এম.আর মাহমুদ :

মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গারা কি পুণরায় নিজ দেশে ফিরতে পারবে। প্রশ্নটি জটিল। তবে কদিন আগে মিয়ানমারের একজন মন্ত্রী ঢাকায় এসে পররাষ্ট্র মন্ত্রী এ.এইচ মোহাম্মদ আলীর সাথে বৈঠক করে আশ্বাস দিয়েছেন- আরকান থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের যাচাই-বাছাই করে ফিরিয়ে নেবে। তবে কবে ফিরিয়ে নেবে দিনক্ষণ ঠিক করা হয়নি। মিয়ানমারের মন্ত্রী বাংলাদেশে এসে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার ঘোষনায় কুটনৈতিক বিজয় হিসেবে দেখছে সরকারের দায়িত্বশীল মন্ত্রীরা। দুঃখজনক হলেও সত্য মিয়ানমারের মন্ত্রী ঢাকায় এসে বৈঠক করলেও তাদের দেশ থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাাদের করুন অবস্থা দেখার জন্য টেকনাফ ও উখিয়া যেতে রাজি হয়নি। এতে মনে হয় মিয়ানমারের শাসক গোষ্ঠি আরকান থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার নামে কৌশলে কালক্ষেপন করছে। কারণ উই মন্ত্রীর আশ্বাসের পরও রোহিঙ্গা বিতাড়ন জ্বালাও পোড়াও, লুঠপাট, ধর্ষণ, হত্যা বন্ধ হয়নি। প্রতিদিন নতুন নতুন রোহিঙ্গারা টেকনাফের শাহ্পরির দ্বীপ হয়ে অনুপ্রবেশ করছে। মুলত মিয়ানমারের শাসক গোষ্ঠি আরকান থেকে রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করার যে টার্গেট নির্ধারণ করেছে সে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত মিয়ানমারের সেনাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। ইতিমধ্যে তারা জনমানব শূণ্য আরকানে মুসলমান শূণ্য এলাকা হিসেবে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দিচ্ছে। প্রসঙ্গক্রমে একটি গল্প অবতারনা না করলে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা বিতাড়নের আসল রহস্যের, রহস্যই থেকে যাবে। অপরাধ জগতের আলোচিত এক ব্যক্তির নাম মকিম গাজী। তার চরিত্রে এমন কোন দোষ ছিলনা, যা সে করতে পারতনা। প্রতিনিয়তই রাত কাটাত পতিতালয়ে। মাতাল অবস্থায় পতিতালয়ে গিয়ে পতিতাকে বলত আমি তোমাকে বিয়ে করব। এভাবে দিন যায়, মাস যায়, বছর যায়, কিন্তু মকিম গাজী কোন পতিতাকে বিয়ে করেনা। এক সময় বেশ ক’জন পতিতা মিলে তাকে বলল, তুমি বিয়ের কথা বলে প্রতিদিন আস, আর যাও; কিন্তু বিয়ে করনা। তুমি যে বিয়ে করবে তার বিশ্বাস জমানোর জন্য হাতের একটি আংটি উপহার হিসেবে দিয়ে যাও। তখন আমরা বিশ্বাস করব তুমি আমাদের কাউকে বিয়ে করব। এসময় মকিম গাজী জবাব দিল- “মন দিয়ে তো বসে আছি, আংটি দিয়ে লাভটা কি?”। ইতিপূর্বেও রোহিঙ্গারা এদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে, ক’জন ফিরে গিয়েছে? মিয়ানমারের শাসক গোষ্ঠির অবস্থা দেখে মনে হয় তারা মকিম গাজীর সুত্রের বিশ্বাসী। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য অংসান সুচি অনেক আন্দোলন করেছে, দীর্ঘকাল নিজ গৃহে আবদ্ধ অবস্থায় কাটিয়েছে। সারা বিশ্বের আকুতি মিয়ানমারের স্বৈরশাসকেরা শুনেনি। পরে অংসান সুচি শান্তির জন্য নোবেল পদক পেয়েছে। বর্তমানে তিনি মিয়ানমার সরকারের প্রধান উপদেষ্ঠা হয়ে বড়ই শান্তিতে আছেন। তবে তার দেশের সংখ্যালঘু মুসলমানেরা হত্য, ধর্ষণ, লুঠপাট, বসত বাড়ীতে অগ্নিসংযোগ করে দেশ থেকে বিতাড়িত করে কি অশান্তিতে আছে তাকি অংশান সুচি কি উপলব্ধি করতে পারছে। আগের হিসাব না করলেও গত ২৫ আগষ্ট থেকে আজ পর্যন্ত সাড়ে ৫ লাখ রোহিঙ্গা ছড়িয়ে ছিটিয়ে উখিয়া, টেকনাফ ও নাইক্ষ্যংছড়ির সিমান্ত এলাকায় মানবেতর জীবন যাপন করছে। এ পরিমাণ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠি সরকারী, বেসরকারী ও বিভিন্ন রাষ্ট্রের ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে বেচে আছে। রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফেরার আশায় থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা হবে গুড়েবালি। মিয়ানমারের আরকান রাজ্যের উপর পড়েছে শকুনের বদ্ নজর। যে কারণে এ রাজ্যের সংখ্যালঘুরা মরা গরুতে পরিণত হয়েছে। চিন, রাশিয়া ও ভারত এর কারণে মিয়ানমার এখন বেসামাল। তারা কারো কথা কর্ণপাত করছেনা। কথায় আছে ছাগল নাছে খুটির জোরে। লক্ষনীয় ব্যাপার হচ্ছে রোহিঙ্গাদের আরকান থেকে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করতে সমর্থনও করছে, ত্রাণও পাঠাচ্ছে। এ যেন গরু মেরে জোতা দানের মত। বর্তমানে রোহিঙ্গারা অনেকটা রাষ্ট্রহীন নাগরিক। সরকারের সেতুমন্ত্রী ও দলেল সাধারণ সম্পাদক ওবাইদুল কাদের সাহেব বিলম্ব হলেও রাশিয়া এবং চিনের ভুমিকায় অনেকটা হতাশ হয়েছে। বিষয়টি আগেই বুঝা উচিত ছিল “লাল কুত্তা, শিয়ালের ভাই”। কবি সুকান্ত, তার কবিতায় যতার্থই বলেছেন “ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়, পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানু রুটি” কবি ক্ষুধার রাজ্যের কথা বর্ণনা করেছেন ঠিকই, তবে ভরা পেটে পৃথিবীর অবস্থা কেমন তা বর্ণনা করেনি। আরকানের ফকিরাবাজার থেকে আসা ছকিনা বেগম তার কথায় জানাগেছে স্বামী ও দুই ছেলেকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী নির্মম ভাবে হত্যা করেছে। তিন অবুঝ সন্তানকে নিয়ে এদেশে পালিয়ে এসেছে, বর্তমানে কুতু পালং ১নং শিবিরে অবস্থান করছে। তাদের পরিবারটি ছিল সংগতিসম্পন্ন বর্তমানে ত্রাণ নির্ভর। ক্ষুধার্থ তিন শিশু মাকে বলছিল ভাত দাও, মা বলছে একটু অপেক্ষা কর। অংসান সুচি শান্তিতে নোবেল পেয়েছে সেই নোবেল রান্না করে আমি তোদের খায়াবো।