুখিন হচ্ছে। ভোটার হতে গিয়ে বিদ্যুৎবিল দেখাতে বলছে। এখনো দেশের গ্রামের পর গ্রাম বিদ্যুৎ বিহীন। যাদের জমির খতিয়ান নেই তারা বিদ্যুৎ বিল দেখাবে কোত্থেকে। এছাড়া ভোটার হতে গিয়ে বাবা-মা, ভাই-বোন, চাচা-ফুফুর জাতীয় পরিচয় পত্রের ছায়াকপি সাথে দিতে হচ্ছে। যাদের এসব নিকটাত্মীয় নেই তাদের কি হবে? স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সদয় হয়ে এসব আত্মীয় স্বজন না থাকার পক্ষে সনদপত্র দিয়ে ভোটার হওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে। কি আজব দেশ যেন “ঠক বাঁছতে গাঁ উজাড়ের মত” পরিস্থিতি হচ্ছে প্রতিনিয়ত। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নজরে আনা অতিব জরুরী। কক্সবাজারের ৮ উপজেলার প্রকৃত বাসিন্দারা ইচ্ছে করে এখানে জন্ম গ্রহণ করেনি। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র এখতিয়ার সৃষ্টি কর্তার। আমরা কক্সবাজারে জন্ম গ্রহণ করে অপরাধ করিনি। আর বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী দেশ মিয়ানমার হওয়ায় মিয়ানমারের শাসক গোষ্ঠি বারবার নির্যাতন করে রোহিঙ্গাদের আমাদের দেশে পাঠাবে, আমরা মানবিক কারণে তাদেরকে আশ্রয় দিতে গিয়ে বিপদের সম্মুখিন হব কেন?
তাং- ২৮.০৯.২০১৭
কক্সবাজার বাসীর বিপদ যেন পিছু ছাড়ছেনা
পড়া যাবে: [rt_reading_time] মিনিটে
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।